#৯

476 12 1
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৯

রিকশা চলছে দ্যুতির হলের দিকে। পাশে সারজিম। বুক ফুলিয়ে সোজা হয়ে বসে সে তাকিয়ে রয়েছে ফুটপাতের দিকে। একদৃষ্টিতে খানিকক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকার পর চোখ সরিয়ে নিল দ্যুতি। বুকের ভেতরটায় অদ্ভুত এক প্রশান্তি অনুভব হচ্ছে তার। সাথে খানিকটা আতংক.. বকবে না তো সে? নড়েচড়ে উঠলো সারজিম। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটি সিগারেট ধরালো। দীর্ঘক্ষনের নীরবতা ভেঙে একটি গলির দিকে হাত উঠিয়ে বললো,
-এই গলি দেখছো না? এর ভেতরে ঢুকে বামে গেলেই লিখনদের বাসা.. গিয়েছো কখনো?
-উহু..
-সুপ্রিয়া নিয়ে যায়নি?
-উহু..
আবারও গম্ভীর হয়ে পড়লো পরিবেশ। বৃদ্ধ রিকশা চালকটি নিজের সর্বশক্তি দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে রিকশা। তবে রিকশার এই গতির পরিমাণ আজ বড্ড বেশি মনে হচ্ছে দ্যুতির। ইচ্ছে হচ্ছে বৃদ্ধ লোকটিকে বলতে, আরেকটু ধীরে চালান। এত তাড়া কিসের? তবে হাজারো সংকোচের কাছে পেরে উঠছে না.. কী হয় রাতটি এখানেই থেমে গেলে? এমন অপূর্ব সুন্দর মুহুর্ত যে আর কখনোই পাওয়া সম্ভব নয়.. কখনোই না। ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেললো দ্যুতি। লাজ লজ্জা ভেঙে সারজিমের দিকে তাকালো। খানিকটা ইতঃস্তত করে বললো,
-আপনি দিনে ক'টা সিগারেট খান?
-দু'তিন প্যাকেট তো হয়েই যায়।
-অহ.. এক প্যাকেটে কয়টা সিগারেট থাকে?
হাসলো সারজিম। সিগারেটের ধোয়া নাক মুখ দিয়ে ছেড়ে তাকালো তারা ভরা আকাশের দিকে।
-আমাকে ভালোলাগে তোমার?
বুকের ভেতরটা টিপটিপ করে উঠলো দ্যুতির। গালের উঁচু হার চিরচির করে উঠতেই ঠোঁট কামড়ে ফুটপাতের দিকে চাইলো সে।
-তাহলে কি ধরে নেবো আমাকে ভালোলাগেনা তোমার?
ঘাড় নেড়ে ধীর স্বরে দ্যুতি বললো,
-উহু..
-তাহলে কি ধরে নেবো ভালোলাগে?
-জানি না..
আবারও মৃদু হাসলো সারজিম।
-এদিকে তাকাও।
-উহু..
-কেনো?
-জানি না। আচ্ছা.. আপনি রবীন্দ্রসংগীত শোনেন?
-শুনি না.. তবে কেউ শুনতে চাইলে বাঁধাও দেবো না।
চোখজোড়া ছলছলে হয়ে উঠলো দ্যুতির। ভালোবাসা এত তৃপ্তির? তবে কি কাওকে মন থেকে ভালোবেসে চরম সুখের এক রাজ্যেও পৌঁছানো যায়? চোখজোড়া মুছে সারজিমের দিকে চাইলো সে। ঠোঁট ভর্তি হাসি নিয়ে বললো,
-আমার খুব ভালোলাগে।
-শুনতে না গাইতে?
-দু'টোই।
-স্পর্শা কতোদূর শিখলো?
-আপনি বরং ওর কাছেই জেনে নেবেন..
-ঠিকাছে, জেনে নেব।
-ও আপনাকে প্রচুর ভালোবাসে.. আপনি কেনো ওর জন্য সময় রাখেন না? আজকের দিনে ও আপনাকে কতটা মিস করেছে জানেন?
-জানি।
-তাহলে সময়মত আসেননি কেনো?
সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আরেকটি সিগারেট ধরালো সারজিম। সেদিকে চেয়ে দ্যুতি মুগ্ধ চোখে সারজিমের ঠোঁটের ছোঁয়ায় সিগারেটকে পুড়তে দেখলো.. এভাবে পুড়ছে তার বুকের ভেতরটাও। লোকটিকে দেখলেই জ্বালাপোড়া, কষ্ট, হাসি, তৃপ্তি, ভালোলাগার মিশ্র অনুভূতি কেনো হয়?
-আচ্ছা একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি?
দ্যুতির প্রশ্নে তার দিকে ফিরলো সারজিম। আবছা আলোয় ভেসে উঠা দ্যুতির উজ্জ্বল মুখের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-করো..
