Chapter-9 | Part-1

16 0 0
                                    

শালিনী মাকে নিয়ে দার্জিলিঙের পথে। বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি ভাড়া করে সোজা হোটেল। পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে বাঁকে প্রকৃতিদেবী নিজের খেয়ালে সাজিয়ে রেখেছেন রহস্যে মোড়া নানা সম্ভার যার অমোঘ আকর্ষণ উপেক্ষা করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। পাহাড়ের গা বেয়ে সারিবদ্ধ দীর্ঘ গাছগুলোর দিকে তাকালে নজর ফেরানো যায় না। মনে হয় কোনও নির্জন তপোবনে গভীর ধ্যানে মগ্ন ঋষিরা দণ্ডায়মান। তাঁদের নীরব উপস্থিতি মন শান্ত করে দেয়। শহরের নিরন্তর কোলাহল থেকে দূরে না এলে, প্রকৃতির রূপের শোভা হৃদয় দিয়ে অনুভব না করলে তার গভীরতা অনুভব করা যায় না। ঝরা পাতার খসখস শব্দ, মেঘের পর্দা ফাঁক করে আচমকা এক ফালি রূপোলী রোদ্দুর, পাহাড়ের কোলে জমে থাকা মেঘের আবদার - জীবনের ছন্দই পালটে দেয়।

কোথাও পাহাড় থেকে নেমে আসছে সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত তেজস্বী ঝরনা। কত পথ বেয়ে ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে নিজেকে নিয়ন্ত্রিত রেখেছে মানুষের কল্যাণে। নিচে তাকালেই তিস্তা নদী। কখনো ফুলে ফেঁপে বিশাল আকার ধারণ করে সদর্পে এগিয়ে চলেছে, আবার কখনো সরু গলি-রাস্তার মতো বাঁক নিয়ে নিজের দাপট বুকে লুকিয়ে রেখে গাঁয়ের ভীরু বধূর ছদ্মবেশে ঘোমটার আড়ালে মৃদু পায়ে চলেছে পরিণামের দিকে। হাওয়ায় ভেজা ভাব, মেঘের চরিত্র বুঝিয়ে দিচ্ছে গন্তব্যে পৌঁছতে বেশী দেরী নেই।

শালিনী এক খণ্ড মেঘ দেখিয়ে মাকে বলল, "মা, দেখ মনে হচ্ছে মেঘ রাস্তা পার হচ্ছে।"

মেয়ের স্বতঃস্ফূর্ত হাসি নিঃসন্দেহে মায়ের মনে জমে থাকা অনিশ্চয়তার আস্তরণ ফুঁড়ে নূতন করে জীবন শুরু করার উৎসাহ যোগাচ্ছে। হাসতে হাসতে জবাব দিলেন, "ঠিক বলেছিস, আমার তো সুইজারল্যান্ডের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।"

মিসেস মজুমদার দু-বছর কাটিয়েছিলেন সুইজারল্যান্ডে চাকরির সূত্রে, সেখানেই ম্যাকের সাথে প্রথম আলাপ। কাজেই, মনে তো পড়বেই কিন্তু নাটকের শেষটা বড় ঘ্যানঘেনে আর তিক্ততায় ভরা, তাই মুখের হাসি বেশীক্ষণ স্থায়ী হল না।

মা-মেয়ে দুজনেই দার্জিলিং ভ্রমণের আসল কারণ জানেন। মন খুলে কথা বলতে চান, একে অপরকে বুঝতে চান। কাজটা সহজ নয় তাই ভিন্ন পরিবেশের প্রয়োজন ছিল। বাড়ির ঘেরাটোপে বিশেষ করে নিতার গোয়েন্দাগিরির দাপটে কিছুতেই সহজ হতে পারতেন না মিসেস মজুমদার। অ্যামেরিকায় থাকাকালীন নিজের মানসিক হেনস্থার যথাযথা কারণ মেয়েকে পরিষ্কার করে বলতে কুণ্ঠা বোধ করতেন। কেন তাঁকে তাড়াহুড়ো করে ডিভোর্স করতে হল বা ভারতবর্ষে তখনি ফিরে আসতে বাধ্য হলেন তা শালিনীর কাছে স্বচ্ছ ছিল না।

চক্রব্যূহOnde histórias criam vida. Descubra agora