#৪৫

348 12 0
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৪৫

-আরে বাছা.. বোঝার চেষ্টা করো। তুমি যেভাবে দ্যুতিকে ট্রিট করছো, তাতে ওর শরীর ধীরেধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। বলতে কষ্ট হলেও এটা সত্য যে ও এভাবে মৃত্যুর দিকে এগুচ্ছে। আমি তোমাকে যা বলছি তুমি সেটা কেনো করছোনা বলো তো!
আজিজ সাহেবের কথায় কপাল কোঁচকালো সারজিম। ফ্রিজ খুলে ঠান্ডা পানির বোতল বের করে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বললো,
-আমি ওকে ভালোবাসি...
-আর দ্যুতি? ও তোমায় ভালোবাসে?
-বাসবে...
-বাসবে না। দ্যুতির মতো মেয়ে না খেয়ে মরে গেলেও তোমার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেবে না। তুমি দ্যুতিকে চাও.. চাও দ্যুতি তোমার উপর নির্ভরশীল হোক! তবে কেনো তুমি আমার কথা শুনছো না? মেন্টালি আনস্ট্যাবল করে ফেলো ওকে। আই সোয়ার, তুমি যেমনটা যেভাবে চাইছো সবই পাবে।
ফোনের লাইন কেটে দিল সারজিম। চোখজোড়া বুজে লম্বা একটি দম ছেড়ে চেঁচিয়ে সুরুজ মিঞাকে ডেকে উঠলো সে।
-বাবা কিছু লাগবো?
-কোনো কাজের সময় তোমাকে পাওয়া যায় না কেনো? টাকা দিয়ে তোমাকে কোন বালের জন্য রাখি?
-আমি রান্নাঘরেই আছিলাম। রাতের ভাত বসাইতেছিলাম..
-আমি রাতে খাবো না। আজ তোমার ছুটি। তুমি এখনি এখান থেকে বিদায় হও। কীরে? বললাম না বিদায় হ..
ভয়ে কুঁচকে গেল সুরুজ মিঞা। ঢোক চেপে রান্নাঘরের দিকে ফিরে যাবার জন্য পা বাড়াতেই সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সারজিম। বড়বড় পা ফেলে সুরুজ মিঞার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার পশ্চাৎদেশে বসিয়ে দিল একটি লাথি।
-বললাম না বিদায় হ.. ওইদিকে তুই কোথায় যাস?

সুরুজ মিঞা যেতেই ল্যাপটপ খুলে দ্যুতির ঘরের প্রোজেক্টরের সাথে দ্যুতি নামক ফোল্ডারটি যুক্ত করলো সারজিম। তারপর একদন্ড অপেক্ষা করে পা বাড়ালো দ্যুতির ঘরের দিকে..

চোখজোড়া বুজে নীরবে পড়ে রয়েছিল দ্যুতি। তিনদিন হলো নাওয়াখাওয়া বিহীন বন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে সে। এতে শারীরিক দিক দিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়লেও মনটা ছটফট করছে তার। বারেবারে মনে পড়ছে ইশতিয়াক নামের বাজে লোকটির কথা। লোকটির কাছ থেকে দূরে চলে এলে কখনো এতটা কষ্ট হবে তা একদম জানা ছিল না। তবে বিষয়টি অনুধাবনের পর নিজেকে নিজের কাছে ছোট মনে হয়। প্রচুর কষ্ট হয়.. মনটি তার এত বেহায়া কেনো? বাজে লোকটিকে না ভাবলে চলে না? চলে না.. একদম চলে না। তার স্বামীকে সে না ভাবলে কে ভাববে? কিন্তু ইশতিয়াকের সাথে কি আর কখনোই দেখা হবে না তার? দেখা হলেই বা কী? উনি তো বিয়েই করে নিচ্ছেন! উহু.. সাহস থাকলে করেই দেখুক না! একদম হাড্ডি মাংস এক করে দিব। আর যদি কখনো দেখায় না হয়? সারজিম যদি তাকে মেরে ফেলে? নিজের সঙ্গে নিজেরই যুক্তিতর্কের খেলার মাঝপথে হতাশ হয় দ্যুতি। কখনো শুকনো চোখের কোণা বেয়ে গড়িয়ে পড়ে কয়েক ফোঁটা জল। বাবাকে চেঁচিয়ে ডেকে উঠে সে। ও বাবা, এবার হয়তো তুমি আর আমাকে সারজিমের হাত থেকে উদ্ধার করতে পারবে না। বুকের ভেতরটা কষ্টে কুঁচকে যায় তার। ভাবে বাবা-মা, ভাই-বোন.. তাদের সাথেও কি আর কখনোই দেখা হবে না? হয়তো না.. তবে যে তার ইচ্ছে হয় সকল বাঁধন খুলে বাবার বুকে গিয়ে মুখ লুকোতে! তার ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে বলতে, তুমি আমাকে বোঝা মনে করে তাড়াতে চাইলেও আমি আর কোথাও যাবো না.. একদম যাবো না।

