#৪৭

349 14 0
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৪৭

বাড়িটি দোতালা.. সবুজ রঙের। সামনে ঢালু রাস্তার কোণায় লাগিয়ে রাখা দু'টো আমগাছ। গাছের দিকে নীরবে খানিকক্ষণ তাকিয়ে বসে রইলো ইশতিয়াক। গাড়িতে বসে অপেক্ষা করতে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। বুকের ভেতরটায় দড়াম দড়াম আওয়াজে ডেকে যাচ্ছে দ্যুতির নাম। মেয়েটি ঠিক আছে তো?

ফরিদপুরে আসা ফোর্সের সাথে দ্যুতির সন্ধানে ইশতিয়াক এলেও দোতালা সেই বাড়ি থেকে মিললো না তার সন্ধান। পরিবর্তে পাওয়া গেলো বয়স্ক এক লোককে। নাম তার সুরুজ মিঞা। কাজ করে পৌরসভা অফিসে। রোজ ভোরে রাস্তা পরিষ্কারের পর সে বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে বেড়ায়। কিছুদিন আগে সারজিমের কথায় এবাড়িতে কাজ শুরু করেছেন। ভাত-তরকারী রান্না, কাপড়চোপড় ধোয়াসহ বাড়ির প্রায় সব কাজই তিনি করেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে তুলে নিয়ে আসা হলো ফরিদপুর থেকে।

ইশতিয়াকের অস্থিরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে দেখে তার দিকে একগ্লাস পানি এগিয়ে দিলেন রেজাউল করিম। তবে সেদিকে নজর না দিয়ে ইশতিয়াক বললো,
-আপনারা এত কাচা প্ল্যান কেনো করলেন! এখন তো ও আরও সাবধান হয়ে যাবে।
-তা ঠিকাছে.. তবে ঠিক কিভাবে উনি বিষয়টিতে অবগত হলো তা বেশ ভাবাচ্ছে আমায়.. এখন মনে হচ্ছে উনি গভীর জলের মাছ। বেশ প্ল্যান প্লট সাজিয়েই মাঠে নেমেছে..
-সেটা আপনার এখন মনে হচ্ছে? আগের পুরো ঘটনা শুনে মনে হয়নি?
-একদম না.. অতীত ঘেটে বলদা ছাড়া দ্বিতীয় কিছু আমার লেগেছিল না। সাথে বদ্ধ উন্মাদও লেগেছিল। আমার কী মনে হচ্ছে জানেন? মনে হচ্ছে উনার ব্যাকআপ আছে৷ যার মাধ্যমেই উনি জানতে পেরেছে আমরা তাকে জাল ফেলে টোপ গেলাতে চাইছি.. চলুন। দেখি কথা বলে আসি সুরুজ মিঞার সাথে।

