#৪৯

344 14 0
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৪৯

শীত পড়েছে। কুয়াশা ঘেরা রূপকথার ভেজা বিশাল সাদা চাদরে মুড়িয়ে রয়েছে চারপাশটা। আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে বিন্দু বিন্দু শিশির। যা গাছের পাতাসহ, পায়ের নিচের ঘাসকে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। মুক্ত করে দিচ্ছে সকল গ্লানি থেকে। তবে দ্যুতিকে নিয়ে তার গ্লানি? তা কী এই শিশির বিন্দু ধুয়েমুছে পরিষ্কার করতে পারবে? বুকচিরে একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল ইশতিয়াকের। হাতের ঘড়ির দিকে চোখ বুলিয়ে আবারও ভেজা পথ ধরে সামনে এগুলো তার পা'জোড়া। তিন মাস চলে গেছে। তবে এখনও কোনো খোঁজ মেলেনি দ্যুতির। ধীরেধীরে আরও মাসের পর মাস, বছরের পর বছর গড়িয়ে যাবে। হয়তো সময়ের সাথেসাথেই একসময় হারিয়ে যাবে দ্যুতি নামটিও.. অসম্ভব কিছু? একদম নয়। প্রশাসনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকান্ডে এর চেয়ে ভালো ভাবনা আর তার মাথায় আসে না। না সে নিজে কোনো বাংলা সিনেমার নায়ক, যে তার নায়িকার আর্তনাদ অনুভব করেই তাকে খুঁজে বের করবে ঘন অরণ্যের মাঝ থেকে। এখন তার খুব করে মনে হয়, জীবনটা বাংলা সিনেমা হলে খুব ক্ষতি হতো কি? দ্যুতির নিঁখোজে অন্তত চারপাশটা থেমে যেত.. তবে বাস্তবে তো পৃথিবী থেমে থাকেনি। সব চলছে তার নিজস্ব গতিতে। সে নিজে খাচ্ছেদাচ্ছে, ভার্সিটিতে এসে ক্লাস নিচ্ছে, রাতে ঘুমোতে যাচ্ছে। তার জীবনচক্রে দ্যুতির অনুপস্থিতি কোনো পরিবর্তন এনেছে কী? আনেনি.. তবে কোথাও একটা পরিবর্তন এসেছে! আগে যে ইশতিয়াক রাতভর ভোস-ভোস করে ঘুমিয়ে পাড় করতো এখন তার রাত কাটছে নির্ঘুমে। খেতে বসে খাবার অর্ধেকটা রেখেই উঠে পড়ছে। ক্লাসে যতক্ষণ থাকছে একটি অস্থিরতার মাঝে থাকছে। দমবন্ধ পরিস্থিতিতে চলছে তার জীবন.. দ্যুতি, তার মা.. দুজনকে হারিয়ে তার জীবন থেমে না থাকলেও তার মন থমকে রয়েছে তাদের মাঝেই।
-স্যার, শুনুন। স্যার শুনুন না..
পথ চলতে তাথৈ এর বাধা পেয়ে থেমে দাঁড়ালো ইশতিয়াক। কপাল কুঁচকে বললো,
-বলুন।
-স্যার, আমি আসলে প্রচুর দুঃখিত।
-ঠিকাছে।
ইশতিয়াক পাশ কাটিয়ে যাবার জন্য পা বাড়াতেই তাকে থামিয়ে দিল তাথৈ। অনুরোধের সুরে বললো,
-স্যার.. শুনুন না!
-কী হচ্ছে কী! আপনি দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলুন।
-স্যরি স্যার.. এই যে দূরে দাঁড়ালাম। মাপলে পাঁচ ফুট তো হবেই! কী? হবে না?
-যা বলতে চাইছিলেন তা বলুন।
ম্লান হাসলো তাথৈ। কপালের চুল গুলো একহাত দিয়ে সরিয়ে নিয়ে বললো,
