Chapter-8 / Part-3

19 0 0
                                    

মৌনতা সম্মতির লক্ষণ। মীনাদেবী অচিরেই বুঝে নিলেন মেয়ের মনের গতি-প্রকৃতি। পরিবেশ সহজ করার জন্য বললেন, "তলিয়ে ভাবলে বুঝতে পারবি শালিনী ঠিক কাজই করেছে। আর একটা বিষয় বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার যে, অফিসে শালিনী হল বাবুর বস। বাবুকে কর্মজীবনে সফল হতে ভীষণ সাহায্য করেছে। সামান্য সময়ের মধ্যে এই রকম চাকরি দিয়েছে, তার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ থাকবে না? যদি না থাকে আমি তো খুব অবাক হবো।"

রীনার কাছ থেকে জবাব না পেয়ে বন্ধুর মতো সরাসরি প্রশ্ন করলেন, "শালিনীর সাথে তুই নিজেকে গুলিয়ে ফেলছিস কেন? ও এখানে কাজে এসেছে। বছরখানেকের ভেতর কাজ শেষ করে চলে যাবে।"

সংশয়ে দোদুল্যমান রীনার সন্দিগ্ধ মন সন্ধে থেকে মস্তিষ্কে যে জট পাকিয়েছে মায়ের সংবেদনশীল মনের তদারকিতে তার গিঁট ছাড়ানোর কাজ চলছে অতি সন্তর্পণে। রীনা একবার ভেবেছিল রিনির সাথে আলোচনা করবে কিন্তু সময়ের অভাবে হয়ে ওঠেনি। মায়ের মনের আরশিতে মেয়ের অভিমানের ছায়া পড়তেই ছুটে এসেছেন উদ্ধার করতে। অভিজ্ঞতা থেকে তিনি খুব ভাল করে জানেন যে মনে একবার সন্দেহ, অবিশ্বাস বাসা বাঁধতে শুরু করলে তাকে প্রশ্রয় না দিয়ে তৎক্ষণাৎ নির্মূল করা প্রয়োজন, নাহলে জল্পনা-কল্পনায় ভর করে চারাগাছ একদিন মহীরুহ হয়ে উঠবে এবং তিলে তিলে গড়া দীর্ঘদিনের মধুর সম্পর্ককে দু-টুকরো করে ছাড়বে। রীনার ভাঙা মন তখন জোড়া দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।

মায়ের সব কথাই রীনা সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করে, কিন্তু শালিনীর উপস্থিতি সে কিছুতেই মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারে না। উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন করল, "মা, তুমি ঠিক জানো শালিনী কলকাতা ছেড়ে চলে যাবে?"

"একশোভাগ। একটু সময় দিয়ে মন স্থির করে ভাব না তুইও বুঝতে পারবি। যে মেয়ে অ্যামেরিকায় জন্মেছে, এতগুলো বছর সেখানে কাটিয়েছে, হঠাৎ এখানে থাকতে যাবে কেন?"

রীনা চিন্তিত হয়ে বলল, "ওর মা তো কলকাতায় আছেন তাছাড়া এখানে ওদের নিজস্ব ফ্ল্যাটও আছে।"

মীনাদেবী হাসতে হাসতে জবাব দিলেন, "মায়ের বয়স আর ওর বয়স?" বয়সের সাথে সাথে জীবনের চাওয়া-পাওয়ার হিসেব-নিকেশ যে কত দ্রুত পালটে যায় তা উপলব্ধি করবার সময় রীনার তখনও আসেনি, কিন্তু মীনাদেবীর কাছে তা সূর্যের আলোর মতো স্পষ্ট, ধ্রুবতারার মতো স্থির, পূর্ণিমা-অমাবস্যার মতো সত্য।

চক্রব্যূহWhere stories live. Discover now