ভয়ে হাত-পা কাঁপছিল সুরুজ মিঞার। ওসি সাহেবকে ঢুকতে দেখেই তা পৌঁছে গেলো সপ্তমে। কাঁপা গলায় তিনি বললেন,
-স্যার, আমি কিছু জানি না। বিশ্বাস করেন..
কপাল কোঁচকালেন রেজাউল করিম।
-তোমাকে কি আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি?
আতঙ্কে জড়োসড়ো হয়ে সুরুজ মিঞা বললেন,
-না..
-তবে এটি কিসের উত্তর ছিল?
-স্যার, সত্যিই আমি কিছু জানি না। কাল রাত্তিরে উনি আমারে তাড়াতাড়ি যাইতে বললো। সকালেও আইসা ত্রিশ মিনিট বেল বাজাইয়া বাজাইয়া ফিরা গেছিলাম.. গেইট খুলে নাই। তাই ডুব দিয়া আবার যখন বাড়িতে গেছি তখনই পুলিশ হাজির.. আমি তো বাড়ির বাইরেই আছিলাম স্যার.. জিজ্ঞাস করেন উনাদের।
-বিশ্বাস করলাম.. এখন একটি প্রশ্নের উত্তর দাও তো.. সারজিম সাহেবের সাথে ওখানে আর কে কে ছিল?
-উনি একাই ছিলেন..
-চা-পানি দিয়ে ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করছি.. ক্যালানি খেতে চাইলে তাও দেয়া যাবে। তা তুমি কোনটা চাও?
ঢোক চেপে মাথা নিচু করলো সুরুজ মিঞা। ক্ষীণ স্বরে বললেন,
-উনার সাথে একটা মাইয়া ছিল। রুমে সবসময় আটকাই রাখতো। হাতেপায়ে দড়ি দিয়ে বাইন্ধা.. খাইতে দিত না.. মাইয়াটা চিৎকার করে কাঁনতো।
এরইমাঝে একজন কনস্টেবল এলেন রিপোর্ট নিয়ে। তা রেজাউল করিমের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
-স্যার, পড়ে থাকা সিরিঞ্জে ড্রাগস ছিল..
ইশারায় কনস্টেবলকে বেড়িয়ে যাবার আদেশ করে সুরুজ মিঞার দিকে তাকালেন রেজাউল করিম। দাঁতে দাঁত চেপে ধারালো গলায় বললেন,
-মেয়েটিকে ড্রাগস দিত?
-আমি জানি না স্যার।
-তোমার হাড্ডি-গুড্ডি একটাও আমান থাকবে না সুরুজ মিঞা.. একদম মার্ডার কেসে ভিতরে ঢুকিয়ে দিব।
উঠে দাঁড়িয়ে রেজাউল করিমের পা ধরে কেঁদে ফেললেন সুরুজ মিঞা।
-সত্যিই আমি জানি না স্যার। আমি মূর্খ মানুষ। টাকা দিছিলো বইলা কাজ করছি। আল্লাহর কসম স্যার.. আমি কিছুই জানি না।
ফোনের রিংটোন বেজে উঠায় কথোপকথনের মাঝ থেকে উঠে পড়লো ইশতিয়াক। কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে ফোন রিসিভ করে ধীর গলায় বললো,
-বলো..
ওপাশ থেকে লিলি বেগম বললেন,
-তুই নকি ঢাকায় গেছিস?
-হ্যাঁ.. এসেছি।
-আমাদের বলে যাবি না? ইশরাকের কাছ থেকে শোনা লাগতেছে এখন..
-কিছু দরকার?
-না.. তুই হঠাৎ ঢাকায় কেনো?
-দ্যুতির জন্য..
মাথায় রক্ত উঠে গেলো লিলি বেগমের। ক্ষিপ্ত গলায় তিনি বললেন,
-তুই এইখানে মৌমিরে বসাই রাইখা দ্যুতিরে খুঁজতে গেছোস? তোর কপালে পাঁচ লাথি। তুই তাড়াতাড়ি ফিরে আয়।
-সময় হলে ফিরবো।
-তুই ফিরবি না? এদিকে মৌমি অস্থির হয়ে যাচ্ছে তোর জন্য। আর তুই কিনা এমন লক্ষী এক মেয়েকে রেখে ওই বাজারী মেয়েরে খুঁজতে বের হইছিস? যে তোর জন্য না বরং তোরে অস্থির কর‍তেছে? কসম লাগে আমার তুই চলে আয়।
অস্থিরতার সাথে ইশতিয়াক বললো,
-তুমি কেনো বুঝতে পারছো না ফুপু! দ্যুতি ভালো নেই। মেয়েটির উপর কী পরিমাণ অত্যাচার চলছে তা যদি তুমি বুঝতে একথা বলতে পারতে না..
-ওই মেয়ের পাছায় লাথি। শোন, আজ রাতের মধ্যে তুই ওই মেয়েকে খোঁজা বন্ধ করে রাজশাহী না এলে আমার মরা মুখ দেখবি। শুনেছিস কী বলেছি? মরা মুখ... মরা মুখ।

   -চলবে

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Donde viven las historias. Descúbrelo ahora