সবুরে মেওয়া ফলে

4 0 0
                                    

না, না। আপনি হ্যালুসিনেট করছেন না একদমই। সব ঠিক আছে। আমি আপনার মনের কথা কীভাবে পড়ে ফেলছি? আরেহ, আমি তো আপনারই সৃষ্টি। মানে আপনার সত্তার অংশ, তো আমি কী টের পাবোনা বলুন। আচ্ছা আমি সব বলছি একে একে। তার আগে আপনাকে এককাপ চা বানিয়ে খাওয়াই? আপনি যেভাবে মুখ হালকা কুঁচকে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন তাতে বুঝে গেছি এই ব্ল্যাক কফিতে আপনার পোষায় না। আমার মনে হয় একটু খুঁজলে আমি চিনিও পেয়ে যাবো।

এই বলে শ্রাবন্তী খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।

অনেক দীর্ঘ রাত, বেশ সময় আছে আমার হাতে। চা টা বানিয়ে নিয়ে আসি, হ্যা? এরপর সব খুলে বলছি। একদম টেনশন করবেন না।

এই বলে শ্রাবন্তী সৌম্যকে কোন জবাব দেবার সুযোগ না দিয়েই রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সৌম্য পেছনে পেছনে যাবে নাকি ভাবতে লাগলো, পরে থেমে গেলো। নাহ, ঠাণ্ডা মাথায় একটু ভাবা প্রয়োজন। একটু বেশিই ড্রিংক করে ফেলেছে নাকি? এতো ছকে মাপা সবকিছু কীভাবে হচ্ছে? দেখে মনে হচ্ছে এই মিস শ্রাবন্তী আটঘাট বেধে এসেছে তার চেতনায়। হাতের মুঠোয় দুলোচ্ছে পুরো পরিস্থিতি। যেন সে সবকিছু আগে থেকে জানে, বোঝে, প্ল্যান করে এসেছে সব। এমন হলো কীভাবে? এইসব সাতপাঁচ ভাবতে থাকলো সে। এমন সময় গরম ধোঁয়া ওঠা চা সৌম্যর সামনে রাখলো শ্রাবন্তী।

দেখেছেন, আমার কথাই কিন্তু ঠিক। চিনি একটু ভেতরে ছিলো ক্যাবিনেটের, খুঁজতেই কেমন পেয়ে গেলাম। আপনি খুঁজে না পেয়ে ব্ল্যাক কফি বানিয়ে এনেছেন তাও ভাগ্য ভালো, এর বদলে লবণ দিয়ে চা বানিয়ে যে কী কেলেংকারি হতো!

এই বলে হা হা করে জোরে হেসে উঠলো শ্রাবন্তী। সৌম্যর একটু গা ছমছম করতে লাগলো। সে নিজে থ্রিলার গল্প লিখে অভ্যস্ত হলেও এমন কিছু তার নিজের সাথে কখনো হয়নি। সে অতঃপর ঠান্ডা গলায় বললো।

এবার বলুন কী বলতে চান?

একটু হেসে উঠলো শ্রাবন্তী।

বাহ, আপনার তো ভালোই কমপোজড। এদিকে আমি তো ভাবলাম আমার এহেন এন্ট্রি দিয়ে আপনাকে বেশ হকচকিয়ে দেবো। সত্যি বলতে হবে, আই এম ইমপ্রেসড। আপনাকে যেমন ভেবেছিলাম আপনি তার চেয়েও ঢের ঠান্ডা মাথার মানুষ, আর বেশ হ্যাণ্ডসাম ও।

আচ্ছা, আচ্ছা। আর বিরক্ত করবো না, সত্যি। বলেই দেই। আমি আপনার সঙ্গে থাকতে এসেছি।

থাকতে এসেছি মানে?

থাকতে এসেছি মানে এখন থেকে আমি আপনার সঙ্গে থাকবো। সবসময়। দেখুন আমি আপনাকে একদম বিরক্ত করবো না। নিজের মতোন থাকবো। তাছাড়া আপনার সব প্রয়োজনের জন্যেও নিশ্চয় একজন মানুষের দরকার। তাই আমি চলে এসেছি।

এবার ভাবলো সৌম্য। মেয়েটা কী অপ্রকৃতস্থ।

না, আমি পাগল নই। কখনো ছিলাম ও না। আমি আপনার চেয়েও ঠান্ডা মাথার মানুষ। আচ্ছা আপনি ভাবছেন কী করে আপনার মনের সব কথা আগে আগে বলে দিচ্ছি তাইতো? আপনাকে তো ফোনেই বললাম, আপনি আপনার সবচেয়ে বড় ভক্ত। আর হ্যা, আমি আপনার সবচেয়ে বড় সমালোচক ও। আপনার প্রতিটা গল্প, উপন্যাস আমি ক'বার করে পড়েছি তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আমি আপনার ভক্ত হলেও যদিও সমালোচনা করতে চাই তবে এক জীবন আরামসে কাটিয়ে দেয়া যাবে শুধু সেই গল্প বলে।

এবার অধৈর্য হয়ে উঠলো সৌম্য।

আচ্ছা আপনি কী ইয়ার্কি করছেন আমার সাথে? এই ঝড় বৃষ্টির রাতে আপনি একা একজন মানুষ অসহায় হয়ে ঘুরছেন ভেবে আমি দরজা খুলে দিলাম, আর আপনি কি না এখন আমাকে এভাবে বিরক্ত করছেন। দেখুন, এসব আমার একদম পছন্দ না। ভালোয়, ভালোয় বলছি বের হয়ে যান। অনেক ভালো ব্যবহার করেছি, আপ্যায়ন করেছি কিন্তু আর না।

হ্যা একা একটা মেয়ে দরজায় কড়া নাড়লো আর অমনি আপনি দরজা খুলে দিলেন? আপনি কী আসলেই বোকা, নাকি ন্যাকা? বুঝতে পারেন না কিছু। এরজন্যই আপনার এই অবস্থা। আচ্ছা ঠিক আছে বাবা, চলে যাবো আমি। থাকতে না দিলে আর কী করার আছে। আপনি এর আগে উত্তেজিত না হয়ে একটু বসুন। আমি যদি আমার আসার কারণটা না বলেই বেরিয়ে যাই এখন হুট করে, যেই অস্বস্তিটা আপনার মাথায় ঘুরে বেড়াবে আজীবন, সেটাকে সহজে দূর করতে পারবেন? আমরা সবাই আমাদের জীবনে আমাদের একশনগুলোর, সব রিজনগুলোর ক্ল্যারিটি খুঁজি। আর সেটাই আমি দিচ্ছি আপনাকে। ইউ জাস্ট নিড টু ওয়েট অ্যা লিটল বিট। সবুরে মেওয়া ফলে জানেন তোহ? 

এক  রাতের গল্পDove le storie prendono vita. Scoprilo ora