#২৫

415 17 1
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_২৫

-বারোটা বছর যাকে বাবা বলে জেনে এসেছে.. হঠাৎ করে সেই লোকটি তার বাবা নয় জেনে ভেঙে পড়েছিল সারজিম। দিনরাত ঘরের দরজা বন্ধ রাখতো, আলো নিভিয়ে অন্ধকার করে বসে থাকতো। মানতে পারছিলো না ও। আমাকে মা বলে ডাকা বন্ধ করে দিয়েছিল। ওর বাবাকে বাবা ডাকা বন্ধ করে দিয়েছিল.. আমার বাবা যখন আমায় বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল তখন সারজিম আমার পেটে। আমাকে ঘাড় থেকে নামাতে চুপেচাপে বাবা বিয়েটা দিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি একটিবারও এটি ভাবেননি সত্য কখনোই চাপা থাকেনা। একদিন না একদিন তা সবার সামনে আসেই.. আর নরক করে ফেলে প্রত্যেকের জীবন।
বুকের ভেতরটা টিপটিপ করে উঠলো আলাউদ্দীন খন্দকারের। সেও কি একই কাজ করেননি?
-আমার শশুর বাড়ি এসব মানেনি। বের করে দিয়েছিল আমায় ওই বাড়ি ছেড়ে৷ তবে আমার স্বামী আমার হাত ছাড়েনি। সে নিজেও বের হয়ে এসেছিল ওই বাড়ি ছেড়ে। আমার মতে তার মতো ভালো মানুষ এই পৃথিবীতে দুটো নেই। তবে যে দাগ সারজিমের মনে পড়েছিল তা তাকে ঠিক ভুল বিবেচনা বোধ নষ্ট করে দিয়েছিল। আমার স্বামী চেষ্টা করেছিল ওকে স্বাভাবিক করার.. বলেছিল, তোর বাবা আমিই। রক্তের সম্পর্কই সবটা নির্ধারণ করতে পারেনা। তোর জন্মের পর আমি প্রথম তোকে কোলে নিয়েছিলাম, আমার হাতে ভর করিয়ে তোকে চলতে শিখিয়েছিলাম, তুই তোর আধাবোল নিয়ে আমাকে প্রথমে বাবা বলে ডেকেছিলি.. তুই আমার ছেলে সারজিম। উত্তরে সেই প্রথম চিৎকার করে উঠেছিল সারজিম। ক্রোধে তার শরীরের প্রতিটি শিরা উপশিরা কাঁপছিল। বারবার ও বলছিলো, আপনি আমার বাবা নন। আপনারা আমায় ঠকিয়েছেন। আমায় মিথ্যা বলেছেন.. আমি জারজ সন্তান। আমার মা-বাবা নিজের শরীরের সুখ মেটানোর সময় ভুলক্রমে আমায় জন্ম দিয়েছে.. আমার এই দুনিয়ায় কেউ নেই।
বাকরুদ্ধ হয়ে গেল দ্যুতি। সারজিম কখনোই তাকে এব্যাপারে জানায়নি। এমনকি সে তার বাবাকে নিয়ে কখনো কথাও উঠায়নি। একবার নিজে থেকে দ্যুতি জিজ্ঞেস করে বসেছিল, তোমার বাবা কি বাইরে থাকে? বাসায় কখনো দেখিনা যে! উত্তরে খানিকটা কেঁপে উঠেছিল সে। বলেছিল, মহিমা বেগমের স্বামী মৃত.. আমার বাবার টা জানিনা! উত্তরটা এলোমেলো লাগলেও এব্যাপারে না সারজিম না স্পর্শা পরবর্তীতে কারো কাছেই কিছু জানতে চায়নি সে। মনে হয়েছিল মৃত বাবার কথা স্মরণ করিয়ে শুধু শুধু দুঃখ বাড়ানোর কোনো মানে হয় না..
