#৬৩

337 13 0
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৬৩

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে ঢুকতেই রাতের বাসি থালাবাটি দেখে কপাল কোঁচকালো ইশতিয়াক। নাক কুঁচকে খানিকক্ষণ এঘর ওঘর পায়চারী করে ধীরেসুস্থে আবারও এল রান্নাঘরে। চুলোয় পানি বসিয়ে সিঙ্কের দিকে এগিয়ে বাসি থালাতে হাত দিতেই কানে এল কলিংবেলের আওয়াজ। লম্বা একটি দম ফেললো ইশতিয়াক। একবার ভাবলো বাজতে থাকুক ঘন্টাধ্বনি। যতক্ষণ পর্যন্ত না তার কাজ শেষ হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এক পাও সে নড়বে না। তবে পরমুহূর্তে দ্যুতির কথা ভেবে থালা রেখে দ্রুত পায়ে সে এগুলো দরজার দিকে। 
-ভাইজান ভালো আছেন?
দরজা খুলতেই ইশতিয়াককে দেখে রাতে খাবার নিয়ে আসা মহিলাটি দাঁত দেখিয়ে হাসলো। তারপর তার দিকে বাড়িয়ে দিল একটি ট্রে।
-আম্মা পাঠাইছে। ধরেন..
ট্রে হাতে নিল ইশতিয়াক। মুখে খানিকটা অস্বস্তিভাব ফুটিয়ে বললো,
-খালাকে আমাদের জন্য দুপুরের খাবার পাঠাতে নিষেধ করবে। আমি একটু বাইরে বেরুবো। খাবার সেখান থেকেই আনবো।
উৎসাহের সাথে মহিলাটি বললো,
-আমি কি ওইটুক সময় ভাবির কাছে বসে থাকবো? আম্মা বলছে ভাবি একা থাকলে তার সাথে থাকতে।
-ঠিকাছে.. আমি যাবার সময় তোমাকে ডেকে দিয়ে যাবো।
-আচ্ছা। আর রাতের বাসনকোসন? আম্মা ওগুলো নিয়ে যেতে বলছে।
-তখনই নিয়ে যেয়ো।
মহিলাটি চলে যেতেই দরজা বন্ধ করে ঘরে ফিরে এল ইশতিয়াক। রাতে মেঝেতে গদি বিছিয়ে বিছানা করেছিল সে। যেখানে রাতটা কোনোভাবে কাটিয়ে দিলেও ঘুম হয়নি ঠিকমতো। বারেবারে পাশের ঘরে দ্যুতিকে দেখতে গেছে। নতুন বাসায় একা ঘরে থাকতে ভয় পাচ্ছেনা তো সে? তবে দ্যুতি ছিল নির্বিকার। প্রতি রাতের মতোই খানিকক্ষণ গুনগুনিয়ে কেঁদে ঘুমিয়েছে পড়েছিল সে।

ট্রে নিচে রেখে পাশের ঘরে এল ইশতিয়াক। দ্যুতির পাশে বসে আলতো গলায় তাকে কয়েকবার ডাকতেই উঠে বসলো দ্যুতি। বন্ধ জানালার ফাঁক দিয়ে ঢোকা হালকা আলোয় দ্যুতির উজ্জ্বল মুখটি দেখতেই বুকের ভেতরটা টিপটিপ করে উঠলো। অদ্ভুত এক কষ্ট গলা চেপে ধরাতে চোখজোড়া বুজে ফেললো ইশতিয়াক।
-হাতটা ধরবে দ্যুতি?
দিনের পুরোটা সময় ভালো থাকলেও মাঝেমাঝে তার পুরো শরীরে জ্বলন শুরু হয়। সেসময় খানিকক্ষণের জন্য হলেও তার জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পায়। ভালো খারাপ বিচার করার মতো শক্তি থাকে না। শরীরের অদ্ভুত কিছু চাহিদার তোপে পড়ে সে হারিয়ে ফেলে নিস্তেজ সেই দ্যুতিকে। যে অন্ধকার ঘরে বসে স্মরণ করতে ভালোবাসে পুরোনো সব সুখের স্মৃতি। যাতে আশেপাশের মানুষেরা ব্যাঘাত ঘটালেও খানিকক্ষণ চিৎকার করে কাঁদলে তার বুকের ভেতরটা হালকা হয়ে আসে। স্বস্তির শ্বাস ফেলে সে নতুন করে আবারও শুরু করে স্মৃতিচারণ।

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Where stories live. Discover now