নিতা ভয় পেয়ে শামুকের মতো গুটিয়ে যাবার মেয়ে নয়। যৌবনের গণগণে আঁচ কিছুটা ঢিমে হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু নিতা প্রতিনিয়ত ইন্ধন যুগিয়ে তাকে নিভতে দেয়নি, বরং সামান্য খুঁচিয়ে তার তাপ দশগুণ বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। জীবন কোনদিন তার কাছে মধুর ছিল না, কাজেই সমস্যা বা সংগ্রাম নূতন কিছু নয়। কিছুটা সময় লাগবে নিজেকে সবল প্রতিদ্বন্দ্বী বলে প্রমাণ করতে। যতবার জীবন তাকে নির্মম শাস্তি দিয়েছে প্রতিবারই প্রবল পরাক্রমে প্রতিরোধ করেছে এবং অধিক মাত্রায় জীবনকে আঘাত করেছে। এই যুদ্ধ চলতেই থাকবে শুধু পট পরিবর্তন হবে।
রাস্তার ধারে বসে এইসব ভাবছিল নিতা, সাথে একটা বড় সুটকেস আর হাত-ব্যাগ। অনেকদিন পর আবার রাস্তায়। মিসেস মজুমদারের ফ্ল্যাটে আরামে বেশ কিছু বছর কাটাবার ফলে অভ্যাসে বদল এসেছে। শারীরিক ক্ষমতা কমেছে কিন্তু বদলা নেবার লালসা কমেনি।
নিতার চরম দুরবস্থায় যেমন কেউ কখনো এক চুল জায়গা ছেড়ে দেয়নি, সেও কাউকে বিনা যুদ্ধে সূচ্যগ্র জমি ছাড়বে না। মিসেস মজুমদারের ফ্ল্যাট যে করেই হোক নিয়ে ছাড়বে তাতে সন্দেহ নেই। মনে মনে ভাবছিল – একদিক থেকে ভাল হয়েছে যে তারা বলপূর্বক তাড়িয়ে দিয়েছে, তা না হলে তার মন বৌদির জন্য অনেক নরম হয়ে আসছিল, শেষমেশ হয়তো কাজটা করতে পারত না। মানুষের মনকে বিশ্বাস নেই।
নিতা কাউকে বিশ্বাস করে না। সে জানে পৃথিবীতে সে একা। একাকীত্ব তার নিত্যসঙ্গী। রাস্তার ধারে ফুটপাতে বসে নিতা অতীতে ফেলে আসা দিনগুলোকে মনে মনে ছুঁয়ে দেখছিল। নিতার মন শান্তি চাইছিল না, বরং অশান্তির আগুণ জ্বলছিল অন্দরমহলে তাতে দগ্ধ হচ্ছিল মান-অপমানের তুচ্ছ অহংকার। ক্রমশই তার মন একাগ্র হচ্ছিল। কেন্দ্রীভূত মন সাহস যোগাচ্ছিল।
জীবনে সফল হওয়ার রসদ হল সাহস। বেপরোয়া জীবনের স্বাদ একেবারে আলাদা তাতে নেশা আছে, প্রতি মুহূর্তে লড়াই করে বেঁচে থাকার ভেতর জয়ের হাতছানি আছে, সুখ হারানোর ঘ্যানঘ্যানানি নেই, আপোষ বা আত্মসমর্পণ নেই। সাপুড়ে যেমন নানা ছলাকলায় সাপকে বশ মানায় নিতাও তেমন ছলে-বলে-কৌশলে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টার কসুর করছিল না। সে কিছুতেই ভেঙে পড়বে না, হেরে যাবে না। যতটুকু সামর্থ্য আছে পুরোটা দিয়ে নিজেকে নিঃশেষ করে লড়াই করে যাবে।
![](https://img.wattpad.com/cover/307525455-288-k878166.jpg)
YOU ARE READING
চক্রব্যূহ
General FictionA story about modern-day aspirations and everyday social conflicts.