#৪৮

360 13 1
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৪৮

লিলি বেগমের হুমকি ধামকি চলার পরও তিনদিন ঢাকায় থাকার পর রাজশাহী ফেরার সিদ্ধান্ত নিল ইশতিয়াক। এখানে থেকে তার কোনো লাভ হচ্ছে না। না কোনো খোঁজখবর মিলছে দ্যুতির। প্রথম দিন যেভাবে রেজাউল করিম কেইসকে নিয়ে সিরিয়াস ছিলেন, দিন বাড়ার সাথেসাথে তাও কমছে। কেমন যেনো মিইয়ে পড়েছেন তিনি।

আজ সকালেই একবার থানায় গিয়েছিল ইশতিয়াক। রেজাউল করিমের সাথে দেখা কর‍তে চাওয়ায় তাকে চা-বিস্কুট দিয়ে ঘন্টাখানেক বসিয়ে রেখেছিলেন। শেষে পাঁচমিনিটের জন্য এলেও বলেছিলেন, আমরা আমাদের মতো চেষ্টা চালাচ্ছি.. আসলে তেমন কোনো ক্লু রাখেনি বুঝেছেন? সারজিম সাহেব সতর্ক হয়ে গেছে। সময় লাগবে.. আপনি বরং রাজশাহী ফিরে যান। কী হয় না হয় আমি জানাবো। উত্তর শুনে কপাল কুঁচকে গিয়েছিল ইশতিয়াকের। হতাশ মনে ভেবেছিল, কী এমন হলো একদিনের ব্যবধানে? তবে কি সারজিম তার পাওয়ার কাজে লাগাচ্ছে?

দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দশতলা বিল্ডিংয়ের দিকে পা বাড়ালো ইশতিয়াক। তার বাড়ি থেকে প্রচুর চাপ দিচ্ছে সকলে রাজশাহীতে ফিরে যাবার জন্য। এসব খোঁজাখুঁজি বন্ধ করে নিজের কাজে মন দেবার জন্য। মৌমির জন্য হলেও এসব নিয়ে পড়ে না থাকার জন্য। তবে কেনো এত কথা আসছে তার নিজের নেয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে? সে দ্যুতির জন্য এসেছে.. যা একান্তই তার নিজের সিদ্ধান্ত। তবে কেনো তার সিদ্ধান্ত নিয়ে এত সকলের দুঃশ্চিতা? তার মা বেচে থাকলে তিনিও কি একই কাজ করতেন? নাকি তার কাধে হাত রেখে বলতেন, তুই যা ইশতি। দ্যুতিকে না নিয়ে একা বাড়ি ফিরিস না।
-আপনি?
সামিহার কথায় চিন্তার অবসান ঘটিয়ে ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেললো ইশতিয়াক। ম্লান হেসে বললো,
-রাজশাহী চলে যাচ্ছি.. ভাবলাম একবার দেখা করেই যাই।
আমি বাসায় একা। আম্মা এখন বাসায় নেই। আপনি আসতে পারেন.. কথাগুলো মুখে এলেও তা বললো না সামিহা। একদন্ড ভেবে দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়িয়ে ড্রইংরুমের দিকে পা বাড়ালো সে।

