নগদ যা পাই পর্ব ৩

3.2K 11 2
                                    

ভেবেছিলাম, গোসল করে ফিরেই শুয়ে পড়বে প্রজ্ঞা। জার্নি করা শরীর হয়তো ক্লান্ত। কিন্তু প্রজ্ঞা চলে গেল ড্রেসিং এর সামনে! হ্যান্ডব্যাগ থেকে এক এক করে সাজার উপকরণ বেড় করে যখন ভরিয়ে ফেলল ড্রেসিং টেবল, তখন আমার চক্ষু চড়কগাছ! এতকিছু ঢুকেছে কী করে ঐ ছোট্ট ব্...

Oops! This image does not follow our content guidelines. To continue publishing, please remove it or upload a different image.

ভেবেছিলাম, গোসল করে ফিরেই শুয়ে পড়বে প্রজ্ঞা। জার্নি করা শরীর হয়তো ক্লান্ত। কিন্তু প্রজ্ঞা চলে গেল ড্রেসিং এর সামনে! হ্যান্ডব্যাগ থেকে এক এক করে সাজার উপকরণ বেড় করে যখন ভরিয়ে ফেলল ড্রেসিং টেবল, তখন আমার চক্ষু চড়কগাছ! এতকিছু ঢুকেছে কী করে ঐ ছোট্ট ব্যাগে!
প্রজ্ঞা প্রথমে মুখে ক্রিম দিল সময় নিয়ে, তারপর লিপজেল দিল ঠোঁটে। আমি তাকিয়ে আছি দেখে, মুখ না ফিরিয়ে, আয়নাকেই বলল, "কী দেখছো? এখনো ঘুমাচ্ছো না যে?"
"তোমার রুপচর্চা দেখছি!", বললাম আমি। "ভাবলাম, কুয়াকাটায় চেক ইন দিয়ে ঘুমাব! ফেসবুকে ঢুকে এখন ঘুমই ধরছে না!"
প্রজ্ঞা কিছু না বলে আয়নায় মগ্ন হয়ে নিজের মুখটা দেখতে লাগল। বললাম, "এতো মনোযোগ দিয়ে দেখতে হবে না। ভালোই দেখাচ্ছে!"
প্রজ্ঞা আমার দিকে এবার ফিরে বলল, "আমি দেখছি তো তোমার কী? আমি আমার মুখ দেখছি। তোমার কী?"
"কিছুই না!"
হাতে পায়েও লোশন দিল প্রজ্ঞা। পায়ে লোশন দেয়ার সময় প্যান্টটা হাঁটু পর্যন্ত তুলল ও। নির্লোম নরম শুভ্র পা। ও পায়ে লোশন মাখল একটু বেশিই তাড়াতাড়ি।
তারপর বিছানায় লেপের নিচে এসে ঢুকল। বললাম, "প্রতিবার ঘুমানোর সময় এসব করো? এই মাখামাখি?"
প্রজ্ঞা বলল, "করি। স্কিন ভালো থাকে এতে!"
বললাম, "আমি তো কিছুই মাখি না। কৈ, আমার তো চর্ম রোগ হয়নি!"
প্রজ্ঞা বলল, "কোন কথা না আর। ঘুমাও!"
আমিও মুখে কুলুপ এঁটে শুয়ে পড়লাম। ইয়ারফোনে গান শোনা যায়। কিন্তু শুয়ে চোখ বন্ধ করার সাথে সাথেই মনে হলো, দেহটা দুলছে। লঞ্চে দুলুনির একটা ভাব এসেছিল, সেই ভাবটা এখনো যায়নি। চোখ বন্ধ করলে, এখনো মনে হচ্ছে, দুলছি!
হঠাত শুনতে পেলাম, "আঃ আঃ আঃ আঃ আঃ..."
চোখ খুলে গেল আমার। দেখলাম প্রজ্ঞাও চোখ মেলে আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়েছে! শব্দটা আসছে, উদ্ভব আর স্নিগ্ধার রুম থেকে। আবার লাগিয়েছে শালারা!
