#৫৭

385 20 0
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৫৭

ফজরের নামাজ সেরে খানিকক্ষণ জায়নামাজে বসে রইলেন লিলি বেগম। চারিদিকে আলো ফুটছে। ধীরেধীরে কর্মব্যস্ত মানুষেরা নতুন আরেকটি দিনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। কলরবের সাথে পাখিরা নীড় ছেড়ে বেরিয়ে পড়ছে খাদ্যের সন্ধানে। কেউ থেমে নেই কারো জীবনে। আজ মরলে কাল যেমন দু'দিন হয় তেমনভাবে দুনিয়ার বুক থেকে তার নামও মুছে যায়। এরই নাম যে জীবন! বুকচিরে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাশ ফিরে বিছানার দিকে তাকালেন তিনি। বিছানার এক কোণায় জড়োসড়ো হয়ে ঘুমে রয়েছে মৌমি। মেয়েটির এক বুক স্বপ্ন নিমেষেই শেষ হয়ে গেল। ভেঙে গেল বুকের গহীনে সাজানো ছোট্ট একটি ঘর। কী আছে ওই দ্যুতির মাঝে যা মৌমির ভেতর নেই?

উঠে দাঁড়িয়ে জায়নামাজ তুলে ঘরের বাইরে এলেন তিনি। ছোটছোট কদম ফেলে ডাইনিংয়ের দিকে যেতেই তার নজরে পড়লো শিপু চৌধুরীকে।
-ওরা কতদূর? পৌঁছেছে?
চেয়ারে বসে লিলি বেগম প্রশ্নটি করতেই হতাশ গলায় শিপু চৌধুরী বললেন,
-ফোন দিলাম অনেকবার.. ধরছে না কেউ।
-অহ.. পৌঁছায়নি মনে হয়। কিন্তু এত তাড়াহুড়োর মাঝে দীপা আর ইশরাকের যাবার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
-আমি তো নিষেধ করলামই। কিন্তু কে শোনে আমার কথা? আমার কি আর যুগ আছে? যুগ জামানা শেষ আমার!
-তাইতো.. যে পরিবার চক্ষুশূল ছিল, সেই পরিবারের দুই মেয়েই এসে কবজা করে বসলো তোর সংসারে। ছেলেদের সঠিক শিক্ষা দিতে পারিসনিরে তুই.. একেকটা সুন্দর মেয়ে দেখলেই ছাগলের মতো ডাকাডাকি শুরু করে দেয়।
কপালে ভাজ পড়লো শিপু চৌধুরীর। তবে তার উদ্বিগ্নতা উপেক্ষা করেই লিলি বেগম বললেন,
-গতকালের বিয়েটা লোকজনকে দেখানোর জন্য দরকার ছিল.. কিন্তু হাদিসে আছে কোনো নারী যদি গর্ভবতী থাকে তবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার বিয়ের জায়েজ নেই যতক্ষণ পর্যন্ত না সে সন্তান প্রসব করে। অর্থাৎ গর্ভবতী থাকা অবস্থায় বিয়ে হলে সেই বিয়ে শরিয়ত মতে বাতিল হয়। এই বিয়ে জায়েজ হয় না।
ক্ষুন্ন গলায় শিপু চৌধুরী বললেন,
-আর জায়েজ নাজায়েজ! বাচ্চাটাই তো নাজায়েজ..
-কী আর করবি? এখন যা অন্যায় করার তা তো করেই ফেলছে। এখন আর কী করার আছে এসব বলে? তবে আমার মতে বাচ্চা হলেই এক হুজুর ডেকে দুজনের চুপেচাপে শরিয়ত মতে বিয়েটা দিয়ে দে। হুজুরের সামনে বসিয়ে দুজনকে নিজের কাজের জন্য ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর কাছে নিজের সন্তানকে স্বীকার করে নিতে বল। শুনেছি এতে সন্তান বৈধ হয়..
-আর আপনি? আপনি আর এর মাঝে আসবেন না?
-হায়াত ম'ওতের কথা কে বলবে বল! কয়দিন আছি না আছি কে জানে! মাঝখান থেকে মেয়েটাকে নিয়ে ঝামেলায় পড়ে গেলাম। আমার প্রায় সব আত্মীয় স্বজনরাই জানে ইশতিয়াকের সাথে ওর বিয়ে ঠিকঠাক। অথচ আজ...
থেমে গেলেন লিলি বেগম। গ্লাসে পানি ঢেলে এক ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে ক্ষীণ স্বরে বললেন,
-মেয়েটা প্রচুর ভেঙে পড়ছেরে.. কাল রাতেও চুপচুপ করে কাঁদতেছিল। আমার কাছেই মানুষ ও.. ওর কষ্ট আর কেউ না বুঝলেও আমি তো বুঝি!
সুর মেলালেন শিপু চৌধুরীও।
-ইশতিয়াককে আমি কতবার বুঝালাম.. কিন্তু কে শোনে কার কথা? আপা, আমি ভুল করলে ক্ষমা করে দিয়েন। রাগের বসে অনেক কথাই বলছি.. আশা করি মনে নেবেন না।
ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেললেন লিলি বেগম।
-আরে ধুর! ওসব আমি মনে রাখি না.. ইশতিয়াকটার দিক একটু ভালো করে খেয়াল রাখিস। মা নাই মানে দুনিয়ায় কিছুই নাই। মৌমি সাথে থাকলে আমি ভরসা পেতাম। কিন্তু কী আর করা..
-আরেকবার মৌমির কথা আমি বলে দেখবো?
-না.. থাক। ওকে ওর মতো করে ভালো থাকতে দে।

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Where stories live. Discover now