#৪০

377 14 0
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৪০

রাত এগারোটার দিকে দোদুল এবং দীদারকে নিয়ে থানায় এলেন আলাউদ্দীন খন্দকার। তবে অফিসার্স ইনচার্জ না থাকায় সব শুনে ডিউটিরত এক অফিসার সিগারেট টানতে টানতে বললেন,
-চব্বিশ ঘন্টা না পেরুলে অভিযোগ নেয়ার নিয়ম নেই..
-আপনি একটু বুঝুন.. এত রাতে মেয়েটার তো কোনো বিপদ আপদও হতে পারে।
-তা ঠিকাছে.. তবে এমনও তো হতে পারে আপনার মেয়ে কোথাও আটকা পড়েছে। কোনো ফ্রেন্ডের বাসা কিংবা অন্য কারো বাসায়।
আলাউদ্দীন খন্দকার বললেন,
-এখানে ওর তেমন কোনো ফ্রেন্ড নেই।
-তা না থাকুক.. আবার এমনও তো হতে পারে আপনার মেয়ের অন্য কোথাও সম্পর্ক আছে। আর তার সাথেই...
ক্ষেপে গেল দোদুল। বললো,
-আপনাকে তো এত কষ্ট করে টাকা দিয়ে সরকার নিজের মতো করে কাহিনী বানানোর জন্য রাখেনি।
-আপনি উত্তেজিত হচ্ছেন। আর আমাদের আইনে যা লেখা আছে তার বাইরে আমরা যেতে পারবো না। আপনারা বরং কাল আসুন..
-কাল আসবো মানে? এই রাতে আমার বোনের এই থেকে সেই হয়ে গেলে তার দায়ভার কে নেবে?
দোদুলকে থামিয়ে দিল দীদার। নিজেই অফিসারের সাথে ডিল করতে কিছু টাকা বের করে অফিসারের পকেটে পুড়ে দিয়ে অনুরোধের সুরে বললো,
-নিজের মতো করে একটু রাতটা দেখুন না.. যদি কোনো খোঁজখবর না পাওয়া যায় তবে না হয় আমরা কাল আরেকবার আসবো।
এবারে বত্রিশপাটি দাঁত বের করে হাসলেন ডিউটিরত অফিসার। তারপর বললেন,
-ঠিকাছে.. আপনার নাম্বারটা দিয়ে যান। আমি দেখছি।
নিজের সেল ফোনের নাম্বার লিখে দিল দীদার। সৌজন্য সূচক ম্লান হেসে বললো,
-একটু দেখুন.. মেয়ে মানুষ তো।
-দেখবো.. তারপরও কাল সকালে একবার আসবেন। আর আপনার ভাইকে বলবেন ক্রোধকে নিজের আয়ত্তে রাখতে। নয়তো কখন জেলে ভরে থাকবে টেরও পাবেন না।

