১ম পর্ব

1.5K 91 13
                                    

মায়ের কথার অবাধ্য নিঝুম একেবারেই নয়, কিন্তু পানি এখন ওর ধারনার চাইতেও অনেক উপর দিয়ে বইছে আর সেটা যথেষ্ট ঘোলাও বটে। চুপিসারে সটকে পড়তে পারলে ভালো হতো কিন্তু এখন আম্মু দেখে ফেলেছে, কাজেই সেটাও এখন আর সম্ভব না।

অনেক ভেবে অদীয়াকেই একটা ফোন দিলো নিঝুম। যে কোনভাবেই হোক ওকে আজ এই ভেজাল থেকে উদ্ধার পেতে হবে। মনে মনে ভীষন রাগ হচ্ছে নিঝুমের, ভাবে আজকের বিকেলটা যদি কোনরকমে বাইরে কাটানো যায় তাহলেই কেল্লাফতে। হাতি ঘোড়া চেপে বিয়ে করার শখ তোর উড়ে যাবে ব্যাটা।

"নিঝুম আজ ভার্সিটি না গেলে তোর হবে না?" রুমানা মেয়ের কাছে জানতে চাইলেন।

"না মা, আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ক্লাস আছে। না গেলে স্যার খুবই রাগ করবেন। গত ক্লাসে স্যার বার বার করে সবাইকে বলে দিয়েছিলেন আজকের ক্লাসে উপস্থিত থাকার জন্য।"

নিঝুম নিজের  মাথার সিঁথিটা আয়নায় দেখে আগের চেয়ে আরও একটু ডানে কাটে। ওর চুলগুলো মোটামুটি ভালই লম্বা। সমুদ্রে আছড়ে পড়া উত্তাল ঢেউয়ের মতোই সেগুলো ওর সরু কটিদেশ ছাড়িয়ে আরো নিচে নেমে গেছে।

মেয়ের দিকে তাকিয়ে মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রুমানা।

"কিন্তু তোর বড়ো ফুপু ফোন করে জানালো ছেলে পক্ষ নাকি আজই তোকে দেখতে আসবে।"

কথাটা বলে রুমানা অসহায়ের মতো মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন। মেয়ে তো নিজের মতো বাইরে যাবার জন্য রেডি, ওদিকে বড়ো ননদ যে এসেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করবে তার কি হবে?

আসলে নিঝুমের বড়ো ফুপু নিজে ছেলের বাবার সাথে বিশেষ ভাবে পরিচিত। উনি নিজে একসময় সড়ক ও জনপথ বিভাগে চাকরি করতেন। ছেলের বাবাও ওইখানে চাকরি করতেন। সেই ভাবেই বোধহয় পরিচয়। ছেলে তিনবছর হলো চাকরিতে ঢুকেছে। এখন ওনারা ছেলে বিয়ে দেবেন দেখে ভাল মেয়ে খুঁজছেন। নিঝুমের ফুপু শুনে আর দেরী করেননি, নিঝুমকে দেখার জন্য ওদের কে সোজা বাসায় আসতে বলে দিয়েছেন। মেজাজ রুমানারও একটু হচ্ছে এখন ননদের উপর। হুট করে এভাবে মেয়ে দেখানো যায়? কতোকিছু গোছানোর থাকে, অন্তত একদিন আগে তো বলা উচিত ছিল। কিন্তু এখন শাহেদকে কিছু বললে আবার উল্টো ঝাড়ি খাওয়া লাগবে। আর মেয়ে তো তার সেই রকম লক্ষ্মী... একটা কথাও শোনেনা।

লুকোচুরি Where stories live. Discover now