বোনাস পর্ব-১

1.3K 33 8
                                    

লেবার রুম থেকে হাসিমুখে বেরিয়ে এলো ড. সিদ্রাতুল মুনতাহা। এক পলক তাকিয়ে দেখে নিলো সামনে দাঁড়ানো দাঁড়িওয়ালা ভদ্রলোককে। সুসংবাদটা নার্স আগেই দিয়েছে, কিন্তু লোকটা নাকি স্পেশালি ডাক্তারকে ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছে, সেজন্যই এসেছে ও।

"মোবারকবাদ! ফুটফুটে সুন্দর একটা রাজপুত্র হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ্‌, অপারেশন করতে হয়নি, নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। আপনি ভেতরে গিয়ে বাচ্চাকে দেখতে পারেন" একদমে কথাগুলো বলে ফেলল সিদ্রা।

"থ্যাংকইউ! থ্যাংকইউ সো মাচ, মিস......স্যরি, ডক্টর ..... ড. সিদ্রাতুল মুনতাহা" জবাব দিলো লোকটা।

সমস্ত শরীর শিহরিত হয়ে উঠল সিদ্রার, সেই কণ্ঠ! এক সময় যে কণ্ঠ শুনলে শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের শীতল স্রোত নেমে যেতো, আজ সেই কণ্ঠই যেন কানে মধুবর্ষণ করছে। হাজার বছর পরেও এই কণ্ঠ শুনলে চিনতে পারতো সিদ্রা, কিন্তু........ আস্তে আস্তে চোখ উপরে তুলে ভালো করে তাকাল ও। হ্যাঁ, সেই লোকটাই তো! হাসিমাখা চোখ দুটো একদম আগের মতই আছে, শুধু মুখভর্তি সুন্দর করে রাখা একমুষ্টি দাঁড়ি আগের থেকে অনেক বেশি নূরানি করে দিয়েছে চেহারাটা। এর জন্যেই প্রথম চাহনিতে বুঝতে পারেনি, এই সেই লোক, যার কথা এই সাতটা দিন প্রতি মুহূর্তে ভেবে চলেছে। শুধু সাতটা দিনের কথাই বা বলছি কেন, বলা ভালো আটটা বছর। যদিও আট বছর ধরে প্রতি মুহূর্ত এই লোকের কথা ভেবেছে বললে ভুল হবে, কিন্তু মনের কোণে যেখানে লোকটা জায়গা করে নিয়েছিল, সেখান থেকে এক ইঞ্চিও নড়েনি, বরং ধীরে ধীরে পুরো মনটাকেই দখলে নিয়ে নিয়েছে। তাই তো যখন থেকে বাধ্যতামূলক প্র‍্যাক্টিস এর জন্য ওর পোস্টিং শ্রীমঙ্গলে হওয়ার খবর পেয়েছে, তখন থেকেই নানারকম আশা আর স্বপ্নের জাল বুনে চলেছে অবাধ্য মন। এর পেছনে যদি আল্লাহ্‌র কোন ইচ্ছে নাই থাকবে, তাহলে সারাদেশে এতো উপজেলা থাকতে ওর ভাগ্যে শ্রীমঙ্গলই কেন পড়বে!?

আর যখন সাতদিন আগে সিলেটে পা রাখল, তখন থেকে ভেবে চলেছে, কি করা উচিত। লোকটাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে নাকি আদৌ কিছু করবেনা, কিছুতেই ঠিক করতে পারছিল না সিদ্রা। আর আজ আল্লাহ্‌ উনাকে নিজে থেকেই ওর সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন, ওকে কিছুই করতে হয়নি। ওর দুচোখ ভরা খুশির অশ্রু স্পষ্ট দেখতে পেল রাইয়্যান। অপলক নেত্রে দুজন তাকিয়ে রইল দুজনের দিকে, পলপল করে বয়ে যাচ্ছে সময়, স্থান কাল পাত্র কিছুই যেন খেয়াল নেই কারও।

যে গল্পের নাম ছিলনাWhere stories live. Discover now