পর্ব-৪০

823 34 2
                                    

ঝর্ণার সামনে দাঁড়িয়ে স্মৃতিচারণ করছে সিদ্রা। এখানে আসার পর থেকে ঘটে যাওয়া একেকটা ঘটনা একের পর এক ভেসে উঠছে চোখের সামনে। এখনও ওর বিশ্বাস হচ্ছেনা, এতদিনের সকল কষ্টের অবসান হয়েছে, ও এখন সম্পূর্ণ মুক্ত। রাত পার হলেই ফিরে যাবে আম্মু আব্বুর কাছে, যাদেরকে আরেকবার দেখতে পাওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছিল ও। আল্লাহ্‌ চাইলে কি না করতে পারেন, কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে সব কেমন বদলে গেল। তবে মুক্তির আনন্দ পুরোপুরি উপভোগ করতে পারছেনা সিদ্রা, বুবুর জীবনে যা ঘটেছে সেটা মনে পড়ে অজানা আশঙ্কায় বুকটা কেঁপে উঠছে বারবার।

চলে যাওয়ার আগে পাহাড়ের উপরে ঝর্ণাপাড়ে শেষবারের মত খালার সাথে বেড়াতে এসেছে ও। এই ঝর্ণাপাড়ে কাটানো একেকটা মুহূর্ত, খালার থেকে সাঁতার শেখা, ভোরবেলা সূর্যোদয় দেখা কিছুই ভুলতে পারবেনা ও। বুঝতে পারছে, কি প্রচণ্ড মিস করবে এই ঝর্ণাটাকে। কাপড়চোপড়ও নিয়ে এসেছে, খালার শেখানো সাঁতার কতটা মনে আছে পরীক্ষা করতে চায়। অনেকক্ষণ ধরে সাঁতার কেটে উপরে উঠল দুজনে। কাপড় বদলে ঘাসের উপরে যোহরের নামাজ আদায় করে নিল। এরপর পরিপূর্ণ পর্দা করে আস্তে আস্তে ফারহানের কবরের কাছে এসে দাঁড়াল সিদ্রা।

কবরের দিকে তাকিয়ে অশ্রুসজল নয়নে বলল, “আমি জানিনা ভাই, কতটা ভয়াবহ আযাব তুমি ভোগ করছো। আমার দোয়াতে তোমার কতটুকু কষ্ট লাঘব হবে, আমি তাও জানিনা। কিন্তু আমি প্রতিটা মোনাজাতে আল্লাহর কাছে তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। চিন্তা করোনা তুমি, মুনিরাও দোয়া করবে তোমার জন্য, আর ইন শা আল্লাহ্‌ তোমার ভাইও। এতজনের দোয়ায় ইন শা আল্লাহ্‌, আল্লাহ্‌ তোমার আযাব কমিয়ে দিবেন, চাই কি মাফও করে দিতে পারেন। আমি আর কোনদিন হয়ত এখানে ফিরবনা, কিন্তু যেখানেই থাকিনা কেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমার জন্য দোয়া করব, আমার বোনের পক্ষ থেকে কথা দিলাম”

এরপর বসে পড়ল ও কবরের কাছে, দুহাত তুলল আল্লাহ্‌র দরবারে। প্রায় একঘণ্টা ধরে কেঁদেকেঁদে ফারহানের জন্য মোনাজাত করল ও। পাশে খালাও হাত তুলে মোনাজাতে শামিল হল ওর সাথে।

যে গল্পের নাম ছিলনাМесто, где живут истории. Откройте их для себя