-ম্যাডামের কোনো খবর পেলেন?
-তা জেনে আপনার কী কাজ?
-ওমা! জানবো না? স্যার জানেন লোকে বলে ম্যাডাম নিজের ইচ্ছেতেই নাকি তার প্রাক্তন স্বামীর সাথে চলে গেছে। নয়তো একবার ভাবুন কিডন্যাপ হলে কোনো ফোন কল তো আসতো। কিডন্যাপারের তো কোনো উদ্দেশ্য আছে। তাছাড়া তিনটা মাস চলে গেল! কিডন্যাপার তিনমাস তাকে শুধুশুধু পালবে কেনো? আর ম্যাডামই বা তার কাছে চুপেচাপে থাকবে কেনো?
বিরক্ত হলো ইশতিয়াক।
-যা জানেন না, তা নিয়ে কথা বলবেন না।
-তবে যা জানি না তা আমাকে জানান.. আমি জানতে চাই...
-আপনি বড্ড বাজে বকছেন।
-না না স্যার.. আপনি ভুল বুঝছেন আমায়। আমি কিন্তু আমার মনের কথা বলিনি। লোকে যা বলছে তাই..
তাথৈকে কথা শেষ করার সুযোগ না দিয়ে ইশতিয়াক বললো,
-যাদের কথা তাদের মাঝেই থাকুক। নাকি অন্যদের কাছে ছড়ানোর জন্য আপনাকে টাকা দিয়ে রেখেছে? নয় তো.. তবে কেনো এসব নিয়ে আপনার এত আগ্রহ? পড়াশোনায় মন দিন.. সিজিপিএ দেখলাম তো!
হাতের নখ খোঁচাতে শুরু করলো তাথৈ।
-তেমন কিছু নয়.. ইয়ে মানে আমি বলছিলাম ম্যাডাম যদি আর কখনোই ফিরে না আসে! তবে ফিউচার প্ল্যান.. না মানে তাকে ভেবে নিজের জীবনটা নষ্ট করবেন না প্লিজ।
-মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি দেখছি! তাছাড়া আপনার কেনো মনে হচ্ছে আমি আমার জীবন নষ্ট করছি?
-এই যে কেমন যেনো অদ্ভুত আচারণ করছেন আজকাল! ক্লাসে এসে বারবার পানি খাচ্ছেন.. টাই বারবার ঢিলে করছেন.. শীতের মাঝেও প্রচুর ঘামছেন.. ক্লাসে ঢুকলেই মনে হচ্ছে নার্ভাসনেস কাজ করছে আপনার মাঝে প্রচুর।
চোয়াল শক্ত হয়ে এল ইশতিয়াকের। চোখজোড়া হয়ে উঠলো তীক্ষ্ণ। কঠোর স্বরে সে বললো,
-আপনি আমার কাছ থেকে অন্তত একশহাত দূরে থাকবেন। বুঝেছেন কী বলেছি? নয়তো আমি আপনার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিব।
বড়বড় পা ফেলে ইশতিয়াক এগুলো গেইটের দিকে। আজ তার বড় ফুপু লিলি বেগম আসবেন পাবনা থেকে। নিজের বাড়িতে গিয়ে কোনোভাবেই শান্তি পাচ্ছেন না তিনি। প্রেশার বেড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এমন অবস্থায় গতরাতে তার কাছে ফোন দিয়ে প্রায় আধঘন্টার মতো কান্নাকাটি করেছেন। বারবার বলেছেন দ্যুতির সাথে ডিভোর্স তো তোর হয়েই গেছে। এবার তাহলে মৌমিকে বিয়ে করে নে। মরার আগে এতিম মেয়েটার একটা গতি করে দিয়ে যেতে চাই। সেও একথার প্রেক্ষিতে খানিকক্ষণ চুপচাপ থেকেছে। তারপর বলেছে, ঠিকাছে। চলে এসো তোমরা।

   -চলবে

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Where stories live. Discover now