প্রজ্ঞা হেসে বলল, "লঞ্চেও এদের জন্য বাইরে যেতে হয়েছে। এখন বোধহয় ঘুমাতেও দেবে না! আর এত জোরে শব্দ না করলেও তো পারে। বাকিরা কী ভাববে, আমরা না হয় ওর বন্ধু!"
লোকে কী ভাববে, এ চিন্তা স্নিগ্ধা কোনদিন করেনি। যা ইচ্ছে হয় করে ও। প্রজ্ঞাকে দেখলাম, মোবাইল বের করে কানে লাগিয়েছে। কাকে ফোন দিচ্ছে জিজ্ঞেস কর‍তে ইচ্ছে হলো। কিন্তু প্রশ্নটা ভদ্রতার মধ্যে পড়ে না। তবে আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করতেই। স্নিগ্ধাকেই ফোন দিয়েছে ও। আমি স্পষ্ট শুনলাম, ওর জোর নিঃশ্বাসের শব্দ।
প্রজ্ঞা বেশ ঝাঁঝের সাথে বলল, "তুই একটু আস্তে চ্যাচাবি?"
ওপাশ থেকে সিগ্ধা বলল, "তোরা শুনতে পাচ্ছিস নাকি?"
প্রজ্ঞা বলল, "না তো কী?"
স্নিগ্ধা বলল, "আচ্ছা আস্তে করছি। ফোন রাখ। চোদার মাঝখানে ফোন দিয়েছিস!"
প্রজ্ঞা ফোন কেটে দিল। কিছুক্ষণ চুপচাপ। তারপর আবার স্নিগ্ধার "আঃ আঃ আঃ আঃ", যেন বিদেশী পর্ন চালিয়ে দিয়েছে কেউ সাউন্ড বক্সে!
আমার ভালোই লাগছে। স্নিগ্ধার শিৎকার শুনে গরম হচ্ছে আমার বাড়া বাবাজী, সাধু সন্ন্যাসী পর্যায়ের মানুষ না হলে, এমন পরিস্থিতিতে বাড়া গরম হবেই। এখন একবার ওয়াশরুম থেকে ঘুরে আসা যায়। কিন্তু ওয়াশরুমে গেলেই, প্রজ্ঞা বুঝে যাবে, আমি হাত মারতে গেছি! সুতরাং বাড়া চিপে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করা ছাড়া উপায় নেই।
কখন ঘুমিয়েছি, কখন স্নিগ্ধারা চোদনপর্ব থামিয়েছে, কিছুই জানি না। ঘুম থেকে উঠলাম যখন, তখন বেলা গড়িয়ে গেছে। ঘড়ির কাটায় তিনটা। প্রজ্ঞাও নেই আমার পাশে। ও বাইরে যাওয়ার জন্য একদম প্রস্তত!
উঠে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে বাইরে আসতেই স্নিগ্ধা বলল, "শালা, এখনো রেডি হোসনি? তিনতিন বার চুদে ঘুমিয়েছি, তারপরও ওমন মহিষের মতো ঘুমাইনি!"
প্রজ্ঞা বলল, "আসলেই মহিষের মতো ঘুমায়। এতো নাক ডাকে। আর তো ওর নাক ডাকার শব্দেই ঘুম ভেঙ্গে গেছে!"
আমি লজ্জা পেয়ে বললাম, "উদ্ভব কৈ? ও উঠেছে?"
স্নিগ্ধা বলল, "ও নিচে বসে আছে রিসেপশনে। তুই তাড়াতাড়ি জামা কাপড় পরে নে!"
রেডি হতে আমার সময় লাগে না কোনদিনই। সমুদ্র সৈকতে নাকি হাওয়াই শার্ট পরে সবাই। শুনেছি। কিন্তু ওমন হাফহাতা শার্টই আমার নেই। আর সময়টাও শীতকাল। আমি মোটামুটি গরম একটা কাপড় পরে, দরজায় তালা মেরে রিসেপশনে চলে গেলাম। ওখানেই অপেক্ষা করছিল ওরা!
হোটেল থেকে হাঁটা পথেই সৈকত। সমুদ্র দেখেই প্রজ্ঞার সে কী বিস্ময়! "এত্ত বিশাল!"
