#৬৬

410 16 1
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৬৬

রাতের খাবার শেষে পায়েসের পিরিচ হাতে সারজিম এসে বসলো ড্রয়িংরুমে। খানিকক্ষণ টেলিভিশন দেখে একটি সিগারেট টেনে শুতে যাবে সে। এর মাঝে বহ্নি ঘুমোবে না। বাবার জন্য জেগে থাকবে। গোলগোল চোখজোড়া আরও বড়বড় করে তাকিয়ে থাকবে ফ্যানের দিকে। মেয়েটি দিনে দিনে যত বড় হচ্ছে ততই তার করা কার্যক্রমগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ছে সারজিম। অদৃশ্য এক সুতোর মায়াটানে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলছে এক গন্ডির মাঝে। তবে তার তো গন্ডির মাঝে থাকলে চলবে না। দ্যুতি তার সম্পত্তি, দ্যুতি তার চাহিদা, দ্যুতি তার জিদ। সেই দ্যুতি দ্বিতীয় এক পুরুষের সাথে হেসেখেলে সুখে সংসার করবে? না.. দ্যুতি তার সঙ্গে বাস করবে, তার সঙ্গে সংসার করবে নয়তো আর দশজনের ভোগের বস্তু হবে। না, এটি তার জিদ নয়। এটি তার অধিকার। দ্যুতির প্রতি তার অধিকার.. দাঁতের নিচে মশলা পড়তেই মুখ কুঁচকে ফেললো সারজিম। ভাবনার গতিপথ থামিয়ে পিরিচ মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে একটি সিগারেট ধরালো সে।

সিগারেট শরীরের জন্য ক্ষতিকারক জেনেও সে যেভাবে তা বছরের পর বছর ধরে সেবন করে আসছে, দ্যুতিও ঠিক সেভাবেই তার আত্মার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে থাকলেও দ্যুতি তার জন্য ক্ষতিকর। তার আশেপাশে ঘোরাও তার জন্য ক্ষতিকর। তবুও সে ঘুরবে.. একবার নয়। হাজারবার লক্ষবার!

নাকমুখ দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে এশট্রেতে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ ফেলে উঠে পড়লো সারজিম। ওয়াশরুমে ঢুকে ব্রাশ করে চোখমুখ ধুয়ে এল বিছানায়। হাত-পা ছুড়েছুড়ে খেলায় মনোনিবেশ করা বহ্নির পাশে শুয়ে আদুরে গলায় বললো,
-ওরে আমার আম্মাটা.. বাবা দেরি করে ফেলেছে? খুব দেরি করে ফেলেছে? স্যরি আম্মা.. এই যে বাবা কান ধরেছে।
চোখেমুখে হাসির ঝলক নিয়ে সামিহার দিকে তাকালো সারজিম। বিছানার এক কোণায় বসে বহ্নির কাপড়গুলো ভাঁজ করছে সে। সারাদিনের অজস্র পরিশ্রমের পর তাকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
-বহ্নিকে খাইয়েছো?
সারজিমের প্রশ্নে হ্যাঁ না কোনো জবাব দিল না সামিহা। কাপড়গুলো হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে সে পা বাড়ালো আলমারির দিকে।
-কীরে? কথা কানে যায়না? বয়রা হয়েছো?
ঘাড় ঘুরিয়ে সারজিমের দিকে তাকালো সামিহা। মুখে কঠিন কিছু কথা আসলেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেলে আবারও নিজের কাজে মন দিল সে।
-আমার আম্মাটাকে খাওয়ায়নি? আপনার ক্ষুধা পেয়েছে? এত কষ্ট আমার আম্মাটার? দাঁড়াও, আমিই কিছু আনছি।
বিছানা ছেড়ে উঠার পায়তারা করতেই মুখ খুললো সামিহা। আলমারির পাল্লা বন্ধ করে বিছানার দিকে এগিয়ে এসে বললো,
-খাইয়ে দিয়েছি.. আপনার উঠতে হবে না।
-সেটা আগে বলতে কী হয়েছিল? মুখ দিয়ে কথা বেরোয় না?
-কিছুই হয়েছিল না।
ভাবলেশহীন ভাবে বালিশ ঠিক করে তাতে মাথা রাখলো সামিহা। একনজর বহ্নির দিকে চেয়েই চোখজোড়া বুজলো সে। বহ্নি রাতে তার বাবাকে ছাড়া ঘুমোয় না.. সে প্রায় রাতেই চেষ্টা করে দেখেছে। তবে পুচকি সেই বহ্নির চোখে ঘুম আনতে পারেনি। কে জানে কিভাবে এমন বদঅভ্যাস হলো তার! দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সামিহা নড়েচড়ে শুতেই তার কানে এল সারজিমের সেই নিষ্পাপ গলার স্বর।
-ঘুমোবে? ঘুম পেয়েছে আম্মার? আসেন.. বাবার বুকে আসেন। ওরে আমার আত্মাটা। বাবা আপনাকে কত ভালোবাসে জানেন? জানেন না?
বহ্নির কপালে চুমু দিয়ে তাকে বুকে তুলে নিল সারজিম। মাথায় অজস্র চুমু দিয়ে বললো,
-আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা। আমার আত্মাটার কপালে টিপ দিয়ে যা...
সারজিমের বুকের স্পন্দন শুনতে বহ্নি চুপচাপ পড়ে রইলো তার বুকে। ছোট্ট এই প্রাণটি বাবা অর্থ বোঝে না, জানে না বাবা নামক এই অমানুষটিকে। তবে সে অনুভব করে তার বাবাকে.. অনুভব করে বাবার গায়ের মিষ্টি ঘ্রানকে।

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Onde histórias criam vida. Descubra agora