সারা রাত আলাউদ্দীন খন্দকারের কাটলো অস্থিরতায়। এই বুঝি দ্যুতি আসবে আর তার ভেতরের কষ্ট কমিয়ে দিয়ে বলবে, বাবা তুমি এত অল্পতেই অস্থির হও কেনো? তবে দ্যুতি এলো না.. ভোর পেরিয়ে সকাল হলেও খবর মিললো না দ্যুতির। খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে ইশতিয়াকের নাম্বারে আবারও কল দিলেন তিনি।
-বাবা, দ্যুতি কি রাতে তোমাদের বাড়িতে যায়নি?
-না..
-ওহ.. তোমার সাথে কি ওর কাল কথা কাটাকাটি হয়েছিল?
একদন্ড চুপ থেকে ইশতিয়াক বললো,
-হয়েছিল.. ও আমাকে তালাক দিতে বলছিল বারবার।
বুকের ভেতরটা ব্যথায় মুচড়ে উঠলো আলাউদ্দীন খন্দকারের।
ইশতিয়াক বললো,
-আপনি সারজিমের ওখানে খবর নিয়েছেন?
-সারজিম?
-হ্যাঁ... বা অন্য কোথাও! ও তো পথ ভুলে হারিয়ে যাবার মতো মেয়ে নয়। গিয়েছে হয়তো কারো কাছে।
কপাল কোঁচকালেন আলাউদ্দীন খন্দকার। ক্ষিপ্র গলায় বললেন,
-কারো কাছে বলতে তুমি কী বলতে চাইছো? পথ ভুলে হারিয়ে না গেলে কি মানুষ নিখোঁজ হয় না? একজন প্রফেসর মানুষ হয়ে তুমি এসব কী ধরনের কথা বলছো?
-আপনি অযথা রেগে যাচ্ছেন। আপনি বা আমি কেউ দ্যুতি সম্পর্কে কম অবগত নই। আছে কোথাও দ্যুতি.. শুধুশুধু টেনশন নিয়ে আপনার শরীর কেনো খারাপ করছেন?
-আমার শরীর নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না। দ্যুতিই ঠিক বলেছিলো। তোমার সঙ্গে আমার মেয়ে কখনোই যায় না। পুঁথিগত জ্ঞানে বেড়ে উঠা মানেই ভালো মানুষ হয়ে বেড়ে উঠা নয়। একজন ভালো মানুষ হয়ে বেড়ে উঠতে একটি ভালো মনেরও প্রয়োজন.. আর যা তোমার মাঝে নেই।
ফোন রেখেই রাগে গজগজ করতে শুরু করলেন আলাউদ্দীন খন্দকার। হারামখোরের দল.. দ্যুতি সম্পর্কে তোরা অবগত? এসব কেমন ছন্নছাড়া কথাবার্তা! গেছে কোথাও! নয়তো সারজিমের কাছে! আমার মেয়েকে তোরা চিনিস? জানিস? কখনো চেষ্টা করেছিস জানতে বুঝতে? শালা কাপুরুষের বাচ্চা.. যার নিজের সহধর্মিণীর পাশে দাঁড়ানোর মতো ক্ষমতা নেই, তার আজ বুলি ফুটেছে!
-বাবা তুমি ওমন করছো কেনো? ওমা.. বাবা কেমন করছে!
-আমি ঠিক আছি। ফ্যানটা ছেড়ে দে...
অস্থির ভাবে পায়চারী করা বন্ধ করে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলেন আলাউদ্দীন খন্দকার। বুকের ভেতরটা তার কষ্টে কিলবিল করছে। প্রথমবার জীবন সঙ্গী বাছাই করতে দ্যুতি নিজে ভুল করলেও দ্বিতীয়বার সে ভুল করেছে। চরম এক ভুল করেছে! মেয়েটিকে আবারও আরেকটি সম্পর্কে কেনো জড়ালো সে? পুরুষবিহীন নারীরা কি বেঁচে থাকতে পারেনা?
-ওই কাপুরুষের বাচ্চা বলে চিন্তা করবেন না শুধুশুধু.. আমার মেয়ের কোনো খোঁজ নেই। অথচ ওই হারামজাদা বলে শুধুশুধু! আমার কারণে আমার মেয়েটা জীবনে সুখ পেল না..
আলাউদ্দীন খন্দকারের কুঁচকানো চোখের কোণায় একফোঁটা পানি দেখে বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠলো দীপার। বাবা কাঁদছে? তবে কি তার কিছু করা উচিৎ? কিন্তু সে কী করবে? বাবাকে সব খুলে বলবে? কী করবে বুঝে উঠতে পারলো না দীপা। আলাউদ্দীন খন্দকারের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
-বলুক.. উনার যা বলার বলুক।
-আমার তো এখন সন্দেহ হচ্ছে ইশতিয়াককে নিয়েই। ওর সাথে কালও দ্যুতির দেখা হয়েছিল। দ্যুতি ওকে তালাক দিতে বলেছিল।
-তালাক দিতে বলেছে?
-হ্যাঁ..
একদন্ড ভাবলো দীপা। তারপর ক্ষীণ স্বরে বললো,
-বাবা, দুলাভাই মৌমি নামের মেয়েটাকে বিয়ে করবে। আর আপু সেই খবর পেয়েই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছিল। ও বাবা.. আপু আবার উল্টাপাল্টা কিছু করে বসেনি তো?
ক্ষণিকের জন্য হতভম্ব হলেও দীপাকে ধমকে উঠলেন আলাউদ্দীন খন্দকার।
-আগে কেনো বলিস নি এসব? আর আমার মেয়ে ওমন নয়.. ও উল্টাপাল্টা কিছু কখনোই করবে না। একদম না..

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Where stories live. Discover now