অনুগল্পঃ টুকরো জীবন দৃশ্য ২.৩

1.1K 41 5
                                    

নাফিজা দরজা খোলার আওয়াজ পেল । ইচ্ছে করেই উঠলো না ।

মনে মনে বলল যে ও উঠবে না ।

কেন উঠবে ?

জনাব যখন এতোই ব্যস্ত তখন করুক সব একা একা । তাকে কেন উঠতে হবে !

শোবার ঘরের দরজা খোলার আওয়াজেও উঠলো না । লাইটটা জ্বলে উঠলেও চোখটা বন্ধ করেই রইলো ।

নাফিজা খুব ভাল করেই জানে এখন আবিদ এখন কি করবে । বাধরুমে যাবে । তাও আবার লাইট টা অফ করে দিয়ে যাতে নাফিজার ঘুমের কোন সমস্যা না হয় । কারন সেও খুব ভাল করেই জানে যে আজকে সারা দিন নাফিজার খুব খাটা খাটনি গেছে । সে নিশ্চয়ই ক্লান্ত !

হলোও তাই । বাঢরুমে ঢোকার আগে ঘরের লাইট টা বন্ধ হয়ে গেল । নাফিজা নিরবে চুপচাপ শুয়ে রইলো ।

ও চাইছে আবিদের উপর রাগ করতে । ওকে বোঝাতে যে ও রেগে আছে । কিন্তু নাফিজা খুব ভাল করেই জানে যে এই রাগ করে লাভ নেই । আবিদ বুঝতেই পারবে না যে নাফিজা ওর উপর রাগ করে আছে । এমন মানুষের উপর রাগ করে লাভ কি ? আজকে হয়তো নাফিজা আবিদের উপর রাগ করতো না কিন্তু এই রাগ করার ক্ষেত্রটা আবিদ নিজেই তৈরি করে দিয়েছে । সে নিজে প্রথমে আশা দিয়ে আবার সে আশা ভেঙ্গে দিয়েছে ।

শুরু টা খুব স্বাভাবিক ভাবেই হয়েছিলো । বিয়ের কদিনের ভেতরেই নাফিজা ঠিক ঠিক বুঝতে পেরেছিলো যে ওর বিয়ে একটা রোবটের সাথে হয়েছে যে রোমান্টিসিজমের র ও বোঝে না । তার কাছে সারাদিন কাজ ছাড়া যেন আর কিছু নেই । ঠিক ওর বাবার মতই । সারা জীবন কাজ ছাড়া কিছুই তিনি বুঝেন নাই । আর ছেলে মেয়েদের রেখেছেন কঠিন শাসনে ।

তাই যখন নাফিজা নাচ শেখার কথা বলেছিলো তার বাবাকে ওর বাবা চরম ভাবে বিরক্ত হয়েছিলো । বলেছিলো এমন আনপ্রোডাক্টিভ কাজের পেছনে সময় নষ্ট করার কোন মানে নেই । তারপরও অবশ্য ওর নাচ শেখাটা বন্ধ হয় নি । সেটা সম্ভব হয়েছিলো ওর মায়ের জন্য । কিন্তু অনার্স থার্ড ইয়ারে থাকতে থাকতে যখন বিয়ের প্রস্তাব এল সেটা কিছুতেই এড়ানো গেল না । বিয়ে হয়েই গেল ।

নাফিজা তবুও সব কিছু ভাগ্যকে মেনেই নিয়েছিলো । সব কিছু চলছিলো আগের মতই । তবে বিয়ের পর একটা জিনিস লক্ষ্য করলো যে বাবার বাসা থেকেও স্বামীর বাসাতে ওর স্বাধীনতা অনেক গুনে বেড়ে গিয়েছে । চাইলেই ও সারাদিন বাইরে ঘুরে বেড়াতে পারে । ওর স্বামী আবিদ নির্ভেজাল টাইমের মানুষ । অফিস বাসা ছাড়া আর তেমন কিছুই করে না ! ওকে কোন কিছুতেই মানা করে না ।

ভালবাসার অনু-গল্প সমগ্রWhere stories live. Discover now