সুগন্ধি

1 0 0
                                    

জাহানারা  বেগমের বয়স হয়েছে, থাকেন কাদেরিয়া গ্রামে। একসময় তার স্বামির সাথে থাকতেন ঢাকা শহরে। কিন্তু তার স্বামীর ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসার কোন ফলাফল না পাওয়ায়,  শেষমেশ তার স্বামীর সাথে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন।এই গ্রামের বাড়িতে তার ছেলে মেয়ে ও স্বামীর সাথে তাদের সংসার চলছিল। কিন্তু জাহানারা বেগমের  স্বামীর মৃত্যুর পর সব যেন অগোছালো হয়ে গেল। তার দুই ছেলে আঁকবার, ও ইলিয়াস ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করতো আর মেয়ে তাসলিমা তার মায়ের সাথে গ্রামে থাকতো। দেখতে দেখতে তার স্বামী মারা যাওয়ার, আজ প্রায় ২০ বছর কেটে গেল। জাহানারা বেগমের দুই ছেলেই ইঞ্জিনিয়ার থাকে আমেরিকা আর যুক্তরাজ্যের মতো বড়-বড় সব দেশে। দুই তিন বছরে একবার, দেশে এসে দেখা করে যায়। তাই তাসলিমা ছিলেন জাহানারা বেগমের প্রিয় সন্তান । মা আর মেয়ে সারাদিন একসাথে সময় পার করতেন। কিন্তু বছর পাচেক আগে তাসলিমার বিয়ে ঠিক হয়, বিয়ের পর তাসলিমা চলে আসে ঢাকায়।

অবশ্য জাহানারা বেগমের টাকা পয়সার সমস্যা ছিল না, দুই ছেলে ও এক মেয়ে তার দেখা শোনার জন্য প্রতি মাসে টাকা পাঠাতেন, তাছাড়াও গ্রামে একটি মুদি দোকান ও ছিল তাদের। এই নিয়েই চলে যেত জাহানারা বেগমের দিন। বাড়িটাও ছিল বেশ বড়, প্রায় তিন একর জমির মাঝে বিশাল বাংলো কিন্তু মানুষ থাকেন শুধু দুইজন জাহানারা বেগম আর একজন বুয়া। এত কিছু থাকার পরেও, সারাদিন পার হত একাকীত্বেই।

জাহানারা বেগমের গাছের প্রতি ভালো শক ছিল, তাই একাকিত্তকে কাজে লাগিয়ে ছাদ বাগান করে তুলেছেন। তার বাগানে রয়েছে বেশ কিছু জাতের ফুল,বাতাবি লেবু আর কয়েকটি ওষধি গাছ । ছেলে মেয়েরা আসলে, তাদেরকে এই ছাদ বাগান ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে দেখাতেন। ছেলে মেয়েদের মাঝে, তাসলিমা সবচেয়ে আদরের। সে প্রায়ই ঢাকা থেকে চলে আসে, তার মা কে দেখার জন্য। এইতো গত মাসে জামাইকে সঙে করে মেয়ে তাসলিমা এসেছিল, তবে বেশি দিন থাকেনি।

জাহানারা বেগমের ফুলের গাছের প্রতি একটু নেশা কাজ করতো। দেশি বিদেশি নানান জাতের ফুলের সমাহার আছে তার বাগানে। কিছু -কিছু এমন ফুলও আছে যা প্রায় বিপন্ন প্রজাতির।লাল গোলাপ,জবা,জুই আরও কত কি।তবুও প্রতিদিন সকালে একবার হলেও বুয়াকে সঙ্গে নিয়ে কাছের নারসাড়িগুলতে ঘুরে আসেন, নতুন কোন ফুল ভালো লাগলে, ক্রয় করে নিয়ে আসতেন।

Bhooter rajje ek dinWhere stories live. Discover now