#৬৪

347 15 1
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৬৪

কেটে যাচ্ছে দিন। কাটছে জীবনের নতুন আরেক অধ্যায়। যে অধ্যায়ে রয়েছে রোজ সকালে উঠে ভার্সিটিতে দৌঁড়ানো, ভার্সিটি শেষে বাড়ি ফিরে দ্যুতির ফরমায়েশ পূরণ। বই পড়ে পড়ে তাকে শোনানো, সন্ধ্যায় একইসাথে বসে কফির মগে চুমুক দেয়া, গভীর রাতে তার পাশে বসে রবীন্দ্রসংগীত শোনা। দ্যুতির মাঝের এই অদ্ভুত পরিবর্তনে অস্থির মনে স্বস্তি ফিরেছে ইশতিয়াকের।

এখন আর রাতে গুনগুনিয়ে কাঁদে না দ্যুতি। সূর্যের আলোর ভয়ে বন্ধ করে রাখেনা ঘরের জানালা। নীরবে বিছানায় বসে করেনা পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণ। বরং পুরো ফ্ল্যাটজুড়ে হেটে বেড়ায় সে। খুব একটা কথা না বললেও ইশতিয়াক বাড়ি ফিরলেই তার কাছে এগিয়ে আসে। ঠোঁটে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে তার পাশে। সেসব দেখে বুকের ভেতরটায় পরম তৃপ্তি অনুভব করে ইশতিয়াক। কর্মব্যস্ত একটি দিনশেষে বিছানায় শরীর মেলে দিলেই সুখে আচ্ছন্ন হয়ে আসে তার দু'চোখ। এ দ্যুতি তো আগের দ্যুতি নয়! নয় রুক্ষ মেজাজের সে দ্যুতি! এ দ্যুতি নতুন দ্যুতি। যে নিজের অন্তরালের প্রভা ছড়াতে ব্যস্ত তার এই ছোট্ট নীড়জুড়ে। এই দ্যুতি মিষ্টি করে হাসতে জানে, লাজুক গলায় বলতে জানে, আপনি আমার হাতটা আজ কেনো ধরলেন না?

দ্যুতির লাজুক চাহনি চোখের পাতায় ভেসে উঠতেই আনমনেই হেসে উঠলো ইশতিয়াক। খানিকক্ষণ আনমনে ভাবনার পর চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিয়ে দ্যুতির খবর জানতে কল করলো মিনা বেগমকে।
-হ্যালো খালা? আপনি কী করছেন?
-বসে আছি.. কেনো বল তো?
-ফ্রি থাকলে একটু দ্যুতিকে গিয়ে দেখে আসলে আমার জন্য সুবিধা হত।
-দেখে আসতে হবে না। আমি দ্যুতির পাশেই আছি।
স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললো ইশতিয়াক।
-কী করছে ও?
-ওর মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছি। নিজের একটুও যত্ন নেয় না মেয়েটা। চুল উষ্কখুষ্ক হয়ে কী একটা হয়ে গেছে! মনে হয় শ্যাওড়া গাছের পেতনী!
হাসলো ইশতিয়াক। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বারান্দার দিকে এগুতে এগুতে বললো,
-তাই লাগে নাকি?
-শুধুশুধু হাসিস না.. তুইও তো কখনো ওকে কিছু বলিস না। কেমন দামড়া ব্যাটা তুই আল্লাহ জানে! কখনো কি বউরে সাজগোজ করে দেখতে মন চায় না? তোর খালু এই বয়সে এসেও আমারে বলে আজ ওই নীল শাড়িটা পরবা! দেখছিস বুড়ার মনের ঢঙ! আর তুই? মনে হয় দুইশ বছরের কোনো বুড়া.. যে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে তার বউকে বলে, তুই ন্যাংটা হয়ে থাক আর বুরকা পিন্দা থাক! আমার শইলে আর রঙ নাইরে জরিনা।
ইশতিয়াকের কান লাল হয়ে উঠলো। লোকজনের উপস্থিতি দেখতে সে একবার চোখ বুলিয়ে নিল চারপাশে।
ওপাশ থেকে হালকা থেমে মিনা বেগম বললেন,
-এখনো তোর ব্যাটাবেটিই হয় নাই তাতেই সব রঙঢঙ কি ফুড়ুৎ দিছে? তুই চাইবি.. ও দিবে। ও বায়না ধরবে.. তুই দিবি। এভাবে দেয়া নেয়ার উপরে থাকলেই না সংসারে চাঞ্চল্য আসবে। তখন দেখবি একজনের সাথে চৌদ্দ বছর কেন চৌদ্দ হাজার বছর থাকলেও একঘেয়েমি লাগবে না। তা না একেকজন মনে হয় দুইশ বছরের বুড়াবুড়ি! একজন অন্যজনের সামনে দাঁড়ালে তাদের আরও লজ্জায় চোখ চোয়ালে নেমে যায়!
-খালা আমি রাখছি। ক্লাসের সময় হয়ে এসেছে।
-এই ইশতি.. আগেই রাখিস না। একটা কথা শোন..
-কী?
-আজ বাড়ি ফেরার সময় তোর এই বুড়ির জন্য কিছু ফুল কিনে আনবি। এই বুড়ি, তোর কী ফুল পছন্দরে?
দ্যুতির জবাব শোনার অপেক্ষা না করেই কল কেটে দিল ইশতিয়াক। এমন অস্বস্তিকর অবস্থায় কিছুদিন হলো প্রায়ই পড়তে হচ্ছে তাকে। তবে যেন-তেন যাই বলুক না কেনো এই খালাকে ছাড়া দ্যুতির মাঝের পরিবর্তন এত দ্রুত আসা সম্ভব ছিল না। সাথে তার অনুপস্থিতিতে দেখাশোনা তো রয়েছেই। যদিওবা সে তাদের বাড়ি ছেড়েছিল দিলরুবা খন্দকারের ভরসায়। তবে হঠাৎ পিছলে পড়ে পা ভাঙার ফলে তার আসার তারিখও পিছিয়ে পড়েছে মাস একের মতো। ছোট্ট একটি শ্বাস ছেড়ে সময় দেখে ফোন পকেটে রাখলো ইশতিয়াক। তারপর পা বাড়ালো দোতালার উদ্দেশ্যে..

