#৪

395 24 1
                                    

#প্রাপ্তি

#৪

-তুমি কাঁদতেছ কেন?

রশ্নীর কথায় নওশাবা মুখ তুলে তাকায়,চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে,
-আরে নাহ,কাঁদি না,চোখে কি যেন পড়ল।যাই হোক,কবিরের পরিবার তোকে ফেরানোর চেষ্টা করেনি কখনও?
-করেছে না আবার!আমার মত কাজের মেয়ে কোথায় পাবে যে লাথি গুঁতো সহ্য করবে,আবার কাজও করে দিবে!অনেক বার তার মা আমাকে মাকে কল করেছে,তার বাবাও আমার বাবাকে কল করেছে,আমি পাত্তা দেইনি।কবির অবশ্য কখনো আসেনি।পরে জানতে পেরেছিলাম, তার সুন্দরী কলিগ তাকে বশ করেছে,এজন্যই আমার প্রতি তার দুর্ব্যবহার। আমার বিয়ের আগে থেকেই তাদের মাঝে অবৈধ সম্পর্ক,বিয়ের পরেও তা চলেছে।তবে ওদের বিয়ের কোন ইচ্ছা নেই,তাই লিভ টুগেদার করে।আমি ডিভোর্সের চার পাঁচ বছর পর ওদের দেখেছিলাম।মজার কথা শুনবে?আমি সেদিন ড্রাগসের উপর একটা রিপোর্টের জন্য কাজে নেমেছিলাম, সেখানেই ওদের দেখলাম।একটা বারে কবির বসে বসে মদ গিলছে আর ঐ মেয়েটা আরেক পুরুষের কোলে বসে আছে। হয়ত তোমার ঘেন্না লাগছে,কিন্তু আমার এত হাসি পাচ্ছিল! ব্যাপারটা হাসি আসার মতই!কবির ড্রাংক দৃষ্টিতে তার প্রেয়সীকে দেখছে,আর একের পর এক পেগ গিলছে।মেয়েটা এমন ভাবে ঐ লোকের সাথে লেপ্টে আছে যেন কবির আশেপাশে নেই।যে মানুষটা আমাকে দুই বছর অত্যাচার করল,আমার বাচ্চা মেরে ফেলল,আমাকে দিনের পর দিন মৃত মানুষের মত রাখল কারণ আমার সাথে একদিন শুলে দ্বিতীয় দিন আর শোয়া যায় না,সেই একই মানুষটা পছন্দের মেয়েকে তার চোখের সামনে আরেকজনের সাথে লটরপটর করতে দেখছে!হাহাহাহাহাহা! একেবারে জ্বলে পুড়ে শেষ! আমি জানো হি হি করে ওদের দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়েছিলাম!!!হাহাহা!!

নওশাবা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা এমনভাবে হাসছে যেন পাগল হয়ে গেছে।সত্যি,অতিরিক্ত কোন অনুভূতি একজন মানুষকে অস্বাভাবিক বানিয়ে দেয়।ওর হাসির শব্দে বাচ্চাটাও উঠে গেছে,সে শরীর মুচড়ে আড়মোড়া ভাঙছে।রশ্নী হাসি থামিয়ে চোখ বড় বড় করে ওকে দেখে,বাচ্চাটাও আড়মোড়া ভেঙে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।নওশাবা রশ্নীর কাঁধে আলতো করে হাত রাখে।
-মনে হচ্ছে বাচ্চাটাকে তোর খুব পছন্দ হয়েছে।তুই এক কাজ কর,ওকে রেখে দে।
-আপু...আমিও ভাবছি।কিন্তু আজ দুপুরের দিকে,বা সকালে যখন আমি ছিলাম না,কেউ একজন বাসার দরজা ভাঙার চেষ্টা করেছে।
-তারপর!
-আমি সাবধানে সব খুঁজে দরজায় এসে দরজার লকে ঘষাঘষির চিহ্ন ছাড়া কিছুই পাইনি।জানি না কি আছে ভাগ্যে,কিন্তু ওকে নিজের কাছে রাখার সাহস পাচ্ছি না।মেয়েটা এত নিষ্পাপ,অথচ ওর কত শত্রু! বাসায় নেয়ার পর যদি কোন ঝামেলা হয়?এত ছোট বাচ্চা নিয়ে কিভাবে কি করব?তাছাড়া আমার চাকরি করে বাচ্চা পালা তো অসম্ভব!
-তাহলে আপাতত এখানেই রাখ,কি আর করার।এর মাঝে কেউ যদি এডপশনের জন্য খুব জোড়াজুড়ি করে তখন?
-বলবা যে আরেকজন নিবে।আসলে আমি নিব নাকি জানি না... বিয়ে শাদী করলাম না,এখন এক বাচ্চা নিয়ে কিভাবে...
-ভাবিস না।ও থাকুক এখানে,অযত্ন তো আর হচ্ছে না।ওর জন্য যেটা ভালো হয় আমরা সেটাই করব।

 প্রাপ্তি (Completed ✅)Where stories live. Discover now