Chapter-11 | Part-7

29 1 0
                                    


বিকাশ ততক্ষণে ঘর ছেড়ে ফোন হাতে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। তাদের কথোপকথনের মাঝেই সুস্মিতা গায়ে চাদর জড়িয়ে সোফাতেই চোখ বন্ধ করে বসেছিলেন। বিকাশের প্রধান চিন্তা কথাগুলো সুস্মিতাদি শুনতে পাচ্ছে কি না? গভীর রাতে আস্তে কথা বললেও বহুদূর অবধি শোনা যায়, আর দীপা তো সপ্তমসুরে। দেখে মনে হচ্ছে সুস্মিতা ঘুমিয়ে পড়েছেন, সেটাই স্বাভাবিক, শরীর যে ভালো নেই তা সন্ধেবেলা ঘরে ঢুকেই লক্ষ্য করেছিল বিকাশ।

দীপার অহেতুক অভিযোগে বিরক্ত হয়ে বলল, "লজ্জা করবে কেন? দিদির সাথে কথা বলায় বাধা কোথায়?"

বিকাশের যুক্তিযুক্ত উত্তর, দীপার প্রশ্নের অযৌক্তিকতা শতগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনিতেই দীপা সহজে মেজাজ হারিয়ে ফেলে, যদিও ইদানীং নিজেকে অনেক সামলে নিয়েছে। দীর্ঘদিন ডাক্তারের পরামর্শে ছিল; এখনও নিয়মিত ওষুধ চলছে। হতাশাগ্রস্ত হয়ে বা বিকাশকে চিরতরে হারানোর ভয়ে উচ্চকণ্ঠে বলল, "ডোন্ট প্রিটেন্ড। আমি ভালো করে জানি তুমি ওখানে কি করছ?"

বিকাশ ধৈর্য হারিয়ে বলল, "সুস্মিতাদি সম্বন্ধে অসম্মানজনক কোন কথা আমি শুনতে চাই না। আমার কাছে উনি শ্রদ্ধেয়।"

দীপা ক্রোধের বশবর্তী হয়ে নিজের অজান্তেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "শ্রদ্ধেয়? শী ইজ অ্যা বীচ।"

বিকাশ স্থান-কাল-পাত্র ভুলে চিৎকার করে বলল, "স্টপ দিজ ননসেন্স, আদারওইজ ..."

দীপা বিকাশকে কথা শেষ না করতে দিয়ে তার চেয়েও উচ্চস্বরে উত্তর দিল, "বারবার বলব--শী ইজ অ্যা বীচ, বীচ, বীচ।"

মিতাদেবী বৈঠকখানাতেই এক কোণায় সোফায় বসে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন। মনে মনে ভেবেছিলেন, রাতটা এইভাবেই কাটিয়ে দেবেন। স্বামীর সাথে এক শয্যায় শোবার মানসিকতা আর নেই। বিশ্বাস, আস্থা, ভালোবাসা সব ভেঙেচুরে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে, পড়ে রয়েছে ধ্বংসাবশেষ। নিজের জীবনের সংক্ষিপ্তসার। কোনটা যে সার আর কোনটা অসার তা নিয়ে যদিও সংশয়ে মিতাদেবীর দার্শনিক মন। কিসে মানুষ সুখী হয়, শান্তি পায় তা এখনও অধরা। জীবন পরিক্রমায় সুখের ঝলক সবাই পায়, কিন্তু তাকে নিজের হেফাজতে রাখার ক্ষমতা স্বয়ং জজসাহেবেরও থাকে না।

সাপলুডোWhere stories live. Discover now