Chapter-5 | Part-3

40 1 0
                                    

রঞ্জনা বিকাশকে চায়, সর্বতোভাবে তার উন্নতি চায়। পথে যদি কোন বিঘ্ন উপস্থিত হয়, সেই বাধা অতিক্রম করতে রঞ্জনা আপোস করতেও দ্বিধা করবে না। চাকরিজীবনে কয়েকবছরের অভিজ্ঞতায় সে উপলব্ধি করেছে যে, লাল কার্পেটে মোড়া সোজা পথে সব চাহিদা পূরণ হয় না। সাফল্য সহজে কারও করায়ত্ত হয় না--তা তো সবার জানা, কাজেই তার ঠিকানা সন্ধান করতে গলিপথের সাহায্য বিশেষ প্রয়োজন। বিকাশের কথাগুলো রঞ্জনার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে--'নাথিং কামস ফ্রি ইন লাইফ।' মনে মনে বিকাশকে জিজ্ঞাসা করছে, 'আমি তোমাকে চাই, কিন্তু তুমি আমার কাছে কি চাও?' বিকাশ মুখে না বললেও রঞ্জনা মনে মনে জানে তার চাহিদার লম্বা লিস্ট। বাকি থাকল সুস্মিতাদি, সেখানে একটা ডিল করতে হবে। এমনি এমনি সুস্মিতাদি বিকাশকে নিজের হাতছাড়া করবে না, আর করবেই বা কেন? একের পর এক সংবাদ জুগিয়ে অফিসে পদমর্যাদার লড়াইয়ে বিকাশকে নির্ধারিত আসনের লক্ষ্যে এগিয়ে দিচ্ছে। তার যোগ্যতা নিয়ে কারও মনে সংশয়ের বিন্দুমাত্র প্রশ্ন যাতে না থাকে, তাই অতি সন্তর্পণে নিরন্তর সেই কাজ করে চলেছে। কখন কোন দিকে ঝুঁকতে হবে, কার ওপর আস্থা বাড়াতে হবে, আর কাকে ঝেড়ে ফেলতে হবে তা তাঁর নখদর্পণে।

পরের বছর নির্বাচন--এখনি তার প্রস্তুতিপর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। সুস্মিতা গোপনে একটা খবর রঞ্জনাকে আগাম জানিয়ে রেখেছেন এবং সেই বিষয়ে কারও সাথে আলোচনা করতে বারণ করেছেন। বিকাশকে সম্পাদকের পদে উন্নীত করা এখন তাঁর প্রধান লক্ষ্য। তাতে অনেকগুলো পাখি এক তিরে বধ করা যাবে। এক--প্রিয় মজুমদারকে নিজের গদি থেকে সরিয়ে বদলা নেওয়া যাবে, দুই--বিকাশকে ঐ চেয়ারে বসাতে পারলে নিজের এজেন্সির অনেক সুবিধা হবে, আর তিন নম্বরটা শুধুমাত্র রঞ্জনার জন্য। বিকাশের সাথে দীপার সম্পর্ক যদি তখনো টিকে থাকে, তবে তা চিরদিনের মতো শেষ হয়ে যাবে--কারণ বাবার মানহানির শোকে দিশাহারা দীপার অসহিষ্ণু মন তখন বিকাশকেই দোষী সাব্যস্ত করবে।

দীপা এমনিতেই বদরাগী, তার সাথে বাবার অপমান অব্যর্থভাবে অনুঘটকের কাজ করবে। সেই অখণ্ড অন্ধকারের গহ্বর থেকে দীপাকে দীপের আলোয় ফিরিয়ে আনা বিকাশের পক্ষে সহজ হবে না। সান্ত্বনা দিয়ে তাকে শান্ত করবার সঠিক ভাষা বিকাশের মস্তিষ্কের ভাণ্ডারে সেই মুহূর্তে মজুত না থাকাই স্বাভাবিক। বিকাশের অসহায়তা নিশ্চিতভাবে দীপার নিরাপত্তার অভাববোধ হাজারগুণ বাড়িয়ে দেবে। দু'জনেই তখন বিকারগ্রস্ত হয়ে দ্বিধায় দুলতে থাকবে। ডুবন্ত নৌকায় দিশাহীন যাত্রীর মনোবল ক্ষণস্থায়ী হতে বাধ্য। সেই সুযোগের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে রঞ্জনা ফাঁকা গোলে বল ঢুকিয়ে দেবে--এমনই পরিকল্পনা।

সাপলুডোWhere stories live. Discover now