-আমার স্বামী আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন দশ বছর হলো.. তবে একটি আফসোস নিয়েই তাকে এই দুনিয়া ছাড়তে হয়েছিল। সারজিম আর কখনোই তাকে বাবা বলে ডাকেনি। হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় যখন সে বারবার সারজিমের সাথে দেখা করতে চাইছিলো, তখনও ও আসেনি। সেই বারো বছরের সারজিমের মনে জারজ শব্দটি এমন ভাবে গেথে গিয়েছিল যে তার থেকে কখনোই বের হতে পারেনি ও। স্পর্শা ভাই বলতে পাগল ছিল.. তবে সারজিম কখনোই স্পর্শাকে বোন হিসেবে মানেনি। দু'দন্ড ওর পাশে বসে কথা বলেনি। তোমার মনে আছে কিনা দ্যুতি.. তোমাকে আমাদের বাসায় সারজিম পাঠিয়েছিল স্পর্শাকে গান শেখানোর জন্য। তার আগেই স্পর্শাকে ও বলে দিয়েছিল যাতে তোমার কাছ থেকে গান শেখে স্পর্শা। স্পর্শার গানের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ না থাকলেও ভাইয়ের আদেশ পেয়ে খুব খুশি হয়েছিল ও সেদিন। কারণ সেই প্রথম ওর কাছ থেকে কিছু চেয়েছিল সারজিম।
থামলেন মহিমা বেগম। ভেতরের কষ্টগুলো দলা পেকে বারবার গলায় এসে আটকে যাচ্ছে তার। কষ্ট হচ্ছে অতীতের স্মৃতি আওড়াতে...
-আমার স্বামীর মৃত্যুর পর সারজিম আবারও আমায় মা বলে ডেকেছিল.. আমি কাঁদতে পারছিলাম না। না পারছিলাম খুশি হতে.. মিশ্র এক প্রতিক্রিয়ায় আমি নীরব হয়ে পড়েছিলাম। ভাবছিলাম এত ভালো এক মানুষের বিয়োগে কষ্ট হচ্ছে না কেনো সারজিমের? নিজের বাবা নয় বলে? তবে সে তো কখনো বৈষম্য করেনি.. বরং স্পর্শার চেয়ে বেশি ভালোবাসতো ও সারজিমকে। তবে কেনো সারজিম জীবিত অবস্থায় মেনে নিতে পারেনি তাকে? কেনো তার মৃত্যু কালে মুখে হাসি ফিরিয়ে আনেনি? কিন্তু ততদিনে সারজিম নষ্ট হয়ে গেছে.. বাব-মা’র প্রতি ক্ষোভ তাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গিয়েছে যে হাজার বাঁধাও তাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেনি.. তোমাকে বাড়িতে আনার পেছনে ওর কোনো উদ্দেশ্য ছিল বুঝতে পারছিলাম। তবে ঠিক কী উদ্দেশ্য ধরতে পারছিলাম না। তাই তুমি যখন গান শেখাতে পারবেনা বলেছিলে তখন মনের ভেতরের অস্থিরতা কেটে গিয়েছিল আমার। তবে স্পর্শা ভাইয়ের প্রথম আদেশ মানতে এতটাই উতলা হয়ে পড়েছিল যে সে তোমায় টিউটর হিসেবে রেখেই দিয়েছিল.. মেয়ে আমার ছোট ছিল। ওর মাথায় শুধু এটাই কাজ করছিলো, হয়তো তোমার আশেপাশে থাকলে সে তার ভাইয়ের কাছেও প্রিয় হয়ে উঠবে। ভাইয়ের সঙ্গও পাবে ও.. যা মেনে নিয়ে চুপচাপ থাকা ছিল আমার প্রথম ভুল।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন মহিমা বেগম। দ্যুতির দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় আবারও বললেন,
-ভুল না অন্যায়.. আমার অন্যায় ছিল ওটা।তোমায় যেদিন ও বিয়ে করে নিয়ে এসেছিল সেদিন দুপুরে সারজিম আমায় বলেছিল বিকেলে স্পর্শাকে বাইরে থেকে ঘুরিয়ে আনতে। আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম। হটাৎ স্পর্শাকে নিয়ে এত ভাবছে সারজিম! ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও ছেলের কথামতো বেরিয়ে পড়েছিলাম। তারপর বাড়ি ফেরার খানিকক্ষণের মাথায় যখন তোমরা এলে, আমি পুরো ঘটনা জানতে পারলাম তখন আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার ছেলে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে যেমনই হয়ে পড়ুক না কেনো তার কোনো মেয়ে আসক্তি ছিল না। তবে কি তোমায় সত্যিই ভালোবেসে বিয়ে করেছে? তাহলে কি মেনে নিব? ঠিক কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। সারজিমের দুপুরের বলা কথা এবং কাজ আমায় বারেবারে বলছিলো, কোনো ঝামেলা আছে। উদ্দেশ্য সারজিমের খারাপ.. তাই শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তোমার বাবা-মা মেনে নিলে আমিও মেনে নেব। কারণ একজন মেয়ের বাবা-মা'ই তার দুনিয়া। সারজিমের উদ্দেশ্য খারাপ হলেও তারা অবগত থাকলে তোমাকে তারা প্রোটেক্ট করতে পারবে। পরবর্তীতে কিছু হলেও তারা তোমার ছায়া হয়ে পাশে দাঁড়াবে.. যা আমি পারবো না। কারণ, সারজিম আমার কোনো কথাই শোনে না। আর আমিও কখনো ওর উপর সেভাবে চাপ প্রয়োগ করিনি.. হয়তো একটি অপরাধবোধ ছিল বলেই পারিনি! তবে ছেলের জন্য আমার বুকের ভেতরটা পুড়তো.. কষ্ট হতো। তাই শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলাম তোমাদের ফিরিয়ে আনার। হয়তোবা আমিই ভুল ভাবছিলাম! হয়তো সারজিমের কোনো বাজে উদ্দেশ্য ছিল না। তাই মাস দুয়েক যেতেই আমি লিখনকে বাসায় ডাকলাম। সারজিমের খোঁজ জানতে চাইতেই ও বললো, তোমার বাবা-মা তোমাদের সম্পর্ক না মানায় তুমি তাদের কাছে চলে গেছো। বিশ্বাস করো.. শুনে আমার বুকটা ফেঁটে যাচ্ছিলো। কী পেল আমার ছেলে জীবনে? সুখ জিনিসটা কেনো লেখা নেই ওর কপালে? কল দিলাম ওকে.. বাসায় ফিরে আসতে বললাম। আমার কথার পিঠে যার তর্কের অভ্যাস ছিল সে সেদিন নীরবে ফিরে এল.. প্রচুর রাত করে বাড়ি ফিরতো ও। আগে যা দিনে বাড়ি ফিরতো, তাও বন্ধ করে দিয়েছিলো। আবার বাড়ি থেকে বের হয়েও যেত ভোর থাকতে.. আমি জিজ্ঞেস করতাম এত ভোরে কোথায় যাস? উত্তর দিত না ও..
-তারমানে আমাদের বিয়ের দু'মাস পর থেকেই ও আপনাদের সাথে থাকতো?
-হ্যাঁ..
শরীর শক্ত হয়ে এল দ্যুতির। তাকে বেঁধে অন্য লোককে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে সারজিম নিজের বাড়িতে চলে যেত? এই লোককে কখনোই মাফ করতে পারবেনা সে.. কখনোই না।
-তারপর বছর যেতে না যেতেই হঠাৎ করে বাড়ি ফেরাও বন্ধ করে দিল সারজিম। ওর ফোন বন্ধ.. তাই যোগাযোগের কোনো উপায় না পেয়ে ভার্সিটিতে গিয়ে খোঁজ নিতেই জানতে পারলাম সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়নি ও। সেদিন বেশ অবাক হয়েছিলাম.. কারণ আমার জানাই ছিল না সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছে ও। লিখনকে আবারও ডাকলাম। ওর খবর জানতে চাইলাম। তবে এবারে কিছু বলতে পারলো না লিখন। তবে আমার কিছু প্রশ্নে তার মুখের রঙ বদলে যাওয়া আমার মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিল.. লোক লাগালাম লিখনের পেছনে। আর তাতেই যতটুকু জানতে পারলাম তাতে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সড়ে গিয়েছিল.. মনের ভেতরটা বারেবারে চিৎকার করে বলছিলো সারজিমের রক্তেই প্রতারণা মেশানো। ও আমার ছেলে হতেই পারেনা.. ও ওর প্রতারক বাবার ছেলে ছিল।
এটুকু বলেই ভেঙে পড়লেন মহিমা বেগম। কাঁপা হাতে জগ থেকে আরেক গ্লাস পানি ঢেলে তা ঢকঢক করে গিলে ঘনঘন কিছু নিঃশ্বাস ফেললেন। তারপর আবারও বললেন,