বুকচিরে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘাড় বাঁকালো দ্যুতি। ব্যাথায় তার পুরো শরীর জর্জরিত হয়ে উঠেছে। পারছে না সে আর এভাবে দু'দন্ড বসে কাটাতে। হঠাৎ কানে একটি মেয়ের গোঙানীর আওয়াজ আসতেই ঝাপসা দৃষ্টিতে চোখজোড়া মেলতেই পুরো ঘর আলোতে ছেয়ে গেল। কিছু বুঝে উঠার আগেই তার সামনে ভেসে উঠলো একটি মেয়ের নগ্ন শরীর.. করুণ স্বরে আঁতনাদ করছে সে.. তবে একদল পুরুষ তা উপেক্ষা করে তার শরীর নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে৷ কেউ তার হাত, কেউ পা, কেউবা অন্যান্য অংশ ছিড়েছুড়ে খাচ্ছে.. দ্রুত চোখজোড়া বুজে ফেললো দ্যুতি। তবে মেয়েটির আর্তচিৎকার ধীরেধীরে বাড়ছে.. উফ! কী কঠিন তার আকুতি মিনতি! চোখজোড়া বন্ধ করে এমন বিকৃত একটি দৃশ্য দেখায় নিজেকে আটকালেও কানকে কোনোভাবেই আটকাতে পারলো না সে। মেয়েটির আর্তচিৎকার তার কানে এসে লাগতে শুরু করলো তীরের মতো.. মেয়েটিকে ছেড়ে দাও। মেয়েটি কষ্ট পাচ্ছে। ওকে ওভাবে কষ্ট দিও না। তোমরা কেনো ওকে... উফ! তোমাদের কখনোই ভালো হবে না.. চেঁচিয়ে উঠলো দ্যুতি।

ক্রমশ মেয়েটির আর্তনাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে দ্যুতির ভেতরের অস্থিরতা। নিস্তেজ শরীর কোনোরকমের হেলিয়ে সেদিক থেকে মন ঘোরানোর চেষ্টায় বারবার ব্যার্থ হয়ে বুকের ভেতরটা ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে ভেসে আসছে নিজের অতীতের স্মৃতি। ইশ.. কী বিভৎস! সারজিম! এটা বন্ধ করো.. আমার কষ্ট হচ্ছে সারজিম।

দরজার বাইরে থেকেই ভ্রু কুঁচকে আরেকটু ভলিউম বাড়িয়ে দিল সারজিম। আজিজ সাহেব বলেছেন সে দ্যুতিকে নিয়ে সংসার সেদিনই করতে পারবে, যেদিন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে দ্যুতি। সহজ ভাষায় বললে পাগল হয়ে যাবে। দ্যুতি মেন্টালি আনস্ট্যাবল হয়ে তোমার উপর ডিপেন্ডেবল হলে তোমার চলবে? উত্তরে খানিকক্ষণ ভেবেছিল সারজিম। তারপর বলেছিল, চলবে। আমি চাই দ্যুতি আমার পাশে থাকুক.. ভেবে ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে দ্যুতির ঘরে ঢুকলো সারজিম। তবে বন্ধ দেয়ালের ভেতর থেকে আসা বিকট গন্ধে নাক উঁচিয়ে ফেললো। খানিকটা সময় নিয়ে নাক চেপে ঘরের মাঝ বরাবর আসতেই দেখতে পেলো চেয়ারের সঙ্গে বাঁধা দ্যুতির নিস্তেজ শরীরটি পড়ে রয়েছে মেঝেতে...

   -চলবে

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Where stories live. Discover now