#৪

620 23 1
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৪

দিলরুবা খন্দকারের কুরআন তেলওয়াতের সুর কানে এলেও তা উপেক্ষা করে দ্যুতির পিছুপিছু বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো ইশতিয়াক। নীরবে তালে তাল মিলিয়ে চললো দ্যুতির। ওদের বাড়িতে কিছু একটা হয়েছে এটি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। কেউ একজন প্রচুর চিৎকার চেঁচামেচি করছিল নষ্টা মেয়েছেলে বলে। কিন্তু কে করছিল এসব গালিগালাজ? আর কাকেই বা করছিল? হটাৎ দ্যুতিকে ছোটমোটো একটি চায়ের দোকানে ঢুকে পড়তে দেখে ভ্রু কোঁচকালো ইশতিয়াক। চলন্ত পাজোড়া থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো দোকানের সামনে..
-আসুন..
ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও দ্যুতির ডাকে ভেতরে ঢুকলো ইশতিয়াক। ভ্রুজোড়া স্বাভাবিক করে বললো,
-এখানে কেনো?
-নাস্তা সারবার জন্য.. কী খাবেন বলুন?
হতভম্ব হয়ে ইশতিয়াক বললো,
-এখানে খাবো?
-হ্যাঁ.. খাবেন। সমস্যা আছে কি?
-না.. তবে জায়গাটা অনেক আনহাইজেনিক!
ইশতিয়াকের কথা আমলে না নিয়ে চারটে পরোটা এবং দু'বাটি ডাল অর্ডার করে টেবিলের উপর হাতের কনুই ঠেকালো দ্যুতি। নিজের দু'গালে হাত রেখে বললো,
-দুটো পরোটায় হয় তো?
-হুম..
-আসলে আমাদের বাড়িটা স্বাভাবিক আর দশটা বাড়ির মতো নয়। সকালে উঠেই আমাদের বাড়িতে একরকম যুদ্ধ লেগে যায়। কখনো মার সঙ্গে বাবার কখনোবা ছোটভাবির সঙ্গে মার আবার কখনো আমার সঙ্গে তাদের..
খানিকটা স্বাভাবিক হলো ইশতিয়াক। কাঠের ভাঙ্গা চেয়ারে আরাম করে বসলো। তারপর মনোযোগী শ্রোতা বেশে দ্যুতির দিকে চেয়ে বললো,
-সব বাড়িতেই এমন হালকা দ্বন্দ্ব হয়..
-আমাদের বাড়িরটা হালকা ভেবে ভুল করবেন না৷ আমাদের টা ভারী.. প্রচুর ভারী। মাঝেমাঝে মানসিক অশান্তি হয়। আপনি দু'দিন আমাদের বাড়িতে দিন কাটালে পাগল হয়ে যাবেন তার গ্যারান্টি আমি দিচ্ছি।
থামলো দ্যুতি। ঘুরে পিছন ফিরে দোকানদারকে তাড়া দিয়ে আবারও বললো,
-এখন ভাবছেন আপনি কোথায় এসে পড়লেন.. তাই না?
চমকে উঠলো ইশতিয়াক। মনের কথা শোনার মতো কোনো মেশিন আছে কি দ্যুতির কাছে?
-আমি যখন সারজিমদের বাড়িতে ছিলাম তখন মনে হতো যাক! প্রতিদিনের এসব ঝগড়াঝাটি থেকে তো মুক্তি পেয়েছি..
প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে ইশতিয়াক বললো,
-সারজিম?
হাসলো দ্যুতি।
-সারজিম.. আমার এক্স হাজবেন্ড। সুন্দর না নামটা?
বুকের ভেতরটায় টিপটিপ করে উঠলো ইশতিয়াকের। এই তাহলে সেই ব্যক্তি, যে দ্যুতির মতো একটি মেয়ের সঙ্গ পেয়েও তা ধরে রাখতে পারেনি? কিন্তু কেনো? কি এমন কারণ ছিল যে সে নিজেকে দ্যুতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি?
-এইতো... চলে এসেছে পরোটা। নিন.. এবার খেয়ে রিভিউ দিন এই আনহাইজেনিক পরোটার। তবে আমার মতে ঢাকায় রহিম মামার দোকানের পর যদি কোথাকার পরোটা অমৃত হয়ে থাকে সেটি এই দোকানের। রাজশাহীতে আসার পর থেকে প্রায় সকালের নাস্তাই আমি এখান থেকে সেরেছি। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না.. কেউ যদি আমায় একপাশে এক প্যাকেট বিরিয়ানি আর অন্যপাশে এই দুটো দোকানের ডাল পরোটা দেয়, তাহলে আমি নিঃসন্দেহে বেছে নিব এদের।
-তাই?
-হ্যাঁ.. বললেন না তো কেমন লাগলো?
-ভালোই...
দ্যুতির কথায় পরোটা মুখে পুড়লেও তা গিলতে পারছিল না ইশতিয়াক। তাই পরোটা এবং ডালের কথা দ্রুত শেষ করতেই কথা ঘোরালো সে।
-আপনি তো ফোন ইউজ করেন না.. তো আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে কিভাবে করবো?
-বাবার নাম্বারে কল দিলেই হবে। তবে বিকেলের পর। আমার বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিকেল গড়িয়ে যায়।
-কোথায় থাকেন সারাদিন?
-নিউমার্কেট..
-ওখানে সারাদিন কেনো?
-ওমা! বাবা তাহলে এটাও বলেনি আমি ওখানের শতরুপা নামের একটি বিউটি পার্লারে কাজ করি?
মুখটা ছোট হয়ে এল ইশতিয়াকের। দ্যুতি বিউটি পার্লারে কাজ করে? লোকমুখে সে শুনেছে বিউটি পার্লারের মেয়েগুলোর চরিত্র ভালো হয় না। তবে সে যতোটুকু দেখেছে দ্যুতিকে তাতে দ্যুতি ওমন মেয়ে নয়। তবে লোকজনের মুখ তো আটকে রাখা যাবেনা। তাহলে কি দ্যুতিকে বিউটি পার্লারের কাজ ছেড়ে দিতে বলবে সে? নিষেধ করতে গিয়েও সিদ্ধান্ত পালটে ফেললো ইশতিয়াক। একরাতে সে অনেকটা বুঝছে দ্যুতিকে.. তার ধারণা ভুল না হলে দ্যুতি নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে.. অপর কেউ তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সে অবশ্যই তা ভালোচোখে নেয় না..

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Where stories live. Discover now