#২৭ #২৮

438 15 0
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_২৭

রতির তুলতুলে নরম শরীরের স্পর্শ পেতেই যেনো অবশ শরীরে ধীরেধীরে শক্তি ফিরে পেল সারজিম। বুকের ভেতর মেয়েকে আঁকড়ে ধরে শতশত চুমুতে তাকে ভরিয়ে দিল তাকে।
-ওমা, তোর বাবা অনেক পঁচা? তোকে ভালোবাসে না? ভালোবাসবে কী করে মা? বাবা তো জানতোই না তোর কথা..
খানিকক্ষণ নীরবে সারজিমের শরীরের ওম পেয়ে চুপ করে থাকলেও রুনার দিকে চোখ পড়তেই মুখ বেঁকে ফেললো রতি। মায়ের দিকে দু'হাত বাড়িয়ে উঁচু গলায় কেঁদে উঠতেই রুনা এগিয়ে এল তার দিকে।
-ভয় পাচ্ছে ও। আসলে নতুন মানুষ তো। দিন.. একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।
রতিকে ছাড়ার ইচ্ছে না থাকলেও দ্যুতিকে কেবিনে ঢুকতে দেখে তাকে ছেড়ে দিল সারজিম। তার দ্যুতি, তার রতি.. তবে তার হয়েও হয়ে উঠলো না।

