Chapter-9 | Part-3

16 0 0
                                    

শালিনী মায়ের মানসিক যন্ত্রণা লাঘব করতে তাঁর হাতে হাত রেখে বলল, "জীবনে যা কিছু ঘটে তার ওপর আমাদের কতটুকু নিয়ন্ত্রণ থাকে, কাজেই তা নিয়ে ভেবে লাভ কি! সবচেয়ে বড়ো কথা আজ সব অতীত।"

মিসেস মজুমদার মৃদু হেসে মেয়ের অভিমত মেয়ে নিয়ে কিছুসময় নীরব ছিলেন। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ যখন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় তখন কোনও একটাকে আলাদা করা কঠিন। অতীত বর্তমানে পা রেখে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যায়, না, বর্তমান পায়ে পায়ে আমাদের নিত্যদিনের সুখ-দুঃখ, মান-অভিমানকে মাড়িয়ে অতীত হয়ে যায় – সেই জটিল প্রশ্নের নির্ভুল উত্তর অনুসন্ধানে মিসেস মজুমদারের মন নিমরাজি।

তিনি অপ্রিয় সত্য মেয়ের সামনে তুলে ধরতে চাইছেন, কিন্তু মন দ্বিধাবিভক্ত। দুঃখের দহন জ্বালা সহ্য করা এক, আর সুসময়ে দুঃখের আলোচনা করে সুখের বাতাবরণে দুঃখের আগমনী গাওয়া অনেকগুণ বেদনাদায়ক। মিসেস মজুমদার এতদিন মান-অভিমানের সাথে সমঝোতা করে, নিজের মনের গহ্বরে যা কিছু লুকিয়ে রেখেছিলেন, সেই অব্যক্ত ভাব হৃদয়ে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে প্রকাশ্যে আনতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্ধকারে পালিত স্মৃতির বহিঃপ্রকাশে মন সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেবে কিনা তাতেও তিনি সন্দিহান। দিনের বেলাতেও যেমন কখনো কালো মেঘ সূর্যকে ঢেকে দেয়, সেইরকম সত্যকেও মাঝে মাঝে ঢেকে ফেলে পারিপার্শ্বিকতা - কথার বেড়াজালে, ছলে-বলে-কৌশলে। 'সত্যের জয় হোক' যত সহজে বলা যায়, সত্যকে আঁকড়ে জীবনে বাঁচা তত সহজ নয়। সত্যকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠা করতে হাজার মিথ্যের আশ্রয় নিতে হয়।

শালিনীর বিচার বুদ্ধি যথেষ্ট প্রখর। তার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না কেন মা বারবার আটকে যাচ্ছে??হোঁচট খাচ্ছে?

মাকে সহজ করার জন্য বলল, "তুমি বল মা, আমি প্রস্তুত। যেদিন তুমি অ্যামেরিকা ছেড়েছিলে আমি তোমার পাশে থাকতে পারিনি তার জন্য আজও আমার নিজেকে অপরাধী মনে হয়। এখন আমি আমার সর্বস্ব নিয়ে তোমার পাশে।" কথাগুলো বলে নিজের জায়গা থেকে উঠে এসে মায়ের পাশে বসে দু-বাহু বাড়িয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরল।

স্বাভাবিকভাবেই মিসেস মজুমদার তাতে হারানো মনোবল অনেকটাই ফেরত পেয়েছেন। মেয়েকে আদর করে বললেন, "তাতে আমি কিছু মনে করিনি। তখন তোর উঠতি বয়স - নূতন নূতন 'বয়ফ্রেন্ড' হচ্ছে,, মায়ের দিকে মন দেবার সময় সেটা নয়। তোর বয়সে আমিও তাই করেছি।

চক্রব্যূহWhere stories live. Discover now