মিষ্টি খোর মামুন মিয়া

0 0 0
                                    

বহু কাল ধরে প্রচলিত পুরান ঢাকার কিছু মিষ্টি দোকান নিয়ে কিছু গল্প রয়েছে বা এক কথায় বলতে গেলে কিছু  রুপ কথার প্রচলন রয়েছে।এই সব রুপ কথায় কতটা সত্য রয়েছে তা না হয় অন্য কোনোদিন বিবেচনা করা হবে।এই রকম একটি রুপ কথা রয়েছে কাইট্টুলীর আর বংশালের কিছু মিষ্টি দোকান নিয়ে।

প্রচলিত আছে,ওখানকার মিষ্টি ব্যবসায়ীরা প্রতিরাত বাড়োটার মধ্যে তাদের সব যাবতীয় কাজ কর্ম সেরে ফেলে। এবং দোকান বন্ধ করার পর দোকানের মেঝেতে বা কিছু কিছু সময় রান্নাঘরে একটি পাত্রে কিছু অবশিষ্ট মিষ্টি সাজিয়ে রেখে যায়।গল্প অনুযায়ী জিনেরা নাকি মিষ্টি পছন্দ করে,তাই তাদের জন্য এই উপহার।গল্পের শুত্র কোথা থেকে সেটা খুঁজে বের করা সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না।তবে একটা লৌক কথার প্রচলন আছে যে আগে দেখা যেত মিষ্টি বানানোর পর প্রায়ই নাকি মিষ্টি ওজনে কম হতো বা কিছু মিষ্টি এমনিই গায়েব হয়ে যেত। কে নিয়েছে বা কীভাবে গায়েব হচ্ছে তা খুটিয়ে দেখা হলেও কোন সন্ধান মিলেনি। পড়ে বোঝা গেল, যে দোকান বন্ধ করার পর কে বা কারা যেন মাঝরাতে দোকানে আসে এবং মিষ্টি খেয়ে ফেলে। বোঝা গেল, এরা মানুষ নয়, তবে অন্য কিছু। এই কথা ভেবে তারা রাত্রে বাড়ি যাবার আগে সব মিষ্টি সড়িয়ে ফেলতো।কিন্তু এতে ঘটলো আরও বড় বিপদ,দেখা গেল দোকানের মালামাল,টাকা পয়সা হারিয়ে যেতে শুরু করেছে।রাত্রে সব গুছিয়ে রেখে দেখা যেত পরের দিন সকালে ভেতরের চেয়ার টেবিল এলোমেলো করে রাখা।মাঝে মাঝে দেখা যেত জানালার কাচ গুলা ভাঙা,যেন কেউ ইট মেরে ভেঙে দিয়ে গেছে,কিন্তু জানালার বাইরের সাটার ভেদ করে ইট মারা সম্ভব নয়।এক পর্যায় ওরা বুঝতে পারলো যে এঁদরকে রাগানো ঠিক হবে না।তাই তখন থেকে ওরা কিছু অবশিষ্ট মিষ্টি বাইরে রেখে দিয়ে আসে,যাতে অশুভ অতিথি যেন বিরক্তি না করে।

সামিম সাহেব ভাবলেন বিষয়টা নিজের চোখে দেখবেন। তাই তিনি কাইট্টুলির একটি মিষ্টির দোকানের কাছে বসে রইলেন। দোকান বন্ধ করে দেওয়া হল। আর শুরু হল অপেক্ষার খেলা। তখন পুরো রাস্তা জুড়ে শুধু নিরবতা। কেউ নেই, কোন শব্দ নেই, সামিম সাহেবের এখন বিরক্ত লাগছিল। এমন সময় হঠাৎ দূর থেকে কুকুর গুলো ডাকাডাকি শুরু করলো। কিন্তু এর পরেই আবার নিরবতা। এই সময়, সামিম সাহেবের মনেও এক প্রকার ভয়ের উপস্থিতি টের পাওয়ায় যাচ্ছিল। দুর থেকে একজন সাদা পাঞ্জাবী পরা লোক এসে দাঁড়ালো। এত লম্বা ব্যক্তি,  সামিম সাহেব এর আগে দেখেনি। লোকটি দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আবারও নিজের পথে হাঁটা দিল। সামিম সাহেব একটু অবাক হলেন। তিনি তার লুকানোর স্থান থেকে বেরিয়ে এলেন। এমন সময়, লক্ষ্য করলেন, যে ঠিক তার পেছন থেকে কে যেন বলছে। কি?  বিশ্বাস হল তো?

সামিম সাহেব পেছনে তাকালেন, দেখলেন দুর থেকে ওই সাদা পাঞ্জাবী পরা লোকটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে।এটা দেখে তিনি ভয় পেয়ে যান। এবং কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা তার বাড়ির উদ্দেশ্যে দৌড় দেন।


Bhooter rajje ek dinWhere stories live. Discover now