#১১

431 15 1
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_১১

সাতসকালে বেরিয়ে যায় সারজিম। বাড়ি ফেরে রাত আটটার দিকে। তারপরই শুরু হয় তার চাওয়া-পাওয়ার খেলা। চোখমুখে একরাশ লজ্জা নিয়ে রান্নাবান্না, কাজকর্ম ফেলে তখন দ্যুতির লেগে পড়তে হয় তার সকল আবদার পূরণে। তবে সারজিমের এই চাহিদা পূরণে কখনোই বিরক্ত বোধ করে না সে। বরং সারাদিনভর ভার্সিটি, সংসারের কাজ শেষে এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে সে অপেক্ষায় রয় সারজিমের। ভালোবাসায় এত সুখ কেনো? যে সুখে নিজেকে একবার ডোবালে মাতাল করে ছাড়ে...

পরম সুখে কেটে যাচ্ছিলো তাদের টোনাটুনির সংসার। এর মাঝে সারজিম বা দ্যুতির কারো পরিবার থেকেই তাদের প্রতি কেউ আগ্রহ দেখায়নি। না নিয়েছে কোনো খোঁজখবর। বিষয়টি দ্যুতিকে কাঁদালেও তাতে কোনো পরোয়া ছিল না সারজিমের। সে নিশ্চিন্তমনে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে দিন কাটাচ্ছিল বেশ ফুরফুরে মেজাজেই।

