Chapter-8 | Part-4

31 1 0
                                    

মিতাদেবী সংসারের নিত্যদিনের মান-অভিমানের লুকোচুরি খেলা থেকে চিরতরে ছুটি চান। জীবনভর সুখ-দুঃখের পালা চলতে থাকে, এবং মানুষ তাতে অংশ নিয়ে নিজেকে ভুলে থাকে; কখনো বা ইচ্ছা করেই ভুলিয়ে রাখে। সংসারে মানুষের একমাত্র অবলম্বন হল বিশ্বাস যাকে ভিত্তি করে জীবনের চাকা প্রতিনিয়ত আবর্তিত হয়ে চলেছে। সেই বিশ্বাসের ভিত যখন নড়ে যায়, তার সাথে সাথে বহুদিনের সযত্নে লালিত সম্পর্কের শিকড়ও নড়ে যায়। জীবনের জমি আলগা হয়ে যায়, রোজকার তিক্ততায় উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়, তখন তাতে আর ফসল ফলে না। নিজেকে অহরহ অসহায় বলে বোধ হয়।

হতাশাগ্রস্ত বর্তমানের হাত থেকে রেহাই পেতে অতীতের সংগ্রহশালা হাতড়াতে লাগলেন, কিন্তু তাতে সান্ত্বনা পাবার পরিবর্তে আরও মনমরা হয়ে পড়লেন। নিজের কিছু কিছু সিদ্ধান্তে কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিলেন না। যৌবনের জৈবিক তাড়নার শিকার হয়ে প্রিয়বাবুর মতো নোংরা মানুষের সঙ্গ লাভের নেশায় নিজের বাবা-মাকে পর্যন্ত কষ্ট দিয়েছেন, বিশেষ করে বাবাকে। যতই পরিতাপ করুন তার থেকে বোধহয় মুক্তি নেই, ফেলে আসা দিনগুলো কেবলই পিছনে টানছে--বড়ো নগ্ন তার রূপ, ভয়ঙ্কর তার প্রতিশোধ স্পৃহা।

যাইহোক, নিজের অতীত নিয়ে আর অযথা ভাবতে আগ্রহী নন মিতাদেবী। জীবনের শুরু থেকেই বিধাতার হিসাবের খাতায় নির্ধারিত নিঃশ্বাসের যতগুলো এখনও তাঁর জীবনের পাতায় বাকী আছে, তা অতিবাহিত করতে পারলে তবেই ছুটি মিলবে।

তিনি ভয় পান মেয়ের কথা ভেবে--দীপা আজ যে ভালোবাসার জোয়ারে ভাসছে, হাওয়ার সাথে ভাব করে অনায়াসে উড়তে পারে বলে মনে করছে, লাল-নীল স্বপ্নগুলো সর্বদা তাকে ঘিরে আবর্তিত হবে মনে করে আশ্বস্ত বোধ করছে, তা অতর্কিতে কোন সতর্কবার্তা ছাড়াই একদিন কালের প্রবাহে হাওয়ায় মিশে যাবে না তো? বাস্তবকে জীবনের অঙ্গ হিসাবে মেনে নিতে পারবে তো? ভালোবাসা অর্থের বিনিময়ে কেনা যায় না, তার জন্য মনের অফুরন্ত ঐশ্বর্যের প্রয়োজন, তাতে ঘাটতি পড়বে না তো! ভালোবাসা বড্ড দামী, বড়ো জরুরী। নিজেকে সর্বস্বান্ত করতে পারলে তবেই তার হদিশ পাওয়া যায়, কিন্তু তার রক্ষণাবেক্ষণের পুঁজি তখন হাতে থাকে না, কাজেই আবার অনাথ হতে হয়।

সাপলুডোWhere stories live. Discover now