Chapter-11 | Part-3

29 1 0
                                    

প্রিয়বাবু পদত্যাগপত্র জমা দেবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন শুনে সহকর্মীরা মর্মাহত। একজনের বক্তব্য, "তার মানে তুমি সুস্মিতার কাছে হার স্বীকার করে নিলে।"

প্রিয়বাবু মনে মনে আপোষ করে নিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু জনসমক্ষে তা স্বীকার করে নেবার মনোবল সেই মুহূর্তে তাঁর ছিল না। সন্ধ্যার শুরুতে মনে হয়েছিল, সবাই মিলে আন্দোলন গড়ে তুলবেন। মালিকপক্ষের অন্যায় অবিচার কিছুতেই সহ্য করবেন না, কিন্তু দু-চার পেগ হুইস্কি গলা দিয়ে নামতেই বুঝতে পারলেন--খবরের কাগজের পাতায় চটকদার ভাষার রকমারি কারসাজিতে যত সহজে মানুষকে আন্দোলনের নামে খেপিয়ে তোলা যায়, ব্যক্তিগত জীবনে তা হয় না। 'আন্দোলন' শব্দটাও লোভী, চতুর কিছু নেতার মুখে বারবার ব্যবহৃত হতে হতে তার ধার ও ভার, দু-ই হারিয়ে ফেলেছে। আন্দোলনের নামে আর মানুষ জড় করা যায় না--হয় লাঠির ভয় দেখিয়ে, নাহলে পয়সার বিনিময়ে কাজ হাসিল করতে হয়।

প্রিয়বাবু যে হেরে যাননি তা প্রতিপন্ন করার ভ্রান্ত চেষ্টা করে বললেন, "তা কেন? আমার আর এই ন্যক্কারজনক খেলা ভালো লাগছে না।"

অন্যজন মদের গ্লাস কাঁচের টেবিলে শব্দ করে নামিয়ে রেখে যোগ করলেন, "এটাই তো মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন, ভালো লাগছে না কেন? সুস্মিতা সেনের জন্য? একটা মেয়ের এত বড়ো ক্ষমতা যে তোমাকে তোমার চেয়ার থেকে টেনে নামিয়ে আনবে? আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না, ভয়ানক কাপুরুষতা হয়ে যাবে। ওর সাহস আরও বেড়ে যাবে।"

গম্ভীর হয়ে সবার জন্য আর এক রাউন্ড ঢেলে প্রিয়বাবু তাঁর অহংকার অক্ষত রাখার উপায় জানতে কৌশলী প্রশ্ন করলেন, "তবে করণীয় কি?"

"ওকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে হবে। কি ভাবে ও নিজেকে? আমরা কি জানি না, ওর আসল ব্যবসা কি?"

রাত প্রায় দশটার সময় সান্ধ্য অনুষ্ঠানের ইতি করে নেশাড়ু অতিথির দল গুটিগুটি বিদায় নিলেন। প্রিয়বাবু আবার বাড়িতে একা। রাগে, অপমানে সর্বাঙ্গ জ্বলছিল। বন্ধুত্বের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কয়েকটা শকুনি এসে মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে দিয়েছে। সাধারণত একা কখনো ড্রিঙ্ক করেন না, কিন্তু সেই মুহূর্তে একাকীত্ব কাটাতে একটা নিলেন। প্রিয়বাবু নেশাগ্রস্ত নয়, তবে দ্বিধাগ্রস্ত তাতে সন্দেহ নেই। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল--জীবনের জাব্দা খাতাটা সাথে নিয়ে বসেছেন, এবং কোথায় কি গলদ আছে নিজের চোখে দেখে নিতে চাইছেন। চাকরিজীবনের শুরুতে হিসাবপত্রের সাথে যে নিবিড় যোগসূত্র ছিল, তাকে মূলধন করে বর্তমান জীবনের জটিল হিসাব মেলাতে চাইছেন। হিসাব সবসময়ই জোড়াতালি দিয়ে মেলানো থাকে, কাজেই নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই কখনো খুঁটিয়ে দেখতে নেই। এ কথা প্রিয়বাবুর চেয়ে ভালো করে আর কে জানে, কিন্তু মাঝে মাঝে কি যে হয়...মানুষ ভুল করছে জেনেও ভুলের পিছনে তাড়া করে, নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করে।

সাপলুডোWhere stories live. Discover now