-আমি যখন সারজিম এবং তোমার খোঁজ পেলাম, তখন তোমার বাবার নাম্বারও জোগাড় করলাম। তাকে কল করে মেয়েকে জাহান্নামের ভেতর থেকে উদ্ধার করতে বললাম.. আমার মনে আছে সেদিন তোমার বাবা আমার এক ফোন কলেই কেমন হন্তদন্ত হয়ে তোমায় উদ্ধারের জন্য বেরিয়ে পড়েছিল। কারণ তিনি তোমার বাবা.. সন্তানের করা হাজারো ভুল ক্ষমা করাই তাদের কাজ।
মহিমা বেগমের কথায় আলাউদ্দীন খন্দকারের দিকে তাকালো দ্যুতি। বাবাকে সেও একবার প্রশ্ন করেছিল কিভাবে তার খোঁজ পেয়েছিলেন তিনি.. তবে সেদিন তার উত্তর এড়িয়ে গিয়েছিলেন।
-আমিও আমার ছেলেকে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম.. যদিও সে যা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। একজন নারী হিসেবে কখনোই সে আমার ক্ষমা পাবার যোগ্য নয়.. তবে একজন মা হিসেবে আমি তাকে ক্ষমা করেছিলাম। সন্তানকে তিলেতিলে ভেঙে পড়া থেকে উদ্ধার করেছিলাম। আমার ছেলে পাগল হয়ে পড়েছিল তোমার জন্য.. দ্যুতি। সারা রাতদিন নেশায় ডুবে থাকতো ও। বাসায় বন্দী করে রাখলে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতো.. তোমাদের বাড়ির সামনে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতো। অপরাধবোধ ভেতরে ভেতরে ওকে মেরে ফেলছিলো.. প্রচুর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল ও। সব দেখতাম.. বুকচিরে কিছু দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতো। তবে আমার ছেলের কষ্ট তো তাতে কমতো না.. তাই শেষে ডাক্তারের পরামর্শ নিলাম। উনি জানালেন সারজিমের এমন এক সঙ্গী প্রয়োজন যে তাকে তার সবটা দিয়ে ভালোবাসবে.. শারীরিক, মানসিক উভয় দিকেই সাপোর্ট দেবে। তারই কথামতো আমাদের গ্রামের দুঃসম্পর্কের এক চাচার নাতনির সাথে ওকে বিয়ে দিলাম। সেসময় ও সজ্ঞানে ছিল না.. আর এর মাঝেই আমি করে ফেললাম দ্বিতীয় অন্যায়। মেয়েটি অল্প বয়স্ক। সারজিমের প্রতি তার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই.. রোজ রাতে সারজিমের নেশা করে বাড়ি ফেরা, দীর্ঘ এক বছর সারজিমকে রিহাবে রাখা নিয়ে তার ছিল না কোনো অভিযোগ। আজ যখন সারজিম সুস্থ এক জীবনে প্রবেশের পরও তাকে স্ত্রী হিসেবে মানে না, তাতেও তার নেই কোনো অভিযোগ। সে তার নিজের মতো রান্নাবান্না, ঘরদোর গোছানোর মাঝেই তার সংসার জীবনের অর্থকে সীমাবদ্ধ রেখেছে। তবে জানো, মেয়েটির নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকালেই আমার আত্মা পুড়ে যায়.. এ কী করলাম আমি বাচ্চা মেয়েটির সাথে? নিজের ছেলেকে সুখী রাখতে বাচ্চা এক মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিলাম?
চোখের পানি মুছলেন মহিমা বেগম। লম্বা একটি দম ফেলে ক্ষীণ স্বরে বললেন,
-কাল রাত থেকে তোমাদের মেয়ের কথা শোনার পর থেকে আবারও আগের মতো অসুস্থ হয়ে পড়েছে সারজিম.. ও এখন হাসপাতালে। বারবার খিঁচুনি উঠছে। নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। এই অবস্থায় আমি ওকে কথা দিয়ে এসেছি আমি তোমাকে আর তোমাদের মেয়েকে ওর কাছে নিয়ে যাবো।
মহিমা বেগমের কথায় যেনো বাজ পড়লো পুরো ঘরজুড়ে। উঁচু গলায় আলাউদ্দীন খন্দকার বললেন,
-আপনাকে কে বললো এসব বাজে কথা?
