Chapter-4 | Part-2

37 1 0
                                    


কথায় কথায় মিতাদেবীর কলেজের কথা উঠল। ছাত্রছাত্রীদের সাথে কিরকম ব্যবহার করা উচিত সে বিষয়ে সুন্দর আলোচনা করলেন। প্রিয়দা বিকাশকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "তুমি কি দীপার গান শুনেছ?"

বিকাশ অবাক হয়ে বলল, "না, আমি তো জানিই না যে দীপান্বিতা গান গায়।" দীপার দিকে তাকিয়ে বিশেষভাবে অনুরোধ করল, "প্লিজ একটা গান শোনাও।"

বিকাশের প্রত্যাখ্যানের যন্ত্রণা দীপা তখনও মন থেকে একেবারে মুছে ফেলতে পারেনি, তাই সহজেই বলতে পারল, "আমার মুড নেই।" একটু থেমে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, "মা, তুমি গাও না।"

মিতাদেবীর জবাব "মা ভাঙা রেকর্ড, তাই না? বললেই বেজে উঠবে? তোমাদের সবার মুড থাকতে পারে আর আমার থাকতে পারে না।"

সবার অলক্ষ্যে দীপা চোখ বন্ধ করে ফেলেছে, বোঝা যাচ্ছে মনঃসংযোগ করছে। মিতাদেবী মুখে আঙুল দিয়ে সবাইকে চুপ করতে ইশারা করলেন। দীপাকে এই মুহূর্তে দেখলে মনে হচ্ছে গভীর ধ্যানে মগ্ন। বিকাশ মনে মনে নিজের ব্যবহারে ভীষণ অনুতপ্ত বোধ করছিল। পরপর চারটে রবীন্দ্রসংগীত শুনিয়েছিল দীপা। শেষ গান ছিল--'দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে।' দীপার দু-চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে লক্ষ্য করে বিকাশ অবাক। দীপান্বিতার চিন্তাশীল মনের গভীরতা তাকে মুগ্ধ করেছে। এই মেয়েই কিছুসময় আগে রান্নাঘরে তার মনোযোগ আদায়ের চেষ্টা করছিল ভেবে আশ্চর্যও লাগছে। মনে মনে ভাবছে—দীপান্বিতার ভাবের অন্ত নেই।

মা-মেয়ের কি সুন্দর বোঝাপড়া--গান শেষ করে দীপা হাত বাড়াল, এবং মিতাদেবী টিস্যু পেপার তুলে দিলেন মেয়ের হাতে। সবাই চুপ। দীপার গান প্রত্যেককে এত গভীরে নাড়া দিয়েছিল যে কোন শব্দ উচ্চারণ করে তারিফ করতে বাধোবাধো ঠেকছিল।

কলিংবেলের শব্দে উঠে পড়ল বিকাশ। রাতের খাবার চলে এসেছে। প্রিয়দা নিজের পানীয় শেষ করে বললেন, "দীপা ডিজার্ভ অ্যা ড্রিঙ্ক।"

বিকাশ প্রত্যেকের গ্লাসে তার পছন্দের পানীয় ঢেলে, প্রথমেই তুলে দিল দীপার হাতে। চোখাচোখি হতে দীপাই চোখ নামিয়ে নিলো। এইটুকু সময়ে সে যেন অনেক বদলে গিয়েছে। বিকাশকে জয় করবার গোপন পথের সন্ধান পেয়েছে। বিকাশের মনে দীপান্বিতার যে ছবি সবসময় জ্বলজ্বল করে, সেই রূপের ঝলক দেখে বিকাশের মন আনন্দের জোয়ারে ভাসছে। ভালোবাসার ভাষা নীরব, কিন্তু দোলা দেয় গভীরে। বাহ্যিক চিহ্নের প্রয়োজন পড়ে না, মন দেওয়া-নেওয়ার খেলা চলতেই থাকে।

সাপলুডোWhere stories live. Discover now