পর্ব-১৮

733 23 0
                                    

জঙ্গল শেষ হয়নি, কিন্তু আর সামনে এগোনোর উপায় নেই। বিশাল একটা কাঁটাতারের বেড়া সিদ্রার সকল আশায় জল ঢেলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ওর, কিন্তু সেই শক্তিটুকুও অবশিষ্ট নেই। এখন কি করব আমি! কিচ্ছু বুঝতে পারছেনা সিদ্রা, কোন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেনা। ঠিক এইসময় কেউ একজন ওর কাঁধে হাত রাখলো, চমকে উঠে পেছনে তাকাল সিদ্রা।

খালা দাঁড়িয়ে আছে শক্তমুখে। ভয় পেয়ে গেল সিদ্রা, আবার বন্দী ঘরে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবতেই ইচ্ছাশক্তির শেষ বিন্দুটাও ফুরিয়ে গেল, মাথাটা ঘুরে উঠল ওর। তাড়াতাড়ি করে ধরে ফেলল খালা। আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকাল সিদ্রা। খালা ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরল। ভয় কেটে গিয়ে যেন খালার মধ্যেই আশ্রয় খুঁজে পেল সিদ্রা। কেঁদে উঠল ও, ব্যর্থতার গ্লানিগুলো বেরিয়ে এল চোখের জল হয়ে। সিদ্রার পিঠে হাত বুলাতে থাকল খালা, যেন অভয় দিচ্ছে ওকে।

কান্নার দমক কমলে চোখ মুছিয়ে ওকে শান্ত করল। তারপর একটা প্লাস্টিকের টিফিন বাটির মুখ খুলে ওর হাতে দিল খালা। ভেতরে বিস্কিট ছিল। কয়েকটা বিস্কিট আর পানি খেয়ে শান্ত হয়ে খালার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল সিদ্রা।

খালা ওকে ইশারায় বলতে শুরু করল, আমি বলেছিলাম না, এখান থেকে পালানো সম্ভব না। কয়েকদিন ধরে তোমার আচরণ দেখে আমি বুঝেছি যে তুমি পালাতে চাও। সেজন্যই তোমাকে বুঝানোর জন্য আজকে পালানোর সুযোগ করে দিয়েছি। হা হয়ে গেল সিদ্রা। আর তারপর তোমাকে অনুসরণ করেছি, বলে চলল খালা। তোমার নিজে থেকে থেমে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

"ক-ক্কিন্তু আপনাকে তো ঘরে আটকে রেখে এসেছিলাম, আপনি কিভাবে বের হলেন?"

খালা ইশারায় বুঝিয়ে দিল, উনি আগে থেকে বাইরেই ছিল, কাঁথার নিচে বালিশ আর কাপড় দিয়ে রেখেছিল ওকে ভুল বুঝানোর জন্য। তারপর ওকে জিজ্ঞেস করল খালা, এখন কি তুমি বুঝেছো যে আমি ঠিক বলেছি?

কোন উত্তর দিলনা সিদ্রা। একদিক দিয়ে হয়তো হয়নি, অন্যদিক দিয়ে হবে, মনে মনে ভাবল ও।

ঠিক আছে, তুমি এখনো বিশ্বাস করছোনাতো আমার কথা, এসো আমার সাথে। এই বলে খালা ওকে ধরে উঠাল। তারপর ওকে নিয়ে কাঁটাতারের বেড়া বরাবর হাঁটতে লাগল সামনের দিকে। একটু আরাম করার পর আর পেটে খাবার পড়ার কারণে এখন হাঁটতে আগের মত আর কষ্ট হচ্ছেনা সিদ্রার। কিন্তু বুঝতে পারছেনা খালা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওকে। কাঁটাতারের বেড়ার গায়ে কিছুক্ষণ পর পর সাইনবোর্ড ঝুলানো, "জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ, আদেশক্রমে বন বিভাগ"। বেশ খানিকক্ষণ হাঁটার পর জঙ্গল থেকে হঠাৎ বেরিয়ে এল ওরা।

যে গল্পের নাম ছিলনাWhere stories live. Discover now