রুনার পিছুপিছু মহিমা বেগম এবং সামিহা কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতেই বাঁধা দিল দ্যুতি। সামিহাকে ডেকে তার পাশে বসতে বলে সে তাকালো জানালার দিকে। জানালার ফাঁকে ছোট্ট চাঁদটা আবছা হয়ে ফুটে উঠছে তার চোখে। তবে কেনো আবছা হয়ে ফুটে উঠছে? সেদিকে পুরো নজর নেই বলে?
-কেমন আছো?
সারজিমের প্রশ্নের জবাব দিল না দ্যুতি। শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো জানালার দিকেই।
-মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে তাই না?
দ্বিতীয় প্রশ্নেও দ্যুতির দিক থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে হতাশ হলো সারজিম। ভাঙা গলায় সে বললো,
-তুমি কি আজও আমায় ক্ষমা করতে পারো নি?
এবারে জবাব দিল দ্যুতি।
-তোমাকে আমি আজীবনেও ক্ষমা করতে পারবো না।
-কেনো দ্যুতি? কঠোর হয়ে তুমি যে সিদ্ধান্ত গুলো নিয়েছো তাতে তো আমরা কেউই ভালো নেই..
-কে বলেছে কেউই ভালো নেই? আমি ভালো আছি.. আমার পরিবার ভালো আছে।
-আর আমাদের মেয়ে?
-রতি আমাদের মেয়ে নয়.. ও বড়ভাই ভাবির মেয়ে।
নিশ্চুপ হয়ে পড়লো সারজিম। সত্যিই দ্যুতি, রতি তার হয়েও হলো না..
-আজ কতদিন পর আমাদের দেখা হলো.. প্রায় তিন বছর। এই তিনবছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। তবে তুমি আমি রয়ে গেছি আগের মতোই। আমি অনুতপ্ততার আগুনে জ্বলে জ্বলে মরছি আর তুমি আমায় ঘৃণা করে করে.. তবে আমরা চাইলেই আমাদের জীবনটা স্বাভাবিক করতে পারি। বলো পারিনা? আমায় ক্ষমা করা যায় না?
-আমার ক্ষমা খুবই দরকার তোমার? ঠিকাছে আমি তোমায় ক্ষমা করবো.. তবে তাতে অবশ্যই শর্ত থাকবে।
সামিহার দিকে তাকিয়ে দ্যুতি আবারও বললো,
-মেয়েটিকে দেখছো? ও তোমার অর্ধেক বয়সী। আর তুমি আমার মতো ওর জীবনটাও নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছো.. আমি মোটামুটি নিশ্চিত মেয়েটার জীবন নষ্টের পর তুমি অনুতপ্ত হবে। তবে ততদিনে মেয়েটির ভেতরটা মরে যাবে। চাইলেও ও পারবেনা তোমায় ক্ষমা করতে।
-তুমি ওকে কেনো টানছো?
-ওকে টানছি কারণ তুমি ওকে সুন্দর একটি জীবন দেবে.. ভালোবাসবে, হাত ধরে পথ চলা শেখাবে, স্বপ্ন দেখতে শেখবে। পারবে?
মাথা নিচু করে ফেললো সারজিম।
-না..
-তাহলে তুমি ওকে মুক্ত করে দাও.. ওকে স্বাধীন একটি জীবন দাও। ওর হাত না ধরলেও ওর পাশে থাকো। ওকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলো। ওর পড়াশোনার দায়িত্ব নাও। কারণ আমার মন বলছে তুমি মেয়েটির যোগ্য নও। সি ডিসার্ভস সামওয়ান বেটার..
মুখ চিকচিক করে উঠলো সারজিমের। দ্যুতির দিকে তাকিয়ে সে বললো,
-দ্বিতীয়টা বেছে নিলাম। আমি তোমায় কথা দিচ্ছি তুমি যেমন চাইছো আমি ওকে ঠিক সেভাবেই মুক্ত করে দেবো।
সারজিম এবং দ্যুতির কথোপকথন শুনে অবাক হলো সামিহা। তাকে মুক্ত করে দেবে মানে? সে কখনোই সারজিমকে ছেড়ে যাবেনা। লোকটি যেমনই হোক না কেনো তার আশেপাশে না থাকলে বুকের ভেতরটা অস্থিরতায় ভরে যায়। কোনো কাজেই মন দিতে পারেনা। তার আজও মনে পড়ে যখন সারজিমকে রিহাবে রাখা হয়েছিল তখন কেমন এলোমেলো হয়ে পড়েছিল সে। রোজ রাতে কাঁদতো.. প্রতি ওয়াক্তের নামাযে শুধুই চাইতো উনি ভালো হয়ে খুব দ্রুত তার কাছে ফিরে আসুক। অথচ আজ উনিই বলছে তাকে ছেড়ে দেবার কথা?
-আমার কাছে ফিরে এসো দ্যুতি.. মেয়েটা বড় হচ্ছে। এখন না বুঝলেও পরবর্তীতে যখন জানতে পারবে ও যাকে বাবা-মা বলে জেনে এসেছে সে ওর আসল বাবা-মা নয়.. একবার ভাবো তখন ওর অবস্থান কোথায় হবে!
-ও জানবে না..
-সত্য কখনোই চাপা থাকেনা দ্যুতি। আমি নিজে এই পরিস্থিতি পেরিয়ে এসেছি। আমি জানি এটা মেনে স্বাভাবিক একটি জীবনে পা দেওয়া ঠিক কতোটা কষ্টকর।
-ওকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।
-আমি ওর বাবা.. আমি না ভাবলে কে ভাববে ওকে নিয়ে?
চোয়াল শক্ত হয়ে এল দ্যুতির। কঠিন স্বরে সে বললো,
-বাবা? মেয়ে যখন জানতে পারবে তার বাবা তারই মা'কে কিভাবে অন্যের বিছানায় ঠেলে দিয়েছে একটি পদের লোভে.. তখন সে খুব গর্ব বোধ করবে? না.. ঘৃণা করবে। ও তোমায় কখনোই বাবা হিসেবে মানবে না। ইনসিকিউর ফিল করবে তুমি আশেপাশে থাকলে। সেসব সহ্য করতে পারবে তুমি?
অস্থিরতা ঘিরে ফেললো সারজিমকে। ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে সে বললো,
-আমার ভুল ছিল.. আমি মেনে নিয়েছি। অনুতপ্ত হয়েছি। রতির জন্য হলেও আমাদের এক হওয়া উচিৎ।
-সম্ভব নয়.. রতি ওর বাবা-মার সাথে সুখে আছে। আমি আমার বিবাহিত জীবনে সুখে আছি। এর মাঝে তুমি এসো না..
একমুহূর্তের জন্য মাথা চিনচিন করে উঠলো সারজিমের। হতভম্ব হয়ে গেল সে।
-তুমি বিবাহিত?
-নাটক.. আবারও নাটক? আমার জীবন নষ্ট করার জন্য হাসানকে পর্যন্ত আমার শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছো.. অথচ আজ তুমি এমন অভিনয় করছো যেনো এসব জানা নেই তোমার।
-হাসানকে আমি পাঠিয়েছি?
-নাটক করো না.. তোমার এই রূপ আমার চেনা।
-শ্যাট আপ.. তুমি বিয়ে করতে পারোনা দ্যুতি। আমাকে পাগল করে তুমি সুস্থ স্বাভাবিকভাবে সংসার করতে পারোনা।
-আর তাই তুমি হাসানকে পাঠিয়ে দিলে?
-কিসের হাসান? ওই কুত্তার বাচ্চাকে আমি কোথাও পাঠাইনি। তুমি কেনো বিয়ে করলে? কোন বাস্টার্ডকে তুমি বিয়ে করলে?
-মুখ সামলে কথা বলো..
ক্ষিপ্ত গলায় সারজিম বললো,
-আমি তোকে ঠকিয়েছি ঠকিয়েছি করে যে মালা জপতি আজ তা কোথায় গেলো? তুই বিয়ে করতে পারিস না.. তোকে আমার কাছেই থাকতে হবে.. তুই আমার বউ। তুই অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারিস না। অন্য কেউ তোকে স্পর্শ করলে মেরে ফেলবো আমি তাকে..
ক্ষেপে গেল দ্যুতিও।
-যা মার.. মেরে ফেল যে কয়টা কুকুর আমার শরীর ছিঁড়েছুড়ে খেয়েছে। সাহস থাকলে মেরে দেখা..
দুজনের উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে দেখে বুকের ভেতরটা ধড়ফড় করতে শুরু করলো সামিহার। সারজিমের দিকে দু'কদম এগিয়ে আতংকে জমে গেল সে।
-থামুন.. আপনার  চোখমুখ নীল হয়ে কেনো যাচ্ছে?নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আপনার? নার্স কোথায়? কোথায় কষ্ট হচ্ছে আপনার?
সামিহার কথা কানে এলেও কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে এল দ্যুতি। করিডর ধরে সামনে এগিয়ে আলাউদ্দীন খন্দকারের কাছে এসে স্থির গলায় বললো,
-রাজশাহীতে ফেরার এখন কোনো বাস পাওয়া যাবেনা?
-যাবে..
-তাহলে চলো। আমি আর এক মুহূর্তও দেরি করতে চাইনা এখানে।
পাশ থেকে মহিমা বেগম বললেন,
-কেনো মা? আমার ছেলে..
-কী ছেলে ছেলে লাগিয়েছেন? আমি ঠেকা নিয়ে রেখেছি আপনার ছেলের জীবনে সুখ আনার?
-ও অসুস্থ..
-সব নাটক ওর। আমি আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি আপনি একজন স্বার্থপর মহিলা। সবসময় নিজের ছেলেকে না দেখে কিছু সময় অন্যের মেয়ের দিকেও তাকান। আপনার পেট থেকে না জন্মালেও তারা মানুষ।

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Where stories live. Discover now