লেখকের রাত্রিযাপন

3 0 0
                                    


দরজা লাগিয়ে কাউচে বসলো সৌম্য। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, আর লুকিয়ে থাকতে হবেনা, বেরিয়ে এসো।

পেছন থেকে আওয়াজ পেলো চাপা হাসির, বুঝতে পারলো কেউ পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকছে।

বাহ, লেখক সাহেবের সেই একটা রাত্রিযাপন হলো।

মুখ দিয়ে হুম বললো সৌম্য। চোখ বুজে আছে সে, ক্লান্তি আছন্ন করে ফেলেছে তাকে। কথা বলতে একদম ইচ্ছা করছে না।

কী মনে হয় বলতো? ও কী সত্যিই? নাকি তোমার কল্পনা?

ও সত্যি। কল্পনা নয়। আমার কল্পনায় শুধু তোমার জায়গা দেবলীনা।

তা জানি। সেই ভালো।

কেন? হিংসা হচ্ছিলো নাকি তোমার?

কপট রাগ দেখালো দেবলীনা।

তা হলেই বা সমস্যাটা কোথায়? তুমি একটা অদ্ভুত প্রানী জানতো? মরার পরেও শান্তি দিলেনা। এতোগুলো বছর কেটে গেলো, তাও একা রয়ে গেলে। আর ছায়ার মতোন আমাকে টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছো এখনো। আবার আমাকেই জিজ্ঞাসা করছো হিংসার কথা!

চুপ করে থাকলো সৌম্য।

তবে বেশ মজা হলো কিন্তু। তুমি ওকে বললে সব পিছনে ফেলে আবার শুরু করার কথা, হা হা হা। আজকাল দেখি বেশ ভালোই এক্টিং শিখে ফেলেছো লেখক সাহেব।

সৌম্য তখনো চুপ। নুপুরের ঝনঝনের আওয়াজ তুলে নারীমূর্তি আবার ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।

সকাল বাড়ছে। মিস্টি রোদ আর হালকা বাতাস সৌম্যর চোখেমুখে লাগছে, চুল এলোমেলো করে দিতে চাইছে। খোল জানালা দিয়ে হাঁক আসছে বাইরের, বাচ্চাদের স্কুলে যাবার শব্দ, নিউজপেপার হকারের সাইকেলের ঘন্টি। মোড়ের চা ওয়ালা পানি ফুটানো শুরু করে দিয়েছে, দূর থেকে খুব সূক্ষ্ম গন্ধ ভেসে আসছে বাইরের জগতের।

নিয়মমাফিক এখন সৌম্যর জানালার খিড়কি তুলে দিয়ে রুমে ঢুকে চোখ বন্ধ করে থাকার কথা। রাইসুল কাকা একটু পর চলে আসবে হয়তো। কিন্তু সৌম্যর অন্য কিছু করতে ইচ্ছা হচ্ছেনা, ওর ইচ্ছা হচ্ছে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে, দুনিয়াটাকে দেখতে, বাইরে যেয়ে রোদ মেখে হাটতে।

একটা সূক্ষ্ম মাথাব্যাথা ধীরে ধীরে পারদ চড়ে বাড়ছে। সৌম্যর মনে হচ্ছে ওর গায়ে কোন শক্তি নেই। ও জানে দেবলীনা ওর জন্য ঘরে অপেক্ষা করছে।

আশ্চর্য! একটা অদ্ভুত রাত এমন করে সব হিসাব উল্টোপাল্টা করে দিতে চাইছে কেন?

বিখ্যাত লেখক সৌম্য সেনগুপ্ত তার কাউচে ভুরু কুঁচকে বসে রইলো।  

এক  রাতের গল্পWhere stories live. Discover now