আমরা বন্ধুরা মিলে, ক্লাসের ফাকে ভুতের গল্প নিয়ে আসর বসাতাম। তখন ভুত এফএম এ-র কারণে এই সব বিষয় খুব জনপ্রিয় ছিল। এই রকম একটি দিনে, আমার এক বন্ধু আমাকে এ-ই গল্পটি বলেছিল। তবে একটি কথা বলে রাখা ভালো। আমাদের সবারই জানা অজানা কিছু গল্প আছে, যার সত্যতা বা অসত্যতা প্রমাণ করা বেশ মুশকিল। তবে কিছু গল্প এত মানুষের মুখে শোনা যায়, যে তার মধ্যে থাকা অসত্যের ভাবটাও যেন মলিন হয়ে যায়। এই রকম একটি গল্প শুনেছিলাম আমার এক স্কুলে। গল্পটি বহু বছরের পুরোনো তবে যেই লোমহর্ষক ভাবে এটি স্থাপন করা হয়েছে তা কখনও ভুলার মতো না।
গল্পটি আমাদের স্কুলের বাংলা মাধ্যমের একটি ছাত্রীকে নিয়ে। বেশ কয়েক বছর আগের গল্প, মেয়েটি তখন আমাদের স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়তো। এমনিতে সে ভালো ছাত্রী, কিন্তু সেই বছর অসুস্থতার কারণে সে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছিল না। সেই বছর বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল তার ভালো আসেনি। যার কারণে তার প্রাতিষ্ঠানিক গ্রেড খুব বাজে ভাবে কমে যায়। একই বছরের শেষে তার মেট্রিক পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল, যার কারণে, মেয়েটি খারাপ ফলাফলের কারণে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে। তার আত্মীয় স্বজনেরা তার এই খারাপ সময়ে তার পাশে থাকার বদলে তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে শুরু করে। বাজে ফলাফলের কারণে তাকে সেই বছর তাকে ড্রপ দিতে বাধ্য করা হয়। তার বন্ধুরা সবাই যখন মেট্রিক পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছিল, এই মেয়েটি তখন বাসায় কারাবন্দী। সব কিছুই যেন মেয়েটির বিপক্ষে যাচ্ছিল। এই খারাপ সময় তাকে শান্তনা দেওয়ার ও কেউ ছিল না। বাজে ফলাফল আসার কারণে তার একটা মুল্যবান বছর বাদ দিতে হয়। এই সব কিছু তার শারিরিক ও মানসিক অবস্থান আরো খারাপ প্রভাব ফেলতে শুরি করে। কারো সাহায্য না পেয়ে আর সবার কটুক্তি হজম করতে করতে, সে মানুষিক ভাবে ভেঙে পড়েছিল। তাই সে বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে যায় তার স্কুলে। এই মুহুর্তে তার অবস্থানে রেখে নিজেকে দেখা সম্ভব না, তবে বুঝতেই পারছেন, সে আর চাপ সামলাতে পারছিল না। সেই দিন ছিল বৃহস্পতিবার আর কয়েক ঘণ্টা আগেই স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়, কিন্তু ছুটির আগেই, মেয়েটি তার স্কুলের ভেতরে ঢুকে পড়ে। সে ভেতরেই লুকিয়ে বসে ছিল, এবং অপেক্ষা করছিল, কখন স্কুলটি খালি হবে। সবাই যখন চলে গেল, এবং স্কুলটি খালি হয়ে যায়, মেয়েটি ছাদে উঠে আসে। স্কুলের গার্ড সেইদিন ছাদে তালা লাগাতে ভুলে যায়, আর এই সুযোগে মেয়েটিও তার শেষ গন্তব্যের উদ্দেশে চলে যায়। রাত আনুমানিক ১০.০০টার দিকে মেয়েটি ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে।
মেয়েটির মৃত্যুর পর জানা যায় যে,তার বাড়িতেও নাকি তার এই খারাপ ফলাফল নিয়ে এলাহি কাণ্ড ঘটে। যে পারছিল তাকে শান্তনা দেওয়ার বদলে শুধু বকাবকি করছিল। মেয়েটি না ঘরে শান্তি পাচ্ছিল না বাহিরে, শেষমেশ তাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছিল। যেহেতু নিজ আত্মহত্যা তাই তদন্ত কমিটি ও গঠন করার প্রয়োজন হয়নি, আর যেমন তেমন ভাবে বিষয়টি দফারফা করা হয়। তদন্তে লেখা হল, মেয়েটি মানসিক শক্তি হারিয়ে, নিজের জীবন কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু এটা জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করেন নি, যে মেয়েটি এই কাজটি কেন করেছে। আত্নহত্যা প্রলোভন কারীও হত্যাকারীর সমান, কারণ তাদের কারণে একজন মানুষ বাধ্য হয় নিজের প্রাণ কেরে নিতে।
এই ঘটনার পর থেকেই স্কুলের অনেকই নাকি মধ্যরাতে একটি মেয়ের কন্ঠ শুনতে পায়। আবার কারো কারো মতে, তারা একটি মেয়েকে ছাদে বা ক্লাসের মধ্যে হেঁটে বেড়াতে দেখে। স্কুলের আয়া ভা বুয়াদের মতে, মেয়েটির আত্মা এখনও তার উত্তরের খোঁজে ওই স্কুলেই ঘোরাফেরা করছে। স্কুলের পাশে যাদের বাড়ি, তারাও নাকি প্রতি রাতে একটি মেয়েকে ক্লাসের মধ্যে বা স্কুলের প্রাঙ্গণে হেঁটে বেড়াতে দেখে। আবার কারো কারো মতে, মেয়েটি ছাদ থেকে লাফ দেয়। যদিও আমার নিজের কোন অবিজ্ঞতা হয়নি। তবে বলতে হবে, এত মানুষ একি জিনিস নিয়ে মিথ্যাচার ছড়াবে, তা মানা বেশ মুশকিল।
YOU ARE READING
Bhooter rajje ek din
HorrorStep in the world of ghosts and witches. Embark on an epic trip through the realms of ghost. ভুতের রাজ্য একদিন ঘুরে আসুন। জানুন আসল সব ভুতের গল্প। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। তবে হ্যা সাবধান একা রাত্রে কোথাও যাবেন না।