শালিনী মাকে নিয়ে কলকাতায় ফিরে এসেছে রবিবার বিকেলে। অত সুন্দর অভিজ্ঞতার পর ফ্ল্যাটের ভিতর পা রাখতেই মুহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিলেন মা-মেয়ে দুজনেই। এই বাড়িতে তাদের অনুপস্থিতিতে যে অন্য কেউ ছিল, এবং সেখানে যে মদের আসর বসেছিল তা বুঝতে সময় লাগেনি। তাদের মুখচোখের বিকৃতভাব দেখে নিতা শঙ্কিত, কিন্তু যথার্থ কারণ খুঁজতে সে অসমর্থ। নিতা জানে মিসেস মজুমদার ঘরে অগোছালো অপরিচ্ছন্ন ভাব ভীষণ অপছন্দ করেন, তাই যতটা পেরেছে সাজিয়ে-গুছিয়ে রেখেছে। তিনি যেমন ভাবে কুশানগুলো রাখতেন তেমনটাই আছে। পর্দার ভাঁজ ঠিকই আছে, আপাতভাবে কোনও তফাৎ তো নিতার চোখে পড়ছে না, কিন্তু অসংগতির আশঙ্কা তাকে তাড়া করছে। শালিনী না থাকলে নিতা এত ভীত হতো না, যে করে হোক বৌদিকে ম্যানেজ করে ফেলত, কিন্তু তার সব অস্ত্র ভোঁতা হয়ে গেছে শালিনীর শান দেওয়া গাম্ভীর্যের কাছে।
মিসেস মজুমদার বরাবরই ভীষণ সৌখিন। নিজের হাতে সাজিয়ে রাখা কোনও জিনিষে যদি অন্য কেউ হাত দেয়, তা তাঁর চোখে পড়বেই। বৈঠকখানায় সেন্টার টেবিলের ওপর রাখা ছোট পিসগুলো একটু বেঁকিয়ে রাখা তাঁর স্বভাব, তাতে টেবিলের থেকে আলাদা করে চোখে পড়ে নাহলে হারিয়ে যায় বলে তাঁর ধারনা। কুশান একটার ঘাড়ে অন্যটা এসে পড়বে এমনই বিন্যাস - এই জ্যামিতি বোঝার ক্ষমতা নিতার নেই, কাজেই বড়ো বাজেভাবে ধরা পড়ে গেছে। সুগন্ধ মিসেস মজুমদারের ভীষণ প্রিয়। ঘরে ঢুকেই পরিচিত সুবাসে মন ভরে যায়, মনে হয় ঠিক জায়গায় এসেছি, এবার বাড়ি ঢুকে নাকে এল বাসি মদের গন্ধ। মা-মেয়ে দুজনেই টিসু পেপার নাকে চাপা দিয়ে যে যার ঘরে ঢুকে গেলেন। রুম-এয়ার-পিউরিফায়ার যেখানে প্লাগ করা থাকে সেটা খোলা। নিতার অতিথিদের ভিতর কেউ হয়তো না বুঝেই তাতে নিজের ফোন চার্জ করতে দিয়েছিল। নিতার নেশায় আচ্ছন্ন দৃষ্টি তার হিসাব রাখতে পারেনি। বুঝল, যখন আধঘণ্টা পরে মিসেস মজুমদার এসে প্লাগ লাগিয়ে সুইচ অন করে দিয়ে গেলেন।
নিতা আমতা-আমতা করে বলল, "বৌদি ভুল হয়ে গেছে, কে করল কে জানে?"
ধমকের সুরে তাঁর ছোট্ট জবাব ছিল, "ভুতে করেছে।"
YOU ARE READING
চক্রব্যূহ
General FictionA story about modern-day aspirations and everyday social conflicts.