অনধিকার চর্চা

4 0 0
                                    

এই বলে মেয়েটা নিজেই বসে পড়লো কাউচে। প্রথমে ঠোট কামড়ে ধরলো। একটু পর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না শুরু করলো। সৌম্য খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। এতোটা রুঢ় আচরণ করা তার হয়তো উচিত হয়নি।

ইয়ে, শুনুন। আই অ্যাম সরি। আমার এভাবে বলে উচিত হয়নি।

না, না ইটস ওকে। মুখ তুলে বললো শ্রাবন্তী। আমার আসলে এমন হুট করে আপনার জীবনে ঢুকে অনধিকার চর্চা করা ঠিক হয়নি, কিন্তু জানেন, আমি সত্যিই অনেক নিরুপায় হয়ে আপনার কাছে এসেছি।

একটু থেমে আবার বললো সৌম্য।

আচ্ছা আপনি একটু শান্ত হয়ে বসুন। আমি আপনার সব কথা শুনছি। এই বলে উঠে একগ্লাস পানি নিয়ে আসলো শ্রাবন্তীর জন্য।

এই নিন। পানি খান একটু।

চুমুক দিয়ে পানি খেলো শ্রাবন্তী। সৌম্য বুঝতে পারছে না কী হচ্ছে। মেয়েটা মায়াবী সন্দেহ নেই। ভূতের ভয়ের চেয়ে বড় ভয় মানুষের, এমন মানুষদের যারা হিসেবের বাইরে চলতে অভ্যস্ত। এমন মানুষ নিয়ে অনেক লিখলেও সামনাসামনি এমন কাউকে দেখবে, হ্যাণ্ডেল করতে হবে ভাবেনি। তাই মানসিক প্রস্তুতিও নেই। এইসব সাতপাঁচ ভাবছে এমন সময় বলা শুরু করলো মেয়েটা।

দেখুন আমাকে দেখেই বুঝতে পারছেন আমি আপনার টিপিকাল ক্রেজি টিনেজার ফ্যানদের মতোন নই। যথেষ্ট বয়স হয়েছে আমার। এবং আমি অসামান্য কেউও নেই; খুব সাধারণ। তারচেয়েও সাধারণ আমার ঘর, সংসার, সব কিছু। বুঝলেন? কিন্তু আমার একটা সমস্যা ছিলো ছোটবেলা থেকেই। আমি খুব হঠকারী প্রকৃতির মানুষ। অনেকটা উড়নচন্ডী স্বভাবেরও। এইজন্য জীবনে কতো হবি ট্রাই করলাম, কতোকিছু করতে চাইলাম, কিন্তু দিনশেষে কিছুই করে ওঠা হলোনা।

সময়ের সাথে সাথে বয়েস বাড়লো। ওই সবার যা হয়, খুচরো খাচরি প্রেমও করলাম কিছু। এরপর আমার দেখা হলো আদি'র সাথে।

আদি মানে আদিত্য বর্মা। আমার স্বামী। আমরা বেশ সুখী দম্পতি। সবাই বাহবা দেয়। একদম পারফেক্ট কাপল। কিন্তু এই পারফেক্ট নামের নির্দিষ্ট মাপের খাঁচাটার মধ্যে বেসামাল জীবন ভরতে যেয়ে কখন যে এটাকে হারিয়েই ফেলছিলাম সেটা বুঝতে বহু দেরি হয়ে গেছিল। টের পাচ্ছিলাম, আকুপাকু করছিলাম। সাফোকেটেড আমি একটু নিঃশ্বাস নিতে চাইছিলাম। কিন্তু হচ্ছিলো না জানেন? যতো সময় যেতে লাগলো, ততোই যেন হারিয়ে ফেললাম নিজেকে। এদিকে বাইরে থেকে সবাই বলছে বাহ, সব তো ঠিকই চলছে। কিন্তু আমি তো জানি, কিছুই তো ঠিক চলছিলোনা আমার ভেতরে। আমি সাজানো গুছানো একটা সংসারে পুতুলের মতোন বসে আছি যার নিজের কোন সত্ত্বা নেই। কী ভয়ংকর ব্যাপারটা একবার ভাবো তো? আমার মনের যে অন্তর্দ্বন্দ আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো, আমি সেটা কাউকে বলতেও পারছিলাম না।

সৌম্য টের পেলো, এরই মাঝে ওকে তুমি তুমি করে বলতে শুরু করেছে শ্রাবন্তী। তাও ওকে থামালো না। গল্পটা ম্যাড়ম্যাড়ে, কিন্তু মুখোমুখি শোনার এক্সপেরিয়েন্সটা তো নতুন।

হা হা। আমি জানি, সবাই বলবে ওই এক কথা, সুখে থাকলে ভূতে কিলায়। জানো, আমি না বহুবার খোঁজার চেষ্টা করেছি নিজেকে। সবকিছুকে। এরপর আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম আমি আসলেই সুখী নয় একদমই।

আর ঠিক এমন সময় আমার হাতে তোমার একটা বই আসলো। আলসেমি ভরে বইটা দেখলাম, এরপর পড়তেও শুরু করলাম। তুমি এখন হয়তো ভাববে তোমাকে বস্তাপঁচা পুরোনো কমপ্লিমেন্ট এ ভরিয়ে দেবো আমি। না, তোমার লেখা পড়ে আমার জীবন পালটে গেছে, তুমি নোবেল প্রাইজ পাওয়ার যোগ্য এসব আমি বলবো না। হ্যা, তুমি খারাপ লেখো না। ভালোই লেখো। কিন্তু তোমার লেখা দেখে আমার কী মনে হয়েছিলো জানো? মনে হয়েছিলো তুমি খুব ইন্টারেস্টিং মানুষ। 

এক  রাতের গল্পOnde histórias criam vida. Descubra agora