#৩

455 29 1
                                    

#প্রাপ্তি

#৩

মাশরুকের নাম্বারে রশ্নী দুবার ডায়াল করল,ওপাশে রিঙ হল কিন্তু কেউ রিসিভ করল না।ফোন রেখে দুশ্চিন্তা নিয়ে ওপাশে ফিরতেই সেটা বেজে উঠে,মাশরুক কল করেছে।রিসিভের পর রশ্নী ধীরে ধীরে সব খুলে বলে।

-তুমি নিশ্চিত যে এটা বাচ্চা সংক্রান্ত ব্যাপার? এরকম কত বাচ্চা আজকাল নর্দমা,ডাস্টবিন,হাসপাতালের কমোডে পড়ে যায় তার হিসেব আমরা জানি না।কেউ ধরা পড়ে,কেউ পড়ে না।আমার মনে হয় না এর সাথে ঐ বাচ্চাটার কোন সম্বন্ধ আছে।
-তাহলে?
-তুমি ক্রাইম রিপোর্টারদের একজন।কত ক্রিমিনালের মুখোশ তুমি টেনে ধরেছ।এদের মাঝে কেউই হয়ত এরকম কিছু করেছে।
-বুঝতে পারছি না।আজ সকাল থেকে আমার মাথা ঠিকভাবে কাজ করছে না।
-শোনো,তুমি বাসার ওয়াচম্যানকে জানিয়ে দাও।কে আসছে না আসছে,সে খেয়াল করতে বলো। আর তুমি পুলিশ রিপোর্ট কর,বাচ্চার ডিটেইলস জানতে হবে তো।
-কিন্তু আমি আরো আপনাকে কল দিলাম পুলিশ সিকিউরিটির জন্য।
-চাইলেও তো এটা করা যায় না রশ্নী,ইউ নো দেট।আমি অফিসার পাঠিয়ে দিচ্ছি,তুমি সব কিছু থানায় জানাও।

রশ্নী বিরক্ত হয়ে ফোন কাটে।এজন্যেই পুলিশ ভাল লাগে না।এখন পুলিশের সাথে সাথে মিডিয়ার মানুষজনও পিছে লাগবে,সব খবর আগুনের মত ছড়িয়ে পড়বে,রশ্নীর চেহারাও পরিচিত হয়ে যাবে।কে জানে,আসল কালপ্রিট তখন খবর পেয়ে লুকায় কিনা!কিন্তু মাশরুক ভাই জেনে গেছে যেহেতু,এখন অফিসিয়াল রিপোর্ট করা ছাড়া উপায় নেই।

রশ্নী এরপরের কয়েক ঘন্টা এ নিয়ে দৌড়োদৌড়ি করে কাটাল।পুলিশের সাথে সাথে তুহিন ওদের চ্যানেলের ইমাম ভাইকে পাঠিয়ে দেয়।রিপোর্ট হওয়ার পর অনেকেই বাচ্চাকে দেখতে ভীড় জমায়,কোন কোন দম্পতি ওকে দত্তক নেয়ার আগ্রহও প্রকাশ করে।রশ্নী যখন হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডের সামনে আসে,তখন রাত ১০টার মত বেজে গেছে।সারাদিন এদিক ওদিক দৌড়ে দৌড়ে একেবারে শক্তি শেষের দিকে।বাচ্চাটাকে যেখানে রাখা হয়েছে তার সামনে এসে দেখে সেখানে উৎসুক মানুষের ভীড়।অনেকেই ওকে বাহবা জানায়,অনেকে আবার বাচ্চাটাকে দত্তক দিতে বলে,দুজন দম্পতি নিজেরাও এগিয়ে আসে।তখন ওর বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে ওঠে,ওকে ওরা নিয়ে যাবে??ভীড় ঠেলে ওখানে গিয়ে বাচ্চাটার কাছে যায়।আশেপাশে দু একজন নার্স আছে, তবে কাঁচের দেয়ালের ওপাশে মোবাইল হাতে এতগুলো উৎসুক মানুষের উপস্থিতি ওর উপর কোন প্রভাবই ফেলছে না।চোখ বন্ধ করে একেবারে শান্তির ঘুম দিয়ে আছে,গাল গুলো তে গোলাপি আভা।ছোট্ট ছোট্ট হাত পা গুলো টাওয়েলের ভেতর। রশ্নী হ্যান্ডওয়াশ করে বাচ্চাটাকে কোলে নেয়,সাথে সাথে মনের ভেতর থাকা সারাদিনের যত ক্লান্তি,অবসন্নতা,সব কোথায় যেন গায়েব হয়ে যায়।নিষ্পাপ একটা প্রাণের সংস্পর্শে এসে রশ্নীর নিজেকেও অনেক নিষ্পাপ মনে হয়।বাচ্চাটাকে মুখের কাছে নিয়ে ওর সারামুখে টুকটুক করে চুমু খায়।রশ্নীর ছোঁয়ায় সে ছোট্ট চোখে জোড়া অনেক কষ্টে খুলে তাকায়।রশ্নী এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।ভীষণ আদর করতে ইচ্ছে করছে ছোট্ট এই মানুষটাকে।ওর চোখ গুলো,ছোট ছোট হাত গুলো, ছোট ছোট পা গুলো!এত সুন্দর একটা বাচ্চাকে কেউ রাস্তায় ফেলে দিতে পারে?

 প্রাপ্তি (Completed ✅)Onde histórias criam vida. Descubra agora