-আপনার জীবন সঙ্গী হিসেবে কেমন মেয়ে পছন্দ?
-তোমার মতো বলবো না.. কারণ আমার যে জীবন সঙ্গীনী হিসেবে তোমাকেই চাই!
সেই থেকে শুরু হলো নতুন এক পথ চলা.. যে পথ চলায় ছিল না কোনো বাঁধাধরা নিয়ম। ছিল না কারো হস্তক্ষেপ। রোজ বিকেলে স্পর্শাকে একঘন্টা পড়ানোর কথা থাকলেও তার পরীক্ষার উছিলায় ঘন্টার পর ঘন্টা পড়াতে শুরু করলো দ্যুতি। ওদিকে রাতে সারজিম বাসায় ফিরে হালকা নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়তো তাকে নিয়ে। কখনোবা বাইক নিয়ে চলে যেতো দূরে কোথাও কখনোবা ঢাকার রাস্তায় ঘুরতো রিকশায় করে। বেশ যাচ্ছিলো তাদের প্রণয়ের দুষ্টমিষ্টি দিনগুলো। এরই মাঝে এক বিকেলে স্পর্শাকে পড়াতে এসে বাসায় সারজিমকে দেখে বেশ অবাক হলো দ্যুতি। তবে পরমুহূর্তেই যখন জানতে পারলো স্পর্শারা বাসায় নেই তখন চোখমুখ কুঁচকে ফেললো সে।
-তুমি আমাকে জানালেনা কেন স্পর্শা তোমার মায়ের সাথে মামার বাসায় গিয়েছে?
-জানালে তুমি আসতে না।
-তো তুমি আমাকে আনতে কিচ্ছুটি জানাও নি?
-হ্যাঁ..
-কিন্তু কেনো?
-তোমায় চুমু খাবো বলে..
মুখ বাঁকিয়ে দ্যুতি বললো,
-ইয়ার্কি রাখো..
-আই অ্যাম সিরিয়াস।
-তাই? তা হঠাৎ চুমু খেতে ইচ্ছে হলো কেন?
-সিগারেটের পরিবর্তে তোমার ঠোঁটের নেশায় আসক্ত হতে চাই।
দ্যুতির পাশে সোফায় এসে সারজিম বসতেই সরে বসলো সে। ধীর স্বরে বললো,
-এখন না..
-কখন?
-তোমায় তো বলেছিই.. তুমি ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে জব নাও। বাবাকে জানাই..
-বাবাকে জানালেই চুমু খেতে দিবে?
-সারজিম!
-হু...
কিছুটা এগিয়ে এসে সারজিম দ্যুতির হাতে হাত রাখতেই চট করে উঠে দাঁড়ালো সে। প্রসঙ্গ পালটে বললো,
-চলো.. ঘুরতে যাই।
চেঁচিয়ে উঠলো সারজিম।
-ফর গড'স সেক দ্যুতি। ডোন্ট ইউ লাভ মি?
-ইয়েস, আই ডু।
-তাহলে চুমুতে সমস্যা কোথায়? এমন তো না চুমু খেলেই তোমার পেটে আমার বাচ্চা আসবে?
দ্যুতির অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে লম্বা একটা দম ছাড়লো সারজিম। হাতের আঙ্গুল ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টায় লেগে পড়লো সে।
-ওকে.. কাম ডাউন! কাম ডাউন। তুমি আমায় কবে চুমু খেতে দেবে?
হাসলো দ্যুতি।
-তোমার ওই জঙ্গলের মতো দাড়ি মোছ কাটলে।
-সিউর?
-আরে! আজ তোমার কী হয়েছে?
-পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি.. তোমায় এত কেনো ভালোবাসি বলতে পারো দ্যুতি? এই.. দ্যুতি? বিয়ে করবে আমায়?
-করবো..
-এখন?
একরাশ বিস্ময় নিয়ে দ্যুতি বললো,
-এখন বলতে?
-এখন বলতে এখন। এই মুহুর্তে..
একদন্ড ভাবলো দ্যুতি। ক্ষীণ স্বরে বললো,
-বাবা?
-আমরা বিয়ের পর বলবো..
-যদি না মানে?
-তাহলে আমি তো আছি.. তাছাড়া তুমি তো তোমার বাবার সঙ্গে চিরকাল থাকবে না।
মুহুর্তের মাঝেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলো দ্যুতি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভারী গলায় সে বললো,
-চলো..
-আমি লিখনকে কল করছি.. ওই সাক্ষীর ব্যবস্থা করবে। আমরা আজই রেজেষ্টি করবো।

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Where stories live. Discover now