Chapter-2 | Part-1

20 1 0
                                    

শমিক ধীরে ধীরে দৃষ্টির বাইরে চলে যেতেই শালিনী বাস্তবজগতে ফিরে এল। অগণন মানুষের মাঝে একজনের অনুপস্থিতিতেও একা লাগতে পারে তা প্রথম উপলব্ধি করল শালিনী। কিছুতেই পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছিল না। অনেকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল বাড়ির নীচের তলায় সিঁড়ির সামনে। ফাঁকা লিফট ওপর থেকে নামল। শালিনী তখনো একভাবে দাঁড়িয়ে। তার পায়ে কে যেন বেড়ী পরিয়ে দিয়েছে। পা-দুটো আর চলতে চাইছে না। চারতলার ফ্ল্যাটে ফিরতে ইচ্ছা করছে না। এক সপ্তাহ হল কলকাতায় এসেছে--কলকাতার অলিগলি, চায়ের দোকান, রাস্তার ভিড়, অপরিচ্ছন্নতা সব হাসি মুখে সহ্য করতে পারে শালিনী, যত বিরাগ ঐ ফ্ল্যাটের ওপর।

শালিনী বেল দিতেই নিতা দরজা খুলে সরে দাঁড়াল। একঘর লোক। বেশীর ভাগই মাঝবয়সী, শালিনীর মায়ের মতোই বয়স, কিন্তু মিল শুধু দিনের গুনতিতে বাকী সবেতেই অমিল। পুরুষ-মহিলা মিলে প্রায় পঁচিশ-ত্রিশজন হবে। অতিথিদের হাতের গ্লাস হাতেই রয়ে গেল, অনুচ্চারিত শব্দ মাঝপথে আটকে রইল। শালিনীর প্রবেশে এবং তার অনমনীয় দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের প্রভাবে ঘরের পরিবেশ নিমেষে বদলে গেল। সবাই স্তব্ধ। প্রত্যেকের মুখমণ্ডলে বিপদের কালো ছায়া, নিঃসন্দেহে অশুভ ইঙ্গিত। অখণ্ড নীরবতায় অবাক শালিনীও। হাল ধরলেন শালিনীর মা, শ্রীলেখা মজুমদার। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, "তোমার ঘরে যাও শালিনী, তৈরি হয়ে এসো। সবার সাথে আলাপ করিয়ে দেবো।"

শালিনী জানে একবার নিজের ঘরে ঢুকতে পারলে আর বাইরে আসার প্রশ্নই উঠছে না। সবার উদ্দেশ্যে একবার মাথা নিচু করে 'নড' করে অদৃশ্য হয়ে গেল। অন্যসময় হলে হয়তো ভারতীয় কায়দায় দু-হাত বুকের মাঝে ঠেকিয়ে নমস্কার জানাত, কিন্তু সেই পরিবেশে কিছুই ইচ্ছা করল না। নিতার দিকে দ্বিতীয়বার দৃষ্টি পড়তেই তার চটুল চাউনি দেখে ঘৃণায় শরীর রি রি করে উঠল; বুঝতে অসুবিধা হল না যে সে-ই সান্ধ্য-আড্ডার প্রধান আকর্ষণ। সত্যিই গুছিয়ে কথা বলতে পারে, নিমেষে খুশীর মেজাজে ফিরিয়ে আনল অতিথিদের। নূতন করে শুরু হল মদের আসর। সবার অলক্ষ্যে টেনে দিল ড্রপ-সিন, ভেতরে চলতে লাগল মাঝবয়সের যৌবন-লীলা। প্রকৃতির যে বৈচিত্র্য আছে মানুষের তা নেই। পঞ্চ-ইন্দ্রিয়কে উপেক্ষা করার শম বা দম সাধারণ মানুষের থাকে না, কাজেই ইন্দ্রিয়ের দাশ হয়েই জীবন অতিবাহিত করতে হয়। মোহের জালে যখন মানুষ বন্দী, তখন বোধ-বুদ্ধি লোপ পাওয়াই স্বাভাবিক। বিচার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার জন্যই সে মুক্তির স্বাদ থেকে বঞ্চিত।

চক্রব্যূহWhere stories live. Discover now