উদ্ভব বিজ্ঞের মতো বলল, "পৃথিবীর তিন ভাগ পানি। এত বিশাল তো হবেই!"
আমারও প্রথম সমুদ্র দর্শন। কিন্তু এমন কিছু আহামরি লাগল না। পানি আর দেখার কী হলো? আমার প্রচণ্ড বাতাসে দুলতে থাকা নারকেল গাছগুলোকে দেখতে ভালো লাগছে। আর ভাল লাগছে, দূরে দূরে ভাসতে থাকা জাহাজগুলো। ছোটবেলায় পুকুরে পাতার নৌকো ভাসিয়ে দিতাম আমরা। তখন পাতার সেই ছোট্ট নৌকোটাকেই ভেবে নিতাম জাহাজ। আমি সেই জাহাজের কাপ্তেন, যাচ্ছি অজানাকে জানতে- এমন রোম্যান্টিক শিশু কল্পনাও করতাম।
এখন বুঝে গেছি, জাহাজের কাপ্তেন হওয়া হবে না কোনদিন। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নিয়েছি, সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন চাকরি নিয়ে, বিয়ে থা করে, জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে কিছুটা সহায়তা করে, মৃত্যু বরণ করতে হবে আর দশটা নাম জানা না সাধারণ মানুষের মতো। শৈশবের স্বপ্ন গুলো স্বপ্ন হয়েই রয়!
এসব ভাবছি কেন? সমুদ্রের প্রভাবে বোধহয়। বড় সৌন্দর্য মানুষকে ভাবায়, নির্লিপ্ত হতে শেখায়, জন্যে হয়তো।
প্রজ্ঞা আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল, "কী ভাবছো? চল ভিজি! ঢেউ আসছে!"
বললাম, "পাগল হয়েছো? এই শীতে ভিজব?"
প্রজ্ঞার চুল উড়ছে হাওয়ায়, চোখে মুখে ঝাপিয়ে পড়ছে অবাধ্য ঢেউগুলোরই মতো। বলল, "শীত তো কী? ঐ দেখ একটা বুড়াও গা ভেজাচ্ছে!"
দেখলাম, স্নিগ্ধা আর উদ্ভব ঢেউয়ের পানিতে লাফালাফি করছে।
বললাম, "সাঁতার জানি না যে!"
প্রজ্ঞা বলল, "আমিও জানি না। মরব না চল। কত লোক ভিজছে দেখো। ওদের সবাই সাঁতার জানে ভেবেছো?"
আমার হাত টানতে লাগল প্রজ্ঞা! এমন সূর্যমুখীর মতো মেয়ে সমুদ্রস্নানে ডাকলে, কতক্ষণ নিশ্চল থাকা যায়?
প্রজ্ঞার সাথে সাথে সমুদ্র পানে ছুটতে লাগলাম আমিও। ঢেউ এসে ভেঙ্গে পড়ল আমাদের গায়ে। কী ঠাণ্ডা পানি! প্রজ্ঞার আবার চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছিল। আমিও ধরে ফেললাম ওর দু'হাত। আর পানি নিয়ে ছিটিয়ে দিলাম গায়ে।
"ও দ্রোহ, আমার পুরা গা ভিজিয়ে দিলে...আমি এখন হোটেলে ফিরব কী করে?", হঠাত করে সিরিয়াস হয়ে বলল প্রজ্ঞা। আজব চিরিয়া, আমাকে ভিজিয়ে দিল আর ওর গায়ে সামান্য পানি দিতেই, রেগে উনুন! হাত ছেড়ে দিলাম আমি।
হাত ছেড়ে দিতেই লাফিয়ে উঠে আমার দেহে ঝাঁপিয়ে পড়ল প্রজ্ঞা। হতচকিয়ে সামলে ওঠার আগেই পড়ে গেলাম পানিতে। খিলখিল করে হাসতে লাগলো প্রজ্ঞা। আমি ওঠার আগেই ছুটতে শুরু করেছে ও। আমিও ছাড়ার পাত্র নই। সামান্য ছুটতেই ধরে ফেললাম ওকে। দু হাতে জড়িয়ে ধরে, আবার নিয়ে এসে ফেললাম পানিতে। আমার মতোই পুরো শরীর ভিজে গেল ওর।
