প্রিয়বাবু চেয়েছিলেন মেয়েকে স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে আসতে, কিন্তু দীপা রাজী হয়নি। দীপা মায়ের আশীর্বাদকে মূলধন করে নিজেকে নূতনভাবে আবিষ্কারের আনন্দে যাত্রা শুরু করল। পিঠে ব্যাগ ঝুলিয়ে, জিনস আর টী-শার্ট পরে বাড়ির নীচে থেকে ট্যাক্সিতে বসল। বারান্দায় মজুমদার দম্পতি মেয়ের ভবিষ্যৎ জীবনের মঙ্গল কামনায় সমর্পিত। ভবিষ্যৎ সবসময় অজানা, কাজেই মনের অন্তরালে নানা আশঙ্কার ঝড় মনকে উদ্বেল করতেই পারে, কিন্তু মিতাদেবী মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন দীপার যাত্রা--শুভযাত্রা।
মনের কোণায় দীপ হয়ে সুস্মিতা আলো দেখাচ্ছেন, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরে গিয়েছে মিতাদেবীর হৃদয়। সুস্মিতাকে নিয়ে বাড়িতে যতই অশান্তি হোক, মিতাদেবী বরাবর মনে মনে বিশ্বাস করতেন যে, সে অন্য থাকের মানুষ। প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও সুস্মিতাকে শ্রদ্ধা করতেন তার দৃঢ়চেতা, আপোষহীন মনোভাবের জন্য।
বিকাশ শিয়ালদা স্টেশনের উদ্দেশ্যে ট্যাক্সি ধরেছে, মনে মনে কলকাতাকে বিদায় জানাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে কিছুতেই ভুলতে পারছে না দুটো মুখ। সুস্মিতাদি আর দীপান্বিতা। দু'জনের মধ্যে আপাতভাবে কোন মিল থাকার কথা নয়, কিন্তু বিকাশ অনেক মিল খুঁজে পায়। দীপান্বিতা জেদি, আবেগপ্রবণ, এবং অসম্ভব সরল। সরলতাই তার ট্রামকার্ড। সুস্মিতাও কারও কাছে হার মানতে নারাজ, 'না' বলে কোন শব্দ তাঁর অভিধানে নেই, আবার ভালোবাসার কাঙাল। ভালোবেসে তাঁকে দিয়ে পৃথিবীর সব কাজ করানো সম্ভব, কিন্তু জবরদস্তি করলে ঠিক তার উলটো। দু'জনেই সুদর্শনা, বুদ্ধিমতী, উদার এবং নরম স্বভাবের।
স্টেশনে টিকিট কাউন্টারে লম্বা লাইন। বিকাশ খবর নিয়ে জানতে পারল যে বর্ধমানের পরবর্তী ট্রেন চল্লিশ মিনিট পর, কাজেই ব্যস্ততার কিছু নেই, হাতে যথেষ্ট সময় আছে। টিকিট কাউন্টারে পৌঁছে পাঁচশো টাকার নোট দিয়ে বর্ধমানের টিকিট চাইতেই ভিতর থেকে ভদ্রলোক ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, "খুচরো দিন।"
বিকাশ বিনয়ের সাথে বলল, "খুচরো তো নেই, দুটো দিয়ে দিন।"
জালের ওপার থেকে প্রশ্ন, "রিটার্ন জার্নি?"
![](https://img.wattpad.com/cover/224912256-288-k320513.jpg)
YOU ARE READING
সাপলুডো
General FictionAmbitions and dreams vis-a-vis reality and corporate politics.