-সারজিম যে ম্যারিড সেটা আমার জানা ছিল না। অবশ্য জানবোই বা কিভাবে! দ্যুতিকে না আমি কখনো বোঝার চেষ্টা করেছি আর না দ্যুতি কখনো আমায় সেইফ ফিল করে নিজে থেকে কিছু জানিয়েছে। বিয়ের পর ভাবতাম এসব জিজ্ঞেস করে কেনো ওকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলবো? তবে যখন হাসান নামের লোকটি এলো, সব কেমন যেনো এলোমেলো হয়ে গেল।
মনোযোগী শ্রোতা বেশে ইশতিয়াকের কথাগুলো শুনে সামিহা বললো,
-হাসান কে? আর কী হয়েছিল তিনি আসার পর?
খানিকটা অবাক হলো ইশতিয়াক।
-হাসানকে চেনেন না?
-না.. আমার চেনার কথা ছিল নাকি?
-অবশ্যই ছিল.. আপনার হাজবেন্ড যাকে মই বানিয়ে উপরে উঠতে চেয়েছিল একসময় আপনি তাকেই চেনেন না ভেবে একটু অবাক হলাম।
ভ্রু কোঁচকালো সামিহা।
-আমি ঠিক বুঝলাম না..
-বুঝলেন না? নাকি বোঝার চেষ্টা করতে চাইছেন না? আপনি সারজিমের ওয়াইফ। আপনি থাকতে উনি কেনো এমন একটি কাজ করলো তা আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন?
-আমি কি উনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ কেউ? যে আমি থাকলেই উনি এমন কাজ করবেন না?
-অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একজন.. সকল স্ত্রীই তার স্বামীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ।
-সবার কথা জানি না। তবে আমি যদি তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ হতামই, তাহলে অবশ্যই উনি আমায় ডিভোর্স দেবার কথা ভাবতেন না!
উদ্বিগ্ন হয়ে কপাল কোঁচকালো ইশতিয়াক।
-আপনারা ডিভোর্স হচ্ছেন?
-আমি চাই না.. তবে উনি চায়। উনি চাইবেন বা না কেনো? সারাদিন মুখে দ্যুতি আর দ্যুতি! আর জীবনে সামিহা.. কিছু হলো? হিসেবেই তো গরমিল!
-তবে বিয়ে কেনো করেছিলেন?
ভাবুক হয়ে শূন্য দৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকালো সামিহা। সুপ্ত গলায় বললো,
-এই কেনোর উত্তর আজও আমি খুঁজে পাই নি.. জানেন, লোকটির জন্য আমি আমার জীবনটাও অনায়াসে দিয়ে দিতে পারি?
-খুব কঠিন একটা কথা বলে ফেললেন! অবশ্য আপনার বয়সটাই এমন।
-বয়সকে দোষ দেব না। দোষ আমার মনের.. কখনো ভালোবাসা পাইনি লোকটির কাছ থেকে। তবুও ঘুরেফিরে তাকেই মন দিয়ে বসে আছি। দোষ তাহলে মনের না?
-হবে হয়তো! আচ্ছা.. আপনাদের সম্পর্কটা ঠিক কেমন? খুব বেশি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে ফেললেও প্রশ্নটির উত্তর কি সামান্য রাখঢাক করে দেয়া যাবে?
ঘাড় নেড়ে সামিহা সহজ গলায় বললো,
-আমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই.. বিয়ের পর উনি রিহ্যাবে গেলেন। আমি এখানে পড়ে রইলাম। তবে ততদিনে লোকটি আমায় এমন কিছু সুখের রাজ্যে নিয়ে গিয়েছিলেন, যা চাইলেও আমি ভুলতে পারিনি। প্রতিটি ওয়াক্তের নামায শেষে মোনাজাতে আমি শুধু চেয়েছি আল্লাহ উনাকে সুস্থ করে দিক। উনি ভালো থাকুক। অথচ দেখুন.. আজ উনি ভালো নেই।
-আপনি এমন স্বভাবের একটি মানুষকে এতটা ভালোবাসতে পারলেন? সত্যিই আমি অবাক হচ্ছি আপনাকে দেখে।
ম্লান হাসলো সামিহা। বললো,
-উনি যেমনই হোক.. মানুষ হিসেবে খারাপ নয়। হয়তো উনার ভেতরে পাগলামি আছে.. প্রথম প্রেম। ভোলাটা কিন্তু সহজও নয়।
-যে তার নিজের স্ত্রীকে অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করে তাকে সিঁড়ি বানিয়ে সভাপতি হবার স্বপ্ন দেখে, সে আর যাইহোক ভালো মানুষ নয়। অন্তত আমার মতে..
মুখের হাসি নিমেষেই মিলিয়ে গেল সামিহার। কুঁচকানো মুখ নিয়ে সে বললো,
-মানে?
-এভাবে চমকালেন যেনো আপনি কিছুই জানেন না! নাকি আগের মতো এবারও জেনেও না জানার ভান করছেন?
-আপনি কিসের কথা বলছেন? একটু পরিষ্কার করে বলবেন?
-আপনি সত্যিই কিছু জানেন না?
-না..
মেয়েটির বয়স অল্প। কথাবার্তা পরিষ্কার হলেও চলাফেরায় গ্রাম্যভাব স্পষ্ট। তবে কি সারজিম গ্রামের একটি সহজসরল মেয়ের কাছ থেকে সব কিছু লুকিয়ে গেছে? নয়তো কোন মেয়ের বাবা এমন ছেলের হাতের তার মেয়েকে তুলে দেবেন? একমুহূর্ত ভাবলো ইশতিয়াক৷ তারপর সিদ্ধান্ত নিল সামিহাকে সবটা খুলে বলার।

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Where stories live. Discover now