ফোন নামিয়ে রেখে দ্যুতিকে ঠোঁট টিপে হাসতে দেখে চোখমুখ কুঁচকে ফেললেন মিনা বেগম। দ্যুতির মাথায় টোকা মেরে তীক্ষ্ণ স্বরে বললেন,
-তুই হাসিস কেন?
-ওমা! কোথায় হাসলাম?
-হেসেছিস.. আমি দেখেছি তুই হেসেছিস! স্বামীকে নিয়ে রঙঢঙের কথা শুনলেই হাসি পায় না? বেলেহাজ মেয়ে একটা।
মিনা বেগমের দিকে ফিরলো দ্যুতি। নাক কুঁচকে আহ্লাদী গলায় বললো,
-তুমি আমায় সবসময় বকো কেনো? আমার এই আঁধমরা শরীর দেখে তোমার মায়া হয়না?
-হয় বলেই তো তোর এই আঁধমরা শরীর তাজা বানানোর চিন্তা করছি। এক ডোজেই তুই উপর তলার ভুটকিটার মতো না হলে তোদের একবছরের বাড়ি ভাড়া মাফ করে দিব। যা..
-এক ডোজেই?
কাঁধ উঁচিয়ে বসলেন মিনা বেগম।
-এসব হাই পাওয়ারের হয়রে। আমার মুখের দুই কথার খেল আর তোর শরীর ভুটকি হওয়া বাকি!
খিলখিল করে হেসে উঠলো দ্যুতি। তবে তাতে পাত্তা না দিয়ে মিনা বেগম বিছানায় শরীর মেলে দিলেন। আরাম করে শুয়ে দ্যুতির দিকে তাকিয়ে উৎসাহী কন্ঠে বললেন,
-তোর খালুর কাজ শোন! কাল রাতে শুয়ে পড়েছি। তারপর পরই রতনের ছেলে বায়না ধরলো আমাদের সাথে ঘুমোবে। তো এসে শুলো আমাদের কাছে.. তো কিছু সময় যেতে না যেতেই আমার আঁচল ধরে টানাটানি শুরু করে দিল তোর খালু। বুড়ার কাজটা দেখছিস? শরম লজ্জা একদম নাই.. তাই দিলাম বসিয়ে বুড়ার যায়গামতো একটা গুঁতো।
-এমা! তারপর?
-তারপর আর কী! রাতে আর আমার ধার ঘেঁষেনি। তা তুই গুতোগুতি করিস তো?
-ছিঃ! না..
চোখমুখ কুঁচকে ফেললো দ্যুতি।
মিনা বেগম বললেন,
-আমারটা শুনে তারপর? আর নিজেরটার বেলায় খুব লজ্জা.. না? এত লজ্জা রাখিস কইরে বুড়ি? গতরের মধ্যে?
-হ্যাঁ.. আমার লজ্জা তো তোমায় দেখিয়ে বেড়াবো না।
মুখ বাঁকিয়ে উঠে পড়লো দ্যুতি। এগুলো আলমারির দিকে।
একনজর দ্যুতির দিকে দিয়ে চোখজোড়া বুজলেন মিনা বেগম। উঁচু স্বরে বললেন,
-গোসলে যাচ্ছিস?
-হু..
-তাহলে একটা শাড়ি নিয়ে যা। আজ একটা শাড়ি পরবি। আর বলদকে তো ইঙ্গিত দিয়েই দিলাম.. দেখি এখন কী করে! তবে বলদের দিক থেকে কোনো প্রকার ঈশারা না পেলে ওর সামনে দিয়ে বারবার হাটাহাটি করবি। তাতেও যদি বলদ কিছুই না বুঝে তো শুরু করে দিবি ময়ূরীর নাচ!
ভ্রু কোঁচকালো দ্যুতি।
-ময়ূরীর নাচ?
-ওইযে জোরেজোরে নিঃশ্বাস ফেলে জামা টেনেটুনে উড়াধুড়া নাচ দেয় না? রাত একটা বাজলেই তো আমাদের সিডিতে দেয়.. তোদেরটাতে দেয়নারে?

   -চলবে

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Where stories live. Discover now