শমিকের কথার যথার্থ অর্থ উদ্ধার করতে না পারায় শালিনীর মনে হল - খারাপ নেটওয়ার্কের জন্য বোধহয় ঠিকমতো শুনতে পাচ্ছে না, তাই বিদায় জানিয়ে রেখে দিল। শালিনীর নাম প্রকাশ্যে আসতেই গাড়ির ভিতর অখণ্ড নীরবতা। শমিকও অদ্ভুত অস্বস্তি বোধ করছিল, কিন্তু কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছিল না। শালিনী তো ফোন করতেই পারে, এবং ভবিষ্যতে বহুবার করবে, তখন কি সে এভাবে গুটিয়ে যাবে। একেবারে অকারণে কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে রীনার সাথে দূরত্ব বেড়ে গেল।
গাড়ি তাদের পাড়ায় প্রবেশ করেছে; বাড়ি থেকে খুব বেশী হলে পাঁচ মিনিটের দূরত্ব। কি ক্ষতি হতো যদি দশ মিনিট পরে ফোনটা আসত! একটু ফাঁক পেলে শালিনীকে যথাযথ উত্তর দিতে পারত। সেই সূত্র ধরে রীনাকেও তার সম্বন্ধে দু-চার কথা বলে রাখতে পারত, তাতে রীনার মনে শালিনী সম্বন্ধে সন্দেহের অবকাশ থাকলেও, প্রাথমিক একটা ধারনা তৈরি হতো, কিন্তু সময়ের হেরফেরে কিছুই সম্ভব হল না।
রাস্তায় জমা জলের ভেতর দিয়ে গাড়ি চলছে, হঠাৎই বাঁ দিকের চাকাটা গর্তে পড়ে ঝাঁকানি দিয়ে উঠল। শমিক অস্ফুট স্বরে বলল, "সরি।"
মীনাদেবী পরিবেশ সহজ করতে, এবং শমিককে ভরসা দিতে বললেন, "তুমি আর কি করবে? না তুমি রাস্তা তৈরি করেছ...না স্টিয়ারিং তোমার হাতে।"
শমিক সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তৎক্ষণাৎ বলল, "ভীষণ ঠিক বলেছেন কাকীমা, স্টিয়ারিং আমাদের কারুর হাতেই বোধহয় নেই।"
কথোপকথনের গতি অব্যাহত রাখতে রীনা মজা করে বলল, "তুমি তো দার্শনিকদের মতো কথা বলছ, হল কি!"
এই হল মানুষের মন – এই ভালো, এই খারাপ।
শমিক পিছন ফিরে রীনার চোখে চোখ রেখে উত্তর দিল, "তবে! আন্ডার এস্টিমেট কোরো না।"
রীনার জবাব, "বালাই ষাট।"
কথা শেষ হতেই বাড়ির দরজায় গাড়ি পৌঁছে গেল। লম্বা সফরের পর সবাই বেশ ক্লান্ত। শমিকের মিস কল পেয়ে রিনি এসে দাঁড়িয়েছে রীনাদের বাড়ির সামনে। তার কাছে চাবি ছিল তাই কাজের মাসিকে দিয়ে সব কাজ সেরে রেখেছে। দুপুরে কি রান্না হবে তারও ব্যবস্থা হয়ে গেছে। গাড়ি থেকে মালপত্র নামিয়ে ঘরে আরাম করে বসতেই, গরম চা নিয়ে রিনি হাজির।
YOU ARE READING
চক্রব্যূহ
General FictionA story about modern-day aspirations and everyday social conflicts.