পর্ব-২৯

757 32 1
                                    

সিদ্রার ঘুম ভাঙলো এক বুক তৃষ্ণা নিয়ে। বিছানা হাতড়ে খালি বোতল আবিষ্কার করে নিচে নামল পানি খাওয়ার জন্য। উপরে উঠতে গিয়ে একটা অদ্ভুত জিনিস খেয়াল করল ও। কোণার ঘর, যেটা ও ফারহানের বলে আন্দাজ করে, সেটার দরজাটা ভেজানো। ফাঁক দিয়ে নরম একটা আলোর রেখা চোখে পড়ছে। ভুতে বিশ্বাস না করলেও ভয় পেল সিদ্রা, কিন্তু কিসের আলো জানতেও ইচ্ছে করছে। শেষমেশ ভয় হার মানল কৌতূহলের কাছে। কিন্তু ঘরে উঁকি মেরে যা দেখলো, তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা ও।

পুরো ঘর মোমবাতি, বেলুনসহ আরো নানা জিনিস দিয়ে সাজানো। সামনের দেয়ালে বড় করে লেখা “HAPPY BIRTHDAY FARHAN”। সাথে সাথে মনে পড়ল সিদ্রার, আজ দুপুরে বুবুর মন অনেক খারাপ ছিল। কি হয়েছে জানতে চাইলে কেঁদে ফেলেছিল বুবু। বলেছিল, “কাল ফারহানের জন্মদিন। আমরা দুই ভাইবোন ওকে প্রতি বছর নানারকম সারপ্রাইজ দিই এই দিনে। কিন্তু ও নিজেই এক বিশাল সারপ্রাইজ দিয়ে আমাদের সব সারপ্রাইজের ঋণ শোধ করে গিয়েছে! ছেলেটা যে কেন এমন করলো!”

চুপ করে গিয়েছিলো সিদ্রা, অপরাধবোধ কুরে কুরে খাচ্ছিল ওকে। এসব কিছুর জন্য দায়ী ওর বোন, জেনে হোক আর না জেনেই হোক। ভাবলেই প্রচণ্ড কষ্ট হয় ওর।

চারিদিকে চোখ বুলিয়ে লোকটাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে ঘরের ভেতর ঢুকল সিদ্রা। ওর আর লোকটার ঘরের থেকে একটু আলাদা এ ঘরটা। বলতে গেলে প্রায় ফাঁকা একটা ঘর, আসবাবপত্র অনেক কম, একদম শুধু যা না থাকলেই নয়। বুঝতে পারলো, ফারহান ছেলেটা একটু অন্যরকম ছিল। শুধু একটা মিল আছে, দুই ভাইয়ের হাসিমুখের ওই বড় ছবিটা এঘরেও লাগানো। কিন্তু এসব আয়োজন যদি ওই লোকটা করে থাকে, তাহলে উনি কোথায়? ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে যিনি এতকিছু করতে পারেন, তার যে আজকের দিনে কতটা কষ্ট লাগতে পারে, কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছে সিদ্রা।

এবার ওর নজর পড়ল ঘরের টি টেবিলটার ওপর। সেখানে একটা কেক রাখা, উপরের মোমবাতিগুলো গলে গলে একদম নিভু নিভু। পাশে কিছু র‍্যাপ করা গিফটও চোখে পড়ছে। আরে, ওইতো টেবিলের ওপাশে মাথা রেখে উল্টোদিকে মুখ করে কার্পেটের উপর বসে আছে লোকটা। এসময় আমাকে দেখলে তো উনার কষ্ট আরও বেড়ে যাবে, চলে যাবো নাকি? কিন্তু কেন যেন মনটা সায় দিলনা ওর। মনে হল, আমার উপর রাগ দেখিয়েই নাহয় উনার মনের কষ্ট একটু কমুক!

যে গল্পের নাম ছিলনাWhere stories live. Discover now