-ভালো একটা শাড়ি পড়ে নাও..
সারজিমের কথায় গাল লাল হয়ে উঠলো দ্যুতির। রাতের বাড়ি ফিরে এ আবদার নতুন নয় তার। তাদের বিয়ের তিনমাসে এ আবদার প্রায়ই করে বসেছে সে।
-এই,, তুমি কি সারাদিন ভর এসবই ভেবে বেড়াও?
-কোনসব?
-ন্যাকা! বোঝো না কোনসব?
হাসলো সারজিম। ওয়াশরুমের দিকে এগুতে এগুতে বললো,
-আরে আজ হাসান ভাই আসবে.. তার শাড়ি পড়তে বলছিলাম। শাড়ি পড়ে সুন্দর করে সেজে নাও।
-হাসান ভাই হঠাৎ?
-কাজ আছে একটু..
চুলোয় ভাত বসিয়ে হাতমুখ ধুয়ে কামিজ খুলে গোলাপি রঙের একটি গ্রামীণ চেকের শাটি পড়ে নিল দ্যুতি। চুল খুলে তাতে হালকা চিরুনি বুলিয়ে খোঁপা করলো। তারপর হাতে সামান্য পাউডার নিয়ে মুখে লাগাতেই পেছন থেকে কোমড় চেপে ধরলো সারজিম।
-সুন্দর লাগছে..
-শুধুই সুন্দর?
-উহু.. বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী নারী রানী এলিজাবেথের চেয়েও দুই ডিগ্রি উপরে যাকে লাগছে.. সেই আমার দ্যুতি।
-ধুর! ছাড়ো.. ভাতটা দেখে আসি।
দ্যুতিকে ছেড়ে দিল সারজিম। হালকা কেশে বিছানায় বসে বললো,
-তোমার কাছে আমি আজ কিছু চাইবো.. আশা করি ফিরিয়ে দেবে না।
-কি দরকার আপনার? কাল কিন্তু আমার পরীক্ষা আছে.. আজ রাতে একদম কাছে আসবে না।
সেকথার জবাব না দিয়ে সারজিম বললো,
-আজ রাতটা হাসান ভাই এই বাসায় থাকবে।
চোখে কাজল পড়তে পড়তে দ্যুতি বললো,
-উনি এখানে থাকবেন কেন?
-উনার বাসায় সমস্যা হয়েছে..
-কী হয়েছে?
এরই মাঝে কলিংবেল বাজতেই উঠে দাঁড়ালো সারজিম। দরজা খুলে হাসানকে পাশের ঘরে বসতে দিয়ে আবারও নিজেদের শোবার ঘরে ফিরে এল সে।
-দ্যুতি তোমাকে একটা উপকার করতে হবে।
সারজিমের গলার স্বর নরম।
আয়না থেকে মুখ ঘুরিয়ে দ্যুতি জবাবে বললো,
-কী উপকার?
-ইয়ে মানে.. আমি হাসান ভাইয়ের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা নিয়েছিলাম। আসলে আমার হাত ফাঁকা ছিল। ঝোঁকের মাথায় বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু তোমাকে একা ফেলে দেবার জন্য তো নয়! তাই ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নিয়েই এই ফ্ল্যাট, থাকা খাওয়ার জিনিসপত্র সব এরেঞ্জ করতে হয়েছিল..
হতভম্ব হয়ে দ্যুতি বললো,
-তুমি না বলেছিলে তোমার কাছে টাকা আছে!
-মিথ্যা বলেছিলাম.. আমি চাইছিলাম না তুমি টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তা করো।
মাথায় হাত রেখে বিছানায় বসে পড়লো দ্যুতি।
-তুমি অন্যের টাকা দিয়ে এতদিন চলেছো?
-হ্যাঁ..
-এখন এতগুলো টাকা কিভাবে শোধ করবে?
-তুমি চাইলেই টাকার ঝামেলা মিটমাট করা সম্ভব।
-আমি?
-হ্যাঁ..
-কিভাবে?
-তেমন কিছু নয়.. তুমি শুধু হাসান ভাইকে সামান্য কোম্পানি দাও।
অদ্ভুত গলায় দ্যুতি জিজ্ঞেস করলো,
-তার মানে?
-খুব সিম্পল.. মাঙ্গনা খাচ্ছিদাচ্ছি! পরিশোধ তো করতে হবেই।
নিজের কানকে বিশ্বাস হলো না দ্যুতির। নির্বাক হয়ে চেয়ে রইলো সে সারজিমের দিকে..
-আমি যা করছি আমাদের দু'জনের করছি দ্যুতি। আমাদের ভবিষ্যতের জন্য করছি। আমি আসলে এভাবে ফেঁসে গেছি যে আমার এছাড়া কিছু করার নেই.. আমার আর কোনো পথ নেই দ্যুতি। থাকলে অবশ্যই আমি তোমাকে বলতাম না।
মেঝের দিকে ঝাপসা দৃষ্টিতে তাকালো দ্যুতি। ধরা গলায় বললো,
-আমার পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়।
-কেনো?
-নিজেকে নোংরা বলে মনে হবে..
-তুমি শুধু তোমার কথাই ভাবছো? তুমি চাওনা আমাদের ভবিষ্যত জীবন সুন্দর হোক?
-না.. আমি চাই না।
দ্যুতি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠতেই বিছানায় তার পাশে এসে বসলো সারজিম। শীতল কণ্ঠে বললো,
-তুমি আমায় ভালোবাসো না?
-বাসি..
-তাহলে তোমাকে আমার জন্য কাজটি করতে হবে..
-আমি পারবো না..
-তোমাকে করতে হবে।
-আমি পারবো না।
-দেন গেট লস্ট.. বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি ছেড়ে।
সারজিম চেঁচিয়ে উঠে কথাটি বলতেই অশ্রু বিক্ষিপ্ত চোখে তার দিকে তাকালো দ্যুতি। এ কোন সারজিমকে দেখছে সে? তার চেনা সারজিম এই সারজিম নয়..
-তুমি কেনো বুঝতে পারছো না দ্যুতি! শুধু একটু পাশে বসবে, তার আবদার পূরণ করবে.. যেমনটা আমার করো।
-তুমি আর উনি এক নও।
-খানিকক্ষণের জন্য তুমি ভেবে নাও হাসান ভাই-ই আমি।
-তুমি কী বলছো এসব!
আর কথা না বাড়িয়ে দ্যুতির পা জড়িয়ে ধরে মেঝেতে বসে পড়লো সারজিম। অনুরোধের সুরে বললো,
-আমার জীবন মরণ প্রশ্ন দ্যুতি.. আমি তোমার কাছে আমার জান ভিক্ষা চাই। তুমি যদি আজ হাসান ভাইয়ের কাছে না যাও কাল তুমি আমায় জীবিত পাবে না.. ক্ষণিকের মাঝে তুমি সবকিছু হারিয়ে ফেলবে.. সব। তখন হাজার কাঁদলেও আমি আর ফিরবো না দ্যুতি।
বুকের ভেতরটায় অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করলো দ্যুতি। বিছানার চাদর খামচে ধরে চোখজোড়া বুজলো সে।
-আমি তোমায় ভালোবাসি দ্যুতি.. আমার ভালোবাসার কসম দিয়ে তোমায় বলছি তুমি যাও। যাবে না তুমি?
ঝরঝর করে কেঁদে ঘাড় নাড়াতেই উঠে দাঁড়ালো সারজিম। দ্যুতির চোখের পানি মুছে তার কপালে চুমু দিয়ে বললো,
-দ্যাটস মাই গার্ল! হাসান ভাই অপেক্ষা করছে.. তুমি যাও।

    -চলবে

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Where stories live. Discover now