নিতার কানে একটা কথাই বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল - 'ঘরে অন্য কেউ নেই তো?' নিতা সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করে ফ্ল্যাটের মালিক সে। আইন যাই বলুক না কেন ফ্ল্যাট তার কব্জায় আছে এবং চিরকাল থাকবে।
অজানা আশঙ্কায় এবং আক্রোশে গজরাতে লাগল। ক্রোধের বশে নিতা ক্ষণিকের জন্য বোবা হয়ে গিয়েছিল। মনে মনে আওড়াতে থাকল, 'এ ঘরে আমি কাউকে ঢুকতে দেবো না। বৌদি, তোমাকেও না। একদিন তুমিই আমাকে লোভ দেখিয়েছিলে, এখন যদি ভালোয় ভালোয় না দাও তবে ছিনিয়ে নেব, সে ক্ষমতা রাখে নিতা।'
নিতার দৃষ্টি ঘুরল উকিলবাবুর দিকে। তাঁর ধারণা ছিল ভাল-মন্দ কিছু বলে নিতা তাঁকে খুশী করার চেষ্টা করবে। মনের খবর কেউই রাখে না, তবে শারীরিকভাবে নিতাকে সে-রাতের মতো পাওয়া যাবে কল্পনা করে নিশ্চিত ছিলেন, কিন্তু তার চোখের ভাষা তা বলছে না। সেখানে ভাব-ভালোবাসা-দয়া-মায়ার চিহ্ন পর্যন্ত নেই। আহত বাঘিনীর চোখ জ্বলজ্বল করছে। শিকার কোনও শর্তেই সে হাতছাড়া করবে না বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বনে বাঘ যেমন পায়চারি করে নিতাও সেই মুহূর্তে ঘরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাচ্ছে আর আসছে।
উকিলবাবুর সাথে নিতার সম্পর্ক একদিনের নয়, অনেকরকম মুডে তাকে দেখেছেন, কিন্তু এমন রুদ্রমূর্তি আগে কখনও প্রত্যক্ষ করেননি। তার মন আপসের জন্য তৈরি নয়। দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ কিছু একটা ঘটবে; প্রলয়ের জন্য অপেক্ষা করছে।
পরিবেশ সহজ করবার জন্য উকিলবাবু নিজের গ্লাসে চুমুক দিয়ে নিতার গ্লাস তার দিকে বাড়িয়ে দিলেন। নিতা কিন্তু সেদিকে দৃকপাতই করল না। উকিলবাবুর চোখের সামনে যেন দেওয়াল গড়ির পেন্ডুলাম দুলছে। দৃষ্টি একবার বাঁ-দিক, একবার ডান-দিক।
সারা সপ্তাহ আইনের জালে বন্দী থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় মন মুক্তির সন্ধান করে। মুক্তি মানে আধ্যাত্মিক মুক্তি নয়, অন্তত অন্যদিনের চেয়ে অন্যরকমভাবে অতিবাহিত করতে পারলেই মন আপোষ করে নেয়। সেইটুকু যদি না হয় তখন মন বিদ্রোহ করে, কিন্তু উকিলবাবু জানেন অশান্তি করে লাভ হবে না, বরং নিতাকে পোষ মানাতে পারলেই কার্য সিদ্ধি হবে। নিজেকে যথাসম্ভব সংযত রেখে নরম কণ্ঠস্বরে জিজ্ঞেস করলেন, "কি হল কি? এ রকম অস্থির হয়ে উঠলে কেন?"
YOU ARE READING
চক্রব্যূহ
General FictionA story about modern-day aspirations and everyday social conflicts.