#১

2.1K 51 6
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_১

-দোস্ত! স্যারের নাম্বারটা কালেক্ট করে দে না! মাইরি! এরে আমার এত্ত ভাল্লাগে যে মাঝেমাঝে ইচ্ছে হয় চুমুতে তার গাল ভরে দেই।
-অসভ্যের মতো কথা বলিস না তো!
-যাহ বাবা! অসভ্যতামি কোথায় করলাম! অসভ্যতামি কখন হতো জানিস? যখন আমার ইচ্ছের নৌকা তার ঠোঁটে গিয়ে থামতো!
ক্লাস থেকে বেরুতে কথোপকথনের সামান্য অংশ শুনেই চোখমুখ কুঁচকে ফেললো ইশতিয়াক। গলা খাকড়ি দিয়ে উঠে কুঁচকানো কপাল নিয়ে সে এগুলো পদার্থ ডিপার্টমেন্টের দিকে। খালুজ্বি কল করেছিল। তাকে একবার যেতে বলেছে সেখানে। কী যেন জরূরী এক আলাপ আছে। তবে যে আলাপই থাকুক না কেনো তার আলাপ যে বাবাতে গিয়ে আটকাবে তা একরকম নিশ্চিত। অবশ্য তার বাবা লোকটিই এমন যাকে নিয়ে আলোচনা করার মানুষের অভাব নেই। প্রথম স্ত্রী সুস্থসবল জীবিত থাকা অবস্থায় যখন একজন লোককে দ্বিতীয় বিয়ের মতো একটি অপরাধের আশ্রয় নিতে হয় তখন তাকে নিয়ে শুধু আলোচনা নয় সমালোচনাও করা উচিৎ। হালকা কেশে উঠলো ইশতিয়াক। সালাম দিয়ে দ্রুত পায়ে অফিস রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
-খালুজ্বি ডেকেছিলেন?
কাঁচাপাকা লম্বা গোঁফের অধিকারী জমিল আহমেদ বইয়ের ফাঁক থেকে মুখ উঠিয়ে মৃদু হাসলেন। মাথা নেড়ে তাকে বসার নির্দেশ করে বই বন্ধ করে চশমা খুলে টেবিলে রেখে তিনি বললেন,
-হ্যাঁ.. আজ আর ক্লাস আছে?
-জ্বি.. আরেকটা আছে। তবে মাঝে একঘন্টা গ্যাপ আছে।
-অহ.. তা বুবুর শরীর ভালো?
-জ্বি.. আছে আলহামদুলিল্লাহ।
জমিল আহমেদ উঠে দাঁড়ালেন। বুক সেল্ফের দিকে এগিয়ে গিয়ে বইটি রেখে আবারও নিজের জায়গায় এসে বসলেন। এবারে স্থির গলায় বললেন,
-আজ এখান থেকে সরাসরি আমার বাসায় যাবে। বুবুকেও আসতে বলেছি। আজ তোমাকে কিছু লোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব।
-ঠিকাছে।
-দেখো বাবা আমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলতে পারিনা। তাই আসল কথাতেই আসি। আজ যাদের সঙ্গে তোমার পরিচয় করিয়ে দিব তারা তোমার হবু শশুর বাড়ির লোকজন।
বুকের ভেতরটায় ছ্যাৎ করে উঠলো ইশতিয়াকের। চোখজোড়া রসগোল্লার মতো বানিয়ে সে বললো,
-জ্বি?
তবে ইশতিয়াকের প্রশ্নের জবাব দিলেন না জমিল আহমেদ। স্বাভাবিক সুরেই সে বললেন,
-কন্যা খুবই রূপবতী.. মধ্যবিত্ত পরিবার। আমাদের বাসার পাশেই থাকে। মেয়েটির বাবাও আলহামদুলিল্লাহ। আলাউদ্দীন সাহেব.. উনার সঙ্গে উঠাবসার জের ধরেই উনার পরিবারের সঙ্গে পরিচয়।
মেয়ের বাবার নাম শুনে যেনো চোখ কপালে উঠে গেলো ইশতিয়াকের। আঁতকে উঠে সে বললো,
-আস্তাগফিরুল্লাহ! আমি তো আলাউদ্দীন সাহেবকে ভাই বলে ডাকি।
এবারে খানিকটা চিন্তিত মনে হল জমিল আহমেদকে। তবে পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে সে বললো,
-তাই নাকি? একসময় ডাকতে.. তবে আজ থেকে ডাকবে না। ভাই যে শ্বশুর হবে না এটা কোথাও লেখা আছে?
-নেই.. কিন্তু...
-কী?
নীরব হয়ে পড়লো ইশতিয়াক। ভাই যে শ্বশুর হবে না এটা কোথাও লেখা না থাকলেও পুরো বিষয়টি অদ্ভুত। তাছাড়া এতদিন ধরে যাকে ভাই সম্বোধন করে এসেছে তাকে আজ থেকে কিভাবে বাবা বলে ডাকবে সে?
-তোমার সাথে আলাউদ্দীন সাহেবের দেখা হয়েছিল কবে? এর মাঝে আমাদের বাসায় গিয়েছিলে নাকি?
জমিল আহমেদের কথা শেষ হতেই হালকা নড়েচড়ে বসলো ইশতিয়াক। বললো,
-না.. আগে যখন যেতাম তখন তো প্রায়ই দেখা হতো।
-আগে দেখা হবে কী করে? উনি তো আমাদের পাড়ায় এলেনই কিছু দিন হলো!
-পাড়ায় কিছু দিন হলো আসবেন কেনো? উনি তো ওপাড়াতেই সেটেল!
কপাল কুঁচকে ফেললেন জমিল আহমেদ। চোখেমুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বললেন,
-আরে গাধা! তুমি যে আলাউদ্দীন সাহেবের কথা বলছো আমি সেই আলাউদ্দীন সাহেবের কথা বলছি না! তাছাড়া তুমি যেই আলাউদ্দীন সাহেবের কথা বলছো তার কি মেয়ে আছে নাকি? তার একটাই ছেলে.. তাও ক্লাস ফাইভে পড়ে।
জমিল আহমেদের কথায় স্বস্তি ফিরে পেল ইশতিয়াক। চোখমুখে তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে বললো,
-অহ.. হ্যাঁ! তাই তো। তাই তো... যাক! বাঁচা গেলো..
-গবেট! ভাইকে শ্বশুর বানানো যাবেনা এটা মাথায় এলেও তোমার মাথায় এটা আসেনা ছেলে হয়ে ছেলেকে বিয়ে করবে কী করে? যাও এখন! দ্রুত চলে আসবে বাসায়...
জমিল আহমেদের রুম থেকে বেরিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো ইশতিয়াক। তবে পরমুহূর্তেই নিজের করা বোকামির হিসেব মেলাতেই অস্বস্তিরা এসে চেপে ধরলো তাকে। মাঝেমাঝে তার যে কী হয়! সহজ কিছু কথা বুঝেও বোঝে না.. জোরেসোরে একটি নিঃশ্বাস ফেলে পকেটে হাত দিল ইশতিয়াক। ফোন বের করে ম্যাসেজ চেক করতে করতে এগুলো নিজের ডিপার্টমেন্টের দিকে।

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Onde histórias criam vida. Descubra agora