রানির কুটির

0 0 0
                                    

কুমিল্লা শহরের ধর্ম সাগর দিঘির পাড় ঘেরে অচিরে দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল রাজবাড়ি যার নাম রানির কুটির।ত্রিপুরার রাজা ধারমানিকা ১৪৫৮ সালে এই দিঘির খনন করেন,পড়ে যা উনার নাম স্মরণে ধর্ম সাগর নামে আখ্যা পায়।এইখানে এসে ছুটি কাটানোর জন্যই রানির কুটির নির্মাণ করা হয়।তবে গল্পে আছে এটি তার স্ত্রীকে উপহার হিসেবে দাওয়ার জন্য নির্মাণ করে।বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর জাতীয় কবি কাজি নজরুল ইসলাম এইখানে এসে ছিলেন।বহু কবির রচনা,কবিতা ও গ্রন্থে এই কুটিরের কথা উল্লেখ করা আছে।এক অপুর্ব সুন্দর নিদর্শন যা আজব্দি তার বিশেষতার পরিচয় দেয়।শীতের সকালে দিঘির জলে অতিথি পাখির আনাগোনা যেন এর সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তুলছে। তবে দিনের বেলা যেই কুটির পর্যটকদের ভিড়ে পরিপূর্ণ থাকে সন্ধ্যা বেলা তা এক অন্য রকম রূপে সাজ্জিত হয়।পর্যটকেরা বা দারওয়ান কেউই রাত্রি বেলা এইখানে থাকতে চায়না।এই ফাঁকা কুটিরটি নিয়ে রয়েছে নানান গল্প।শুনেছি রাজা নিজেই মাত্র ১৪ বছর ছিলেন এই কুটিরে।

প্রায় ১০-১২ বছর আগে এক আত্মীয়ের সুবাদে  ওই কুটিরে স্বপরিবারে থাকার সুযোগ হয়েছিল।ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতে এমনিতে তিন চার ঘণ্টা লাগে,তবে সেই দিন জ‍্যেমের কারণে একটু বেশি সময় লেগেছিল।কুটিরে পৌঁছাতে- পৌঁছাতে রাত হয়ে গিয়েছিল। কুটিরের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই একটি বিশাল কক্ষ যা হয়ত এক কালে আলোচনার বা বৈঠকের জন্যে ব‍্যবহার হতো।যদিও গল্পে আছে এইখানে এক কালে নর্তকীরা এসে নিত্য করতেন।আজব বেপার ভেতরে ঢুকতেই সেইদিন এক অস্বস্তি বোধ করলাম। হাতের বাম পাশে ও দান পাশে রয়েছে সব কক্ষগুলো।বাম পাশের দুটি কক্ষ খুব কাছাকাছি অন্যটি টেবিলের ওই প্রান্ত,আর ডান পাশে আরও দুটি কক্ষ।টেবিলটি হচ্ছে আমার দেখা সবচেয়ে বড় টেবিল।প্রায় ২৫-৩০ ফিটের মতো একটি রুম জুড়ে বিস্ত্রিত।প্রথম কক্ষের পাশেই আরেকটি ছোট রুম যা দিয়ে দিঘি সংলগ্ন মাঠে যাওয়া যায়।কুটির দারওয়ান আমাদেরকে দিঘি দেখাতে নিয়ে গেলেন। দিঘির কাছে পৌঁছাতেই কেমন যেন এক গা ছমছম অনুভূতি।যেন এই বুঝি ঝাপ দিব।যাইহোক,দিঘি দেখার পর আমরা আমাদের রুমগুলো দেখতে গেলাম।রুম বড় কিন্তু একটা ছোট বিছানা।

রাত বাড়তে লাগলো,বিছানায় শুয়ে আছি।নতুন জায়গায় ঘুম আসছে না।খালি রুমে শুধু সিলিং ফ‍্যানের শব্দ মনে এক অদ্ভুত ভুতুড়ে অনুভূতি সৃষ্টি করছে।এমন সময় খেয়াল করলাম কেমন যেন অঅদ্ভুত শব্দ হচ্ছে।মন দিয়ে খেয়াল করলাম পায়েলের শব্দ। আমি ভাবলাম ভুল শুনছি হয়তো। তাই আর কাউকে জানাইনাই । কিছুক্ষণ পর শব্দটি বন্ধ হয়ে যায়। এবং আমরাও চোখ লেগে যায়। সকালে যখন ঘুম থেকে উঠলাম, জানতে পারলাম যে শুধু আমি নয়, আমার আম্মু, নানি, কাজিন সহ কম বেশি অনেকেই নাকি এই পায়েলের শব্দ শুনেছে।

আমরা যে দুই দিন সেখানে ছিলাম, আর কোন নতুন অনুভূতি হয়নি। তবে একটা জিনিস, আমার বেলায় আমি অনুভব করেছি, যেদিন আমরা ফিরে আসছিলাম। সবাই বাসে উঠে রেডি, কিন্তু আমি আমার এক খালাকে ডাকার জন্য দিঘির পারে গেলাম। আমার সঠিক ভাবে মনে নেই। কিন্তু যতটুকু মনে আছে। সেই দিঘির পারে, আমার খালার সাথে কথা বলছিলাম। এরই মাঝে পিছে থেকে আম্মু ডাক দিল। বলল সবাইত বাসে উঠেগেছে আমি দিঘির পারে কি করি। আমি জবাব দিলাম যে আম্মু আমি খালাকে ডাকতে আসছি। আম্মু বল তোর খালা আগেই বাসে বসে আছে, তুই কার সাথে কথা বলস। আশ্চর্য, আমি ঘুরে তাকাতেই দেখি, কেউ নেই। সন্ধ্যা নেমে আসছিল, আর দিঘির জল, সূর্যের আলয় আলোকিত হচ্ছিল। তাই আমি ফিরে যাচ্ছিলাম, আর ঠিক এই সময় আবারো দেখলাম, একটা ছায়াময় প্রতিমা যা দিঘির পারে বসে ছিল। কিন্তু আমি ঠিক ভাবে দেখার আগেই, আম্মু আমাকে নিয়ে গেল। আমি এই ব্যাপারে এই গল্পে লেখার আগে আর কাউকে বলিনি।

Bhooter rajje ek dinDonde viven las historias. Descúbrelo ahora