কখন তোমার আসবে টেলিফোন

6 0 0
                                    


ক্রিং ক্রিং... ক্রিং ক্রিং...

বেশ কিছুক্ষণ ধরে টেলিফোনটা বাজলো, সৌম্য পাশের কাউচেই বসে ছিলো। বেশ কিছুক্ষণ ধরে শব্দটা শুনলো। শুণ্য ঘরে শব্দটা প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে ফিরে আসছে। ফোনটা ধরবে কিনা ভাবছে সৌম্য, এমন সময় কল কেটে গেলো। কিন্তু এক মিনিট পরেই আবার তিড়িং বিড়িং করে বাজতে শুরু করলো ফোনটা। এবার একটু থেমে পাশ থেকে ফোনটা তুলেই নিলো সৌম্য।

গমগমে গলায় বলে উঠলো, 'হ্যালো'

হ্যালো, হ্যালো? সৌম্য সেনগুপ্ত বলছেন? খুবই অস্থির গলায় একজন বলে উঠলো।

হ্যা বলছি।

যাক, অবশেষে ফোনটা ধরলেন। আমি আপনার অনেক বড় ভক্ত, ইনফ্যাক্ট সবচেয়ে বড়...

ঠাস করে টেলিফোনটা রেখে দিলো সৌম্য।

আবার কল আসলো।

শুনুন, প্লিজ কল কেটে দেবেন না। আমি খুব জরুরী প্রয়োজনে...

এবার রিসিভারটা তুলে সংযোগটা বিচ্ছিন্ন করে দিলো।

বিরক্ত বা রাগ হতে ইচ্ছা করছেনা এখন আর। খুব সুন্দর হিমেল হাওয়া দিচ্ছে। প্রায় দশদিন অসহ্য গরমের পর বৃষ্টি। সৌম্য বাসা থেকে খুব একটা বেরোয় না। তবু সেও এই ক্যাটক্যাটে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে গেছিলো।

লিভিং রুমের জানালাটা খোলা। বাইরে একদম শিলাবৃষ্টি হচ্ছে। আসুক, যতো খুশি বৃষ্টি আসুক। ও চোখ বুজে বাতাসকে নিজের গায়ের সাথে মেখে নিচ্ছে। বাতাসের শব্দ শুনছে। আজকে রিমা দিদিকে ইচ্ছা করেই তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়েছে এই জন্যে। একান্ত কিছু সময় কাটাতে চায় ও। লেখার চাপ, সম্পাদকদের তাড়া, কোনকিছুকেই গায়ে লাগাবে না আজকে। বৃষ্টির ছাটে ঢাউস লিভিং রুমের অনেকটাই ভিজে যাচ্ছে। ভিজুক, এসব কিছু কালকে দেখা যাবে।

এসময় সময় টেলিফোনের কলটার কথা ভাবতে শুরু করলো। প্রচণ্ড বৃষ্টির শব্দ আসছিলো বাইরের। একটা নারী কণ্ঠস্বর। তা এমন ফোনকল সে প্রায়ই পেতো একসময়। সে চেয়েছিলো তার জনপ্রিয়তাকে উপভোগ করতে, কিন্তু খেয়াল হতো কেমন একটা বিরক্তি আর অস্বস্তি সর্বদা মাথার ওপর ঘুরে বেড়ায়। সে কখনোই একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মাঝে জনপ্রিয় লেখক হতে চায়নি। সে চেয়েছে তার লেখা সকলে পড়ুক। সে জানে তার আকাঙ্খা সফলও হয়েছে। তবে মেয়েরাই তার জীবন নিয়ে বেশি আগ্রহী হয়তো। সৌম্য সবসময় তার ব্যক্তিগত জীবনকে প্রবল নিষ্ঠার সাথে রক্ষা করে গেছে। এরজন্য ফোনকল ঠেকাতে বহু আগেই নাম্বার চেঞ্জ করে ফেলেছে। কিছু মানুষ ব্যতীত কেউ এই নাম্বার জানেনা। তবু এই মেয়েটি কীভাবে তার নাম্বার খুঁজে পেলো?

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই দেখলো দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। বিরক্ত হলো সে। তার কেন জানি মনে হচ্ছে এই আগন্তুকই কোনভাবে তার দরজায় কড়া নাড়ছে। যাই হোক, সে খুলবে না।

কিন্তু শব্দ থামছে না। অবশেষে বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো সে। 

এক  রাতের গল্পWhere stories live. Discover now