সেই বাড়িটি

0 0 0
                                    

আমি ও আমার স্বামী দুজনই ক্লাসমেট, সেই থেকে আমাদের পরিচয় এবং পড়ে বিয়ে হয়।আমাদের বিয়ের পর আমরা মিরপুরের একটি বড় বাড়িতে  চলে যাই। এটি একটি বড় বাড়ি ছিল, যেটি ১০ ​​একর জমির মাঝখানে অবস্থিত। আমার শ্বশুর ১৯৭৪ সালে এই বাড়িটি কিনে নেন, তার তৎকালীন  ফিরিয়ে আনি এবং আমরা না আসা পর্যন্ত এটি খালি ছিল। এটি এত বড় ছিল যে আমি প্রায়ই আমার বোনদের নিয়ে আসতাম কারণ এত বড় বাড়িতে আমার একা থাকতে ভয় করতো। বাড়িটি বড় হলেও কেন যেন একটি দমবন্ধকর অনুভূতি হত। দিনের বেলায়ও গা ছমছম করতো।

বাড়িতে ওঠার কয়েকদিন পর আমি অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করতে শুরু করি। প্রতিদিন মাগরিবের সময় নিয়মিত ভাবে ফিউজ বক্স নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। ইলেক্ট্রিশিয়ান এনে ঠিক করার পড়েও কোন কাজ হত না। আমরা ভেবেছিলাম যে সম্ভবত পুরানো সার্কিট বোর্ডটি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাই আমরা এটি পরিবর্তন করে নতুন সার্কিট বোর্ড আনলাম, কিন্তু কিছুই কাজ করছিল না। একদিন রাতে আমরা যখন ঘুমাচ্ছিলাম, তখন একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম, যেন মনে হচ্ছিল কেউ কাঁদছে, কিন্তু বাড়িতে আমি ও আমার স্বামী বাধে আর কেউ নেই। এই কান্নার আওয়াজ শুধু রাতেই নয় বরং দিনের আলোতেও আসতে শুরু করে। যখনই ঘুমাতে যেতাম তখনই এই আওয়াজগুলো শুনতে পেতাম কিন্তু কখনও খুব একটা পাত্তা দিতাম না।

আমি যখন আমার প্রথম সন্তানের সাথে গর্ভবতী ছিলাম, তখন একদিন আমি ছাঁদ থেকে কিছু জামাকাপড় আনতে গিয়েছিলাম এবং হঠাৎ আমার মনে হল যেন কেউ আমার পেটে খুব জোড়ে চাপ দিচ্ছে, যার ফলে আমার প্রসব বেদনা শুরু হয় এবং হাসপাতালে যাওয়ার পর জানতে পারলাম যে দুর্ভাগ্যবশত আমার গর্ভপাত হয়েগেছে। আমি বুঝতে পারলাম যে এই বাড়িতে নিশ্চই কোন অশুভ শক্তি আছে, যা আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।

তাই আমরা একজন ইমামকে বাড়িতে একটা মিলাদ পড়ানোর জন্য দাকলাম। সবাই চলে গেলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম এই ভবনে অলৌকিক কিছু আছে কি না, তিনি কিছু প্রার্থনা করলেন এবং বললেন যে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা প্রায়ই বাঙালিদের এখানে ধড়ে এনে নির্যাতন করত। এবং তারা নাকি এখানে শত শত মানুষকে হত্যাও করেছে। যার ফলে কিছু অমানবিক জিনিস এখানে আসতে শুরু করে। এই বিল্ডিংটি এত দীর্ঘ সময়ের জন্য পরিত্যক্ত থাকার পর থেকে তারা তাদের রাজত্ব শুরু করে।

আমি আমার স্বামীকে এই কথা জানালাম, কিন্তু সে আমার কথা বিশ্বাস করেনি। একদিন সে যখন ছাদে দাঁড়িয়ে ছিল তখন হঠাৎ করেই সে নিচে পড়ে যায়। ভাগ্যক্রমে সে সিঁড়িতে পড়েছিল, তাই বেশি ব্যথা পাইনি। যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে কি হয়েছে, সে বলল সে যখন দাঁড়িয়ে ছিল তখন তার মনে হলো কেউ যেন তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। আমি জানতাম যে এটি সেই অমানবিক জিনিস গুলোর কাজ যারা ওই বাড়িতে বাস করছিল। তাই আমরা অবিলম্বে বাড়িটি ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। পড়ে জানতে পারলাম আমাদের পরে যেই আরও দুই পরিবার ওই বাড়িতে উঠেছিল, কিন্তু কেউই থাকতে পারেনি। গুজব আছে আজও কেউ সেই বাড়িটিতে যেতে সাহস করে না।

Bhooter rajje ek dinKde žijí příběhy. Začni objevovat