-কেউ একজন কল করেছিল.. ওদের মেয়ের ছবিও পাঠিয়ে দিয়েছে
-মিথ্যা বলেছে..
-মিথ্যা বলেনি। আমি সেদিন আপনার মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছিলাম.. আজ আমি আমার ছেলের জীবন আপনার কাছে ভিক্ষা চাইছি। একদিনের জন্য.. শুধুমাত্র একদিনের জন্য আপনি ওদেরকে আমার সাথে যেতে দিন।
একসময়ের করা উপকারের কথা স্মরণ করাতেই থেমে গেলেন আলাউদ্দীন খন্দকার। গম্ভীরমুখে সে মেঝের দিকে তাকাতেই মহিমা বেগম বললেন,
-খুব কষ্টে আমি আমার ছেলেকে আজ এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছি। সংসার সাজিয়ে দিয়েছি.. আমার জীবনে আপন বলতে কেউ নেই। আমি আমার স্বামীর মতো আমার ছেলেকেও হারাতে চাই না। দ্যুতি.. আমি কথা দিচ্ছি আমি কালই তোমাদের ফিরিয়ে দিয়ে যাবো। তোমার অপরাধীর মা নয় বরং বলছি একজন ছেলের মা হয়ে, যে আজ অসুস্থ অবস্থায় নিজের মেয়েকে একবার দেখার জন্য ছটফট করছে.. একজন মেয়ের শ্বাশুড়ি হয়ে, যার সংসার জীবন এখনো শুরুই হয়নি.. তুমি মেয়েটিকে বিধবা করে দিও না।
মুখ খুললো দ্যুতি। স্থির গলায় সে বললো,
-আমি আপনাকে সম্মান করি.. তবে আমার পক্ষে ওখানে যাওয়া সম্ভব নয়।
হঠাৎ উঠে দ্যুতির পা জড়িয়ে ধরলেন মহিমা বেগম। আর্তনাদের সুরে বললেন,
-একদিন মা.. আমি তোমায় বা তোমার মেয়েকে রেখে দিব না। আমি আমার ছেলের সংসার সাজিয়ে দিয়েছি।
-সম্ভব নয়.. আপনি আমার পা ছাড়ুন।
-তুমি এত কঠোর হতে পারো না.. তুমিও তো একজন মা।
-আমি কারো মা নই.. প্লিজ আপনি ফিরে যান। আমার পা ছাড়ুন।
হতাশ হলেন মহিমা বেগম। তবে কি তার ছেলেকে দেয়া কথা রাখতে পারবে না সে? এরই মাঝে পাশ থেকে আলাউদ্দীন খন্দকার বললেন,
-তুমি যাবে দ্যুতি.. উনি আমায় যে উপকার করেছিলেন আজ তুমি তা শোধ করে দিয়ে আসবে। যেনো পরবর্তীতে ওই উপকারের কথা বলে বড় কিছু চাওয়ার মুখ উনার না থাকে। রুনা.. গোছ হও। রতিকেও তৈরি করো.. আমি তোমাদের নিয়ে যাবো.. সহিসালামতে নিয়েও আসবো।

গেইটে কয়েকবার কড়া নেড়ে দাঁড়ালো ইশতিয়াক। আকাশটা মেঘলা হয়ে আছে। কোথাও কালো, কোথাও সাদা মেঘে ছেয়ে আছে পুরো আকাশ। পড়ন্ত বিকেলের লাল সূর্যও ধীরেধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। ঠিক যেভাবে তার জীবন থেকে দ্যুতি হারিয়ে যাচ্ছে? না.. দ্যুতি হারিয়ে যাবেনা তার জীবন থেকে। ভোরের আলো মতো সে আবারও ফিরে আসবে তার জীবনে..
-আপনি?
গেইট খুলে অবাক হয়ে নীতা প্রশ্নটি করতেই ম্লান হাসলো ইশতিয়াক।
-জ্বি..
-এখানে কেনো?
-দ্যুতিকে নিতে এসেছি।
-তাকে পাবেন কোত্থেকে? সে তো এতক্ষণে পাড়ি জমিয়েছে সারজিমের কাছে।
হঠাৎ করেই বুকের ভেতরের ব্যথাটা শুরু হলো ইশতিয়াকের৷ তাকে ফেলে দ্যুতি সারজিমের কাছে চলে গেছে?

    -চলবে

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Where stories live. Discover now