৩৫

645 33 9
                                    

"তোমার মোবাইল"

নিঝুমের গলা শুনে ঝট করে ঘুরে তাকালো অয়ন। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নিঝুমের বিষাদগ্রস্ত চোখ জোড়ার দিকে।

"তোমার অহনা ফোন করছিল।"

"তু... তুমি কি রিসিভ করেছিলে ফোন?"

অয়নের গলার স্বরে কী ছিল জানেনা নিঝুম কিন্তু মনে হলো এই মুহূর্তে ছাদ থেকে লাফ দিতে পারলে বুঝি কিছুটা শান্তি পেত ও। ছেলেটা ওকে কত নিচু লেভেলের মনে করে? কষ্টে চোখে পানি চলে এল নিঝুমের... অবশ্য আজকাল ও এটাই সবচেয়ে সহজে পারে।

নিঝুমের মুখভঙ্গি দেখেই কিনা জানেনা, অয়নের রাগে তেতে উঠা মুখটা হঠাৎ আবার আগের মতো নরম হয়ে এলো। একটু অপরাধ বোধ কী নাড়া দিয়ে গেল অয়নকে... জানে না নিঝুম। তবে ও আর দাঁড়াল না ওখানে, জোরের সাথে না বলেই দ্রুত ছাদ থেকে নেমে এল।

নিঝুমের যাওয়ার পথের দিকে অনেকটা সময় স্থবির হয়ে তাকিয়ে রইল অয়ন। মেয়েটার চোখের করুন অসহায় দৃষ্টিটা ওকে ক্রমাগত ভাঙছে ভিতরে ভিতরে, ও ঠিক বুঝতে পারছে নিঝুমের যন্ত্রনাটা... কাছের মানুষকে হারানোর যন্ত্রনা শতগুন হয়ে ফিরে আসছে... আর হারানোর এই যন্ত্রনাটা এক ভুক্তোভোগী ছাড়া আর কারো পক্ষে বোঝা সম্ভব না।

হাতে থাকা মোবাইলটা আবারো নিজের উপস্থিতি জানান দিল। অহনা আবারো ফোন দিচ্ছে। কী বলবে ও এখন? নিঝুমকে নিয়ে শ্রীমঙ্গল ওকে এখন যেতেই হবে, আম্মুর কথার নড়চড় হয় না আর আম্মুর কথার উপর ওদের দুই ভাই এর কথা বলার অভ্যাস খুব কম। যখনই বিশেষ কিছু নিয়ে কথা বলত দুইভাই এক সাথে বলত।

মনটা এতো খারাপ লাগছে যে অহনার ফোনটা তুলতেও ওর ইচ্ছে হচ্ছে না। অহনা যখনই ওর বিয়ের কথা শুনবে তখনই সিনক্রিয়েট করবে। অহনাকে খুব ভালভাবে চেনে ও। অহনা কলেজ লাইফে একবার সুইসাইড করতে চেয়েছিল... জানে অয়ন। মেয়েটা এক কথায় অসম্ভব জেদী। কোনটা রেখে কোনটা সামাল দিবে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না ও। আবার নিঝুমের এরকম মুখ দেখলে ঠিক মার ঝার খাবে ও। আর শ্রীমঙ্গল গেলে তো সোনায় সোহাগা। কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয়,সেখানে সন্ধ্যে হয়। কিন্তু ওর এখন সব পথ বন্ধ, যেতে ওকে এখন হবেই। বাঘ থাকলেও কী আর না থাকলেও বা কী।

লুকোচুরি Where stories live. Discover now