শীতে শরীর কাঁপছে দুজনারই। কিন্তু ও আমাকে পানি থেকে উঠতে দিচ্ছে না। আর স্রোতের সাথে লড়াই করার নেশায় পেয়ে বসেছে আমাদের। আমরা স্রোতে লাফাচ্ছি, ভেসে থাকার চেষ্টা করছি, পড়ে যাচ্ছি, বালি খাচ্ছি, মুখে ঢুকে যাচ্ছে নোনতা অপেয় জল।
প্রায় আধঘণ্টা লাফালাফি করার পর বুঝতে পারলাম, আমাদের শরীর কাঁপছে মাত্রাতিরিক্ত। কালো হয়ে গেছে প্রজ্ঞার ঠোঁট আর চোখ লাল। পানি থেকে উঠতে চাচ্ছিলো না প্রজ্ঞা। জোর করে সৈকতের বালকাবেলায় নিয়ে এলাম ওকে। ট্যুরে এসে জ্বর ধরালে, সবার আনন্দই মাটি হয়ে যাবে।
উদ্ভব আর স্নিগ্ধাকে কোথাও দেখলাম না। হয়তো ওরাও ভিজে চুপসে গিয়ে হোটেলে ফিরেছে।
জুতো হাতে নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে হোটেলের দিকে চললাম আমরা। লোকজন ভিজে কাকের মতো আলুথালু হয়ে যাওয়া আমাদের দেখছে। মধ্যবয়সী একটা কাপল আমাদের দুজনের দিকে এমন করে তাকাল, যেন মাদক বিক্রি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছি! ওদের হয়তো আমাদের বয়সের ছেলেমেয়ে। প্রজন্ম যে কতোটা বখে গেছেছে, তা নিয়ে হয়তো মিনিট পাঁচেক আলোচনা করবে ওরা!
প্রজ্ঞা বলল, "ইসসস... কী ঠাণ্ডা! জমে যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি চলো..."
অবস্থা আমারও একই, প্রায় দৌড়তে লাগলাম আমরা। কয়েক মিনিটেই পৌঁছে গেলাম হোটেলে।
ঘরের তালা খুলে ঘরে ঢুকেই জামা খুলতে শুরু করল ও। আমি যে আছি, সেদিকে ওর কোন নজরই নেই। প্রথমে গরম উলের সোয়েটারটা খুলে ফেলল ও। এই উল কবে শুকোবে কে জানে। তারপর কাঁপতে কাঁপতে খুলল ওর গেঞ্জি!
গেঞ্জিটা খুলতেই কালো ব্রা সমেত ওর সফেদ দেহ উন্মুক্ত হলো আমার সামনে। ওর পিঠে কয়েকটা কালো কালো তিল। উদ্ধত স্তনদুটো পুরো ঢাকতে পারেনি ব্রার বন্ধনি। বগলের কাছ দিয়ে বেড়িয়ে এসেছে একটা অংশ, গভীর ক্লিভেজও স্পষ্ট!
হঠাত আয়নায় আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল প্রজ্ঞা! গেঞ্জিটা তুলে বুকে নিয়ে ঝাঁজের সাথে বলল, "তুমি ওয়াশরুমে যাওনি! আমি এখানে চেঞ্জ করছি কেন! তোমার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকিনি!"
আমিও লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি গরম কাপড় নিয়ে ঢুকে গেলাম ওয়াশরুমে। ভাগ্যিস জ্যাকেট গায়ে বাইরে যাইনি!
ফ্রেস হয়ে বাইরে এসে দেখি ও টিভি চালিয়ে লেপের নিচে জুবুথুবু হয়ে আছে! আমি বললাম, "আমার কোন দোষ নেই কিন্তু! আমাকে ওয়াশরুমে ঢোকার সুযোগ দেয়ার আগেই চেঞ্জ কর‍তে শুরু করেছো তুমি! তোমার মতো সুন্দরী মেয়ে চেঞ্জ করছে, এটা না দেখে কোন পুরুষ কীভাবে সরে যাবে বলো?"
প্রজ্ঞা মুচকি হেসে বলল, "হয়েছে। আর সাফাই গাইতে হবে না!"
