#৬৫

384 16 2
                                    

#আকাশ_পাঠাবো_তোমার_মনের_আকাশে
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৬৫

বেলা বেড়ে দুপুরে গড়িয়েছে। কড়া রোদ এসে পড়ছে ব্যালকনির এক কোণায়। খানিকক্ষণ সেই রোদে দাঁড়িয়ে শরীরে ঘাম ঝরালো সামিহা। তারপর ঘামে কর্দমাক্ত শরীরে ঢুকলো বাথরুমে। ওড়না খুলে শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়ালো তার নিচে। খানিকক্ষণ আগেই সারজিম বেরিয়েছে। তবে বেরুনোর আগে তাকে শরণাপন্ন করিয়েছে তীক্ত সেই মুহুর্তর! যাতে শরীরের প্রতিটি শিরায় শিরায় ঢেউ উঠে না.. দোলা দেয় না মনের মনিকোঠায়।

দীর্ঘ সময় নিয়ে গোসল সেরে বহ্নিকে নিতে মহিমা বেগমের ঘরে এল সামিহা। ভেজা কাপড়গুলো একহাতে রেখে সুপ্ত গলায় বললো,
-আম্মা ওকে দিন।
একনজর সামিহার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে আবারও বহ্নির দিকে দিলেন মহিমা বেগম। বিরক্ত সুরে বললেন,
-তুমি ছাদে যাচ্ছো যাও। ওর কী কাজ ওখানে?
-ওর শরীরে একটু রোদ বাতাস শরীরে লাগিয়ে আনি। আমার দাদী বলতো বাচ্চাদের শরীরে হাওয়া-বাতাস লাগলে তার শরীর স্বাস্থ্য ভালো হয়।
-এসব করে করেই তো তোমার এই হাল! বহ্নি থাক। তুমি যাও.. ওর গায়ে রোদ লাগানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
হতাশ হয়ে ভেজা কাপড় হাতে সামিহা সদর দরজার দিকে এগুতেই পেছন থেকে তাকে ডেকে উঠলেন মহিমা বেগম। বহ্নিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পা মেলে বসে নরম গলায় বললেন,
-স্পর্শার জন্য আজ পায়েস রেধে দিও তো। তোমার হাতের পায়েস ও খেতে চেয়েছে। আজ আমি যাবার সময় নিয়ে যাবো।
থেমে দাঁড়িয়ে ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেললো সামিহা। পাশ ফিরে বললো,
-আচ্ছা.. ও আসবে কবে?
-দেখি.. সবুর তো মাত্র ক'দিন হলো দেশে এসেছে। তাই ভাবলাম থাকুক কয়েকটা দিন।
-সবুর ভাই ওকে পছন্দ করেছে?
-তা কী করে বলি! তবে অপছন্দেরও কারণ নেই। একটাই মেয়ে আমার। ওর বাবার যা আছে সব তো ওরই.. তাই না? তাছাড়া ভাইয়ের মাথায় কথাখানা ঢুকিয়ে দিয়ে এসেছি। এবার সিদ্ধান্তটা না হয় উনারাই নিক।
আর কথা না বাড়িয়ে সামিহা এগুলো ছাদের উদ্দেশ্যে। মাত্র বলা মহিমা বেগমের কথাগুলো ভাবাচ্ছে তাকে। সব স্পর্শার বলতে কী বোঝাতে চাইলেন তিনি? তবে কি নিজের রক্তের ছেলে নয় বলে সারজিমের জন্য উনার বাবা কিছু রেখে যাননি? অবশ্য কোন ভরসায়ই বা রেখে যেত? লোকটির সাথে কি কখনো ভালো ব্যবহার করেছে সারজিম? সারজিমের নিজের মায়ের বিবরণ মতেই লোকটির মৃত্যুর সময়ও সারজিম দেখতে যায়নি তাকে। জানাজায় শরীক হয়নি। করেনি তার জন্য কোনো অনুতাপ! এত ঘৃণা জমা ছিল লোকটির জন্য সারজিমের অন্তরে?

আকাশ পাঠাবো তোমার মনের আকাশে Where stories live. Discover now