মিতাদেবী চওড়া পাড়ের ঢাকাই শাড়ি পরে বাইরে আসতেই দু'জনে একসাথে বলল, "কি দারুণ লাগছে!" দীপা আবেগের আতিশয্যে মা-কে জড়িয়ে ধরল। মিতাদেবীও আদর করে মেয়েকে চুমু খেয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন। বিকাশ ব্যস্ত ছিল ছবি তুলতে। ঠিক বারোটায় সবাই একসাথে ওয়াইনে চুমুক দিতেই দীপার ফোন বেজে উঠল। বাবার কল দেখে লাফিয়ে উঠে বলল, "থ্যাঙ্ক ইউ বাবা, মিসিং ইউ বাবা..." আরও কত কি! শুরু হল ফোনের ঝড়। বন্ধুরা যে যেখানে ছিল সবাই সেই মুহূর্তকেই বেছে নিয়েছিল শুভেচ্ছা জানাবার শুভক্ষণ মনে করে। জন্মদিনের উৎসব চব্বিশঘণ্টা ব্যাপী, সারাদিনে যখন খুশী ভালবাসা জানানো যায়, কিন্তু বন্ধুদের মন মানে না।
রাত পৌনে একটায় বিকাশের গাড়িতে যাত্রা করলেন রাতের খাবার খেতে। মিতাদেবী জানতেন ডিনারের আগে অবশ্যই দীপা নাইট ক্লাবে যাবার আবদার করবে, তাই বারবার অনুরোধ করছিলেন তাঁকে রেহাই দিতে, কিন্তু তাতে কেউ সাড়া দেয়নি; অগত্যা যেতেই হল। দীপার মনের মতো ফটো শুট সেরে, নাচানাচি করে, ফাইভস্টার হোটেলে ডিনার খেয়ে যখন বাড়ি ফিরলেন, রাত তখন তিনটে। অতিরিক্ত এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে সোজা চলে গিয়েছিলেন নিজের ঘরে। পরদিন সকালে কলেজ আছে, সন্ধ্যায় দীপার বন্ধুদের পার্টী, সব ব্যবস্থা তো তাঁকেই করতে হবে।
মিতাদেবী চেঞ্জ করে সবে শুতে যাবেন, চোখ পড়ল ফোনের দিকে--কর্তার চার-পাঁচটা মিসড কল। সর্বনাশ! একবারের জন্যও শুনতে পাননি, শুনতে পাবেনই বা কি করে? ঐরকম ভয়ঙ্কর চিৎকার চেঁচামিচি, আর মিউজিকের দাপাদাপির ভিতর কখনো ফোনের ঘণ্টা শোনা সম্ভব? মনে মনে হিসাব করলেন, কলকাতায় তিনটে মানে সিঙ্গাপুরে সাড়ে বারোটা বাজে, কাজেই ফোন না করে মেসেজ করে রাখলেন। আলো নিভিয়ে শুতেই ফোন বেজে উঠল--যা ভেবেছিলেন তাই, প্রিয়বাবুর ফোন।
পাশের ঘর থেকে তখনো দীপা আর বিকাশের প্রেমালাপের মধুর কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে...কোন শব্দই স্পষ্ট নয়, তবে ভালোবাসায় মাখামাখি, তা উপলব্ধি করা যাচ্ছে।
মিতাদেবী আস্তে আস্তে উত্তর করলেন, "কেমন আছ?"
প্রিয়বাবু যে ভালো নেই, মন যে বিক্ষিপ্ত তা কণ্ঠস্বরেই স্পষ্ট, "আমি আর কেমন থাকব? কতবার ফোন করলাম একবার ধরলেও না?"
![](https://img.wattpad.com/cover/224912256-288-k320513.jpg)
BẠN ĐANG ĐỌC
সাপলুডো
Tiểu Thuyết ChungAmbitions and dreams vis-a-vis reality and corporate politics.