আমি বললাম, "তুমি কি এখন টিভি দেখবে নাকি? কেবল সাড়ে চারটা বাজে! সূর্যাস্ত দেখবে না?"
প্রজ্ঞা বলল, "না রে! ঠাণ্ডা লাগছে খুব!"
আমি লেপটা টেনে ওর দেহ থেকে সরিয়ে দিতে দিতে দিতে বললাম, "তোমার শুয়ে থাকা হবে না! আমি কি একাই ঘুরব নাকি!"
প্রজ্ঞা লেপটা ওর দিক থেকে টানতে বলল, "ইসস কী ঠাণ্ডা... একা একা ঘুরবে কেন? উদ্ভব আর স্নিগ্ধতা আছে তো!"
আমি বললাম, "ওরা নিজেরা নিজেরা কীসব বলবে, আমার ভালো লাগবে না। তুমি চলো!"
আমি জোরের সাথে টান দিলাম লেপটা। ওর দেহ থেকে চলে এলো আমার হাতে।
প্রজ্ঞা বলল, "ধ্যাত! আমার ভাল লাগছে না!"
বললাম, "সে জন্যই তো বেরুতে বলছি! বাইরে চলো, ভালো লাগবে!"
আমার আমার কাছে এসে লেপটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বলল, "তুমি যাও! আমি যাব না!"
আমার ইগোতে বেশ খানিকটা লাগল। এত করে বলছি, তাও যাচ্ছে না। আমার কী গরজ পড়েছে, ওকে সাধার!
ঘরের বাইরে এসে, জুতোর ফিতা বাঁধছি, প্রজ্ঞা ডাক দিল, "দ্রোহ...।"
আমি ওর দিকে ফিতে বাঁধতে বাঁধতেই তাকালাম। ও বলল, "থামো আমি আসছি!"
প্রজ্ঞা চট করে আরেকটা সোয়েটার গায়ে দিয়ে, পার্চটা পিছনের পকেটে নিয়ে বাইরে চলে এলো। বলল, "চলো। ঘরে আমারও একা একা ভাল লাগবে না!"
সৈকতে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। আবালবৃদ্ধবনিতা। চ্যাঁচামেচি, হুল্লোড়।
প্রজ্ঞা বলল, "চল নির্জন কোথাও গিয়ে বসি।"
বললাম, "কিছুই তো চিনি না। কীভাবে বুঝব কোন জায়গা নির্জন?"
"হাঁটি চলো। কোথাও না কোথাও পেয়ে যাবো!", বলল প্রজ্ঞা।
হাঁটতে লাগলাম আমরা এটা সেটা বলতে বলতে। তীরে প্রচুর দোকান, হোটেলের ভিড়। যেখানেই দর্শনার্থী, সেখানেই টাকা। মানুষও ঘুরতে এসে পকেটের দিকে তাকায় না। কামিয়ে নিচ্ছে শালারা।
দশ পনেরো মিনিট হাঁটতেই ভিড় কমতে শুরু করল। সামনে একদম ফাঁকা। আকাশছোঁয়া উঁচু নারকোল গাছ দুলছে হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে। কিছু দর্শনার্থী, আমাদেরই বয়সী, হাঁটছে ইতস্তত। হাওয়ার উড়ছে ওদের চুল।
সূর্যটা আস্তে আস্তে জলের নামছে যেন। বিশাল আগুনের গোলকটা জলে নেমেই নিভে যাবে, অন্ধকার নেমে আসবে আমাদের পৃথিবী জুড়ে।
প্রজ্ঞা বলল, "চল বসি!"
ঘাস খুঁজে বসলাম আমরা। আর সারাদিন ভালোই রোদ ছিল। ঘাস ভেজা নয়। প্রজ্ঞার মেঘের মতো উড়ন্ত চুল কাঁধে লাগছে আমার, অনুভব করছি। দুজনই চুপচাপ সূর্যের দিকে তাকিয়ে। কী উপমা দেব এই প্রকৃতির? এই উদাত্ত সৌন্দর্যের? কবির ভাষাও ফুরিয়ে যায় এখানে।
সূর্যকে চিত্রপটে রেখে উড়ে যাচ্ছে কয়েকটা পাখি? কী পাখি তুমি? নাম কী তোমার? শঙ্খচিল?
প্রজ্ঞা ফোনে পটপট করে ছবি তুলছে সবকিছুর। আমি দেখছি শুধুই। মনের পর্দায় তুলে রাখছি। অনেক ট্যুর দিয়ে এটুকু অন্তত বুঝেছি, এসব ছবি কোন কাজের নয়। এই অসাধারণ সূর্যাস্তের ছবি দেখে বোঝা যাবে না এর সৌন্দর্য, এর মহত্ত, এর শিক্ষা। তাই বর্তমানকে উপভোগ করাই শ্রেয়।
আমি বাঁধা দিলাম না তবু, প্রজ্ঞাকে। তুলুক। ছবি তুলে আনন্দ পায় যদি!
একসময় সত্যিই ডুবে গেলো সূর্যটা। আমাদের চোখের সামনেই। আর অন্ধকার জড়িয়ে ধরলো আমাদের। এখন হয়তো কৃষ্ণপক্ষ, চাঁদ উঠবে আরো দেরীতে।
প্রজ্ঞা বলল, "অবিশ্বাস্য!"
জিজ্ঞেস করলাম, "কী?"
"এই সূর্যাস্ত! এত সুন্দর!", বলল ও।
আমি চুপ করে রইলাম। উঠে দাঁড়াল প্রজ্ঞা। বলল, "আমাদের ফিরে যেতে হবে কেন? এখানেই থেকে যাওয়া যায় না!"
বললাম, "জেলেবৌ হবে?"
প্রজ্ঞা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "কেন?"
অন্ধকারে দেখতে পারছি না ওকে। শুধু ওর অবয়বটা ভাসছে চোখে। দূরের একটা নৌকাকে দেখিয়ে বললাম, "আমি একটা নৌকা কিনে জেলে হয়ে মাছ ধরব এখানে। এখানেই কাঁটিয়ে দেব সারাজীবন!"
প্রজ্ঞা বলল, "খুব ভাল হয় না? প্রতিদিন দেখতে পারব সূর্যাস্ত, সূর্যোদয়। এমন খোলা আকাশ। নদী?"
বললাম, "নদী?"
প্রজ্ঞা বলল, "আরে ধুর, নদী কেন বলছি! সাগর। আবেগে নদী বলে ফেলেছি!"
হাসতে লাগলাম আমি। অন্ধকার ঘনিয়ে এলো আরো। বহু দূরে দেখা যাচ্ছে সাগরতীরের বাজারটি। আলো, লোকজনের ভিড় আর কোলাহল। হোটেলগুলো আলোর পশরা সাজিয়ে অপেক্ষা করছে দর্শনার্থীদের।
প্রজ্ঞা বলল, "জেলে বৌ হওয়ার ক্ষেত্রে একটা সমস্যা আছে?"
বললাম, "কী?"
প্রজ্ঞা ম্রিয়মাণ গলায় বলল, "আমি বোধহয় আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ব্যাংকারের বৌ হয়ে যাচ্ছি!"
যাহ শালা! রোম্যান্টিক মুডে ছিলাম, উড়ছিলাম আকাশে, আকাশ থেকে টেনে মাটিতে এনে ফেলল! এর যে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।
ও বলল, "আমাকে বাবা মা একা কোথাও ছেড়ে দিত না জানো। আমার বন্ধুরা কতো জায়গায় ট্যুর দিয়েছে। বান্দরবন, কুষ্টিয়া, হাতিয়া, সেন্টমার্টিন, চিটাগং- আমি কোথাও যেতে পারিনি। এবারে জোর করে এসেছি। কিছুদিন পর তো বিয়েই হয়ে যাবে! ঘুরব কী করে?"
ছোট্ট বাচ্চার হাতে খেলনা নিয়ে কেড়ে নিলে যতোটা কষ্ট পায় সে, ঠিক তেমনই কষ্ট হচ্ছে আমার। এত সুন্দর মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাবে। তাও আমার সাথে না! সাথে সাথেই মনে হলো, পৃথিবীর সব সুন্দরী মেয়ের বিয়ে হয়ে যাবে, আমার সাথে হয়তো একজন থাকবে সারাজীবন! তাও যদি সুন্দরী বৌ কপালে জোটে!
একজনকে পেলাম, সাগরতীরে এলো ভরসা করে একসাথে, সেও বাগদত্তা। কপালই বটে। জীবনটা শরৎ চন্দ্রের উপন্যাস হলে ভালো হতো। দত্তার নরেনের মতো আমি জয় করে নিতাম প্রজ্ঞাকে। কিন্তু আমি নরেনের মতো গবেষক নই আর জমিদারী যুগ পেরিয়ে এসেছে অর্ধশতক।
প্রজ্ঞা বলল, "চলো। ফিরি। উদ্ভব আর স্নিগ্ধতা যে কোথায়!"
আমরা পাশাপাশি চলতে শুরু করলাম। মোবাইলের আলো জ্বালিনি কেউ। হেঁটে যাচ্ছি সোজা। জানি পৌঁছে যাব। প্রজ্ঞার কাঁধ লেগে যাচ্ছে আমার বাহুতে। সরে যাচ্ছে না ও। আমার মনে হচ্ছে, এভাবে আমি পৃথিবী ব্লাকহোলে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারি, এভাবে সমুদ্র তীর ঘেষে, প্রজ্ঞার সাথে। ক্লান্তি আমাকে স্পর্শ করবে না, অবসাদ আমাকে করবে না গ্রাস। সমস্যা হলো, পৃথিবী ব্ল্যাকহোলে পরিণত হওয়ার আগেই ব্যাংকার শালা এসে প্রজ্ঞাকে বিয়ে করে বাচ্চার মা বানিয়ে ফেলবে!
প্রেমে পরে গেলাম নাকি? জানি না। জেনে শুনে অন্যের ভাবীস্ত্রীর প্রেমে পরাটা গাধামি হয়ে যাবে না?
আমার বারবার প্রজ্ঞার মুখ দেখতে ইচ্ছে করছে, ওর আলোকিত উদ্ভাসিত অম্লান নিষ্পাপ মুখ। আমি বারবার ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছি। প্রজ্ঞাও কথা বলতে বলতে আমার দিকে ঘেঁষছে, তাকাচ্ছে আমার দিকে। মাঝেমাঝে মিলে যাচ্ছে চোখ, যদিও কেউ কারো চোখ দেখতে পাচ্ছি না স্পষ্ট!
মনকে প্রবোধ দিলাম, "জীবনে উপন্যাসের চেয়েও টুইস্ট অনেকসময় বেশি থাকে! দেখাই যাক না। এই যে প্রজ্ঞার সঙ্গ পাচ্ছি, এটাও তো উপরি পাওনা। নাও আসতে পারতো ও। যা পাচ্ছি, তাই বা কম কী?"
আমি হঠাৎ প্রজ্ঞার হাত ধরে থেমে গেলাম। বাঁধা পেয়ে থেমে গেল প্রজ্ঞা। ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "কী?"
বললাম, "কিছু না!

হাতটা ছড়ে দিলাম। প্রজ্ঞা নিশ্চল দাঁড়িয়ে রইল। আর আমি কিছু বোঝার আগে জড়িয়ে ধরল আমাকে। আমার মুখটা দু হাতে নিয়ে আলতো একটা চুম্বন মেখে দিল আমার ঠোঁটে!
আর বাকরুদ্ধ আমাকে রেখে হাঁটতে শুরু করল প্রজ্ঞা!

হাতটা ছড়ে দিলাম। প্রজ্ঞা নিশ্চল দাঁড়িয়ে রইল। আর আমি কিছু বোঝার আগে জড়িয়ে ধরল আমাকে। আমার মুখটা দু হাতে নিয়ে আলতো একটা চুম্বন মেখে দিল আমার ঠোঁটে! আর বাকরুদ্ধ আমাকে রেখে হাঁটতে শুরু করল প্রজ্ঞা!

Oops! This image does not follow our content guidelines. To continue publishing, please remove it or upload a different image.
ইরোটিক বড়গল্প সমগ্র (